Advertisement
১৭ জানুয়ারি ২০২৫

যুবতীকে ধর্ষণ-খুনে দোষী সাব্যস্ত পড়শি

সোমবার হিন্দমোটরের বাসিন্দা বাচ্চু ঘোষ এবং রথীন পাল নামে ওই সিপিএম নেতাকে দোষী সাব্যস্ত করেন শ্রীরামপুরের প্রথম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারক কল্লোল চট্টোপাধ্যায়।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৪ নভেম্বর ২০১৭ ০১:২২
Share: Save:

বছর তিনেক আগে হিন্দমোটরের এক যুবতীকে ধর্ষণ করে খুন এবং প্রমাণ লোপের দায়ে দোষী সাব্যস্ত হল তাঁর পড়শি যুবক। প্রমাণ লোপ এবং মেয়েটির বাড়ির লোকজনকে ভয় দেখানোর দায়ে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন উত্তরপাড়ার এক প্রাক্তন সিপিএম কাউন্সিলর।

সোমবার হিন্দমোটরের বাসিন্দা বাচ্চু ঘোষ এবং রথীন পাল নামে ওই সিপিএম নেতাকে দোষী সাব্যস্ত করেন শ্রীরামপুরের প্রথম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারক কল্লোল চট্টোপাধ্যায়। আজ, মঙ্গলবার বিচারক সাজা ঘোষণা করবেন। নিহতের মা বাচ্চুর চরম শাস্তির দাবি করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘মেয়েকে ফিরে পাব না। কিন্তু আমাদের একমাত্র সন্তানকে বাচ্চু যে কষ্ট দিয়েছে, তাতে চরম শাস্তি হলেই উপযুক্ত সাজা হবে।’’

পুলিশ সূত্রের খবর, বছর ছাব্বিশের উচ্চশিক্ষিত ওই যুবতী মায়ের সঙ্গে হিন্দমোটরের রাধাগোবিন্দনগরে একটি আবাসনে থাকতেন। সল্টলেকের সেক্টর ফাইভে চাকরি করতেন। ২০১৪ সালের ৪ জুলাই দুপুরে তিনি মায়ের সঙ্গে আবাসনের নীচে সাইবার কাফেতে গিয়েছিলেন। মা জল খাওয়ার জন্য ফ্ল্যাটে ওঠেন। কিছুক্ষণ পরে ফিরে কাফেতে ফিরে মেয়েকে আর দেখতে পাননি। আধঘণ্টা খোঁজাখুঁজির পরে আবাসনের পিছনে মেয়েকে পড়ে থাকতে দেখেন তিনি। যুবতী কথা বলার অবস্থায় ছিলেন না। মুখ দিয়ে গ্যাঁজলা বেরোচ্ছিল। শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ছ্যাঁচড়ানো, আঁচড়ানোর দাগ ছিল। যৌনাঙ্গেও আঘাতের চিহ্ন ছিল। স্থানীয় নার্সিংহোমে ভর্তি করানো হলে ঘণ্টাখানেকের মধ্যে যুবতী মারা যান।

১৬ জুলাই যুবতীর মা উত্তরপাড়া থানায় এফআইআর করেন। পুলিশকে তিনি জানান, বাচ্চু মেয়েকে উত্ত্যক্ত করত। ঘটনার সময় বাচ্চু সেখানেই ছিল। বাচ্চু দাবি করে, মেয়ে ছাদ থেকে পড়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা গিয়েছেন। পরে রথীন বাচ্চুর সঙ্গে নার্সিংহোমে আসেন। রথীনের হুমকিতে প্রথমে তিনি থানায় অভিযোগ জানাতে পারেননি বলে নিহতের মা দাবি করেন। তদন্তে নেমে অসমের ডিব্রুগড় থেকে বাচ্চুকে গ্রেফতার করে পুলিশ। সেখানে তার আদি বাড়ি। সেখানেই সে গা ঢাকা দিয়েছিল। গ্রেফতার হন রথীনও। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন মামলার তদন্তকারী অফিসার উৎপল সাহা। ধৃতদের জামিন মেলেনি। বাচ্চুর বাড়ি থেকে নিহতের কর্মস্থলের পরিচয়পত্র উদ্ধার হয়।

পুলিশ জানায়, ঘটনার সময় বাচ্চু বাড়িতে একাই ছিল। সেই সুযোগে সে ওই যুবতীকে ঘরে নিয়ে গিয়ে ওই কাণ্ড ঘটায়। এর পরে ঘটনাটিকে আত্মহত্যা বলে সাজানোর চেষ্টা করে। সে জন্য নিহতের চটি এবং ওড়না আবাসনের ছাদে রেখে আসে, যাতে মনে হয় ওই যুবতী আবাসনের ছাদ থেকে ঝাঁপ দিয়েছেন। মামলার সরকারি আইনজীবী জয়দীপ মুখোপাধ্যায় জানান, শ্রীরামপুর ওয়ালশ হাসপাতালে ময়নাতদন্তের রিপোর্টে যুবতীকে ধর্ষণ এবং খুনের প্রমাণ মেলে। নার্সিংহোমের ইনজুরি রিপোর্ট, ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পরীক্ষা করে ক‌লকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের এক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকও একই মতামত দেন। নিহতের ওড়নায় লেগে থাকা বীর্যের সঙ্গে বাচ্চুর রক্তের নমুনার মিল পাওয়া যায়। তিনি বলেন, ‘‘‘‘বিষয়টি নিয়ে যাতে থানা-পুলিশ না হয়, রথীনবাবু সেই চেষ্টা করেন। গোটা ঘটনা আদালতে প্রমাণিত হয়ে গিয়েছে।’’

প্রত্যক্ষদর্শী-সহ মোট ২৩ জন আদালতে সাক্ষ্য দেন। প্রত্যক্ষদর্শী আদালতে জানান, মেয়েটিকে হেঁচড়ে আবাসনের দিকে নিয়ে যাচ্ছিল বাচ্চু। টিআই প্যারেডে বাচ্চুকে শনাক্তও করেন তিনি।

অন্য বিষয়গুলি:

Neighbour Rape Murder Arrest
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy