Advertisement
E-Paper

জৌলুসহীন বিশ্বকর্মা

এক সময়ে বিশ্বকর্মা দিয়েই শিল্পাঞ্চলে শারদোৎসবের সূচনা হতো। বড় বড় কারখানা আলো ঝলমল করত। সাধারণ দর্শনার্থীরাও পুজো দেখতে আসতেন। পাত পেড়ে খাওয়ার আয়োজন হতো নানা কল-কারখানায়। সেই ছবিটাই এখন খুঁজে পাওয়া ভার। অর্থাভাবে সংসার চালাতেই নাভিশ্বাস উঠছে শ্রমিকদের।

গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০২:০২
বিষাদ: বিশ্বকর্মা পুজোর দিনেও অন্ধকারে হিন্দমোটর। ছবি: দীপঙ্কর দে

বিষাদ: বিশ্বকর্মা পুজোর দিনেও অন্ধকারে হিন্দমোটর। ছবি: দীপঙ্কর দে

পেটকাটি-চাঁদিয়াল আকাশে উড়েছে ঠিকই। কিন্তু শ্রমিক মহল্লায় সেই আনন্দের ঢে়উ লাগল না এ বারও।

গত কয়েক বছরের মতো এ বারও হুগলি শিল্পাঞ্চলে বিশ্বকর্মা পুজোর রং ফিকে। হিন্দমোটর-ডানলপ বন্ধ। চটকলগুলি ধুঁকছে। বকেয়া পাচ্ছেন না বহু শ্রমিক। তার উপরে এ বার জিএসটি-র ধাক্কা লেগেছে এ জেলার তাঁতশিল্পেও। এই আবহে শিল্পাঞ্চলের অনেক জায়গাতেই কোনও মতে পুজো সারলেন উদ্যোক্তারা।

এক সময়ে বিশ্বকর্মা দিয়েই শিল্পাঞ্চলে শারদোৎসবের সূচনা হতো। বড় বড় কারখানা আলো ঝলমল করত। সাধারণ দর্শনার্থীরাও পুজো দেখতে আসতেন। পাত পেড়ে খাওয়ার আয়োজন হতো নানা কল-কারখানায়। সেই ছবিটাই এখন খুঁজে পাওয়া ভার। অর্থাভাবে সংসার চালাতেই নাভিশ্বাস উঠছে শ্রমিকদের।

২০১৪ সালে বন্ধ হয়ে গিয়েছে উত্তরপাড়ার হিন্দুস্থান মোটরস কারখানার ঝাঁপ। সি কে বিড়লা গোষ্ঠী পরিচালিত রাজ্যের একমাত্র মোটরগাড়ি তৈরির ওই কারখানায় এক সময়ে ২৪ হাজার শ্রমিক কাজ করতেন। সেই কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরে কর্তৃপক্ষের দুয়ারে ধর্না-আন্দোলনও এখন ফিকে। বকেয়া পাননি অনেক শ্রমিক। অনেকে টোটো-অটো চালিয়ে বা অল্প বেতনে কোনও গাড়ি চালিয়ে দিন গুজরান করছেন। তাঁদেরও কাছেও ওই কারখানার বিশ্বকর্মা পুজো এখন অতীত। তাঁদেরই একজন ভদ্রকালীর গণেশ দাস। তিনি বলেন, “সংসার, মেয়ের স্কুল, সবটাই আমার রোজগার থেকে কোনও মতে চালাচ্ছি। স্ত্রী ছোট একটা মাস-মাইনের কাজ করেন। তাই কিছুটা সুরাহা। বিশ্বকর্মা পুজোয় আর নতুন করে আনন্দ পাই না।’’

সেই নয়ের দশক থেকেই উৎপাদন বন্ধ জেলার অপর প্রান্তে, সাহাগঞ্জের ডানলপ কারখানার। শ’য়ে শ’য়ে অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিক বকেয়া পাননি। হন্যে হয়ে তাঁরা ঘুরছেন। অনেকে কঠিন অসুখে পড়েও টিকিৎসা করাতে পারছেন না। কেউ বা আত্মঘাতী হয়েছেন।

একই রকম হতাশার ছবি জেলার চটকলগুলিতেও। এক সময় বাঁশবেড়িয়া থেকে রিষড়া পর্যন্ত গঙ্গার পাড় বরাবর ১৪টি জুটমিল রমরমিয়ে চলত। এখন বেহাল দশা। তার উপর মিল কর্তৃপক্ষের নানা ‘ফতোয়া’য় তাঁরা জেরবার হচ্ছেন বলে শ্রমিকদের অভিযোগ।

পাওনা আদায়ে দীর্ঘদিন ধরেই শ্রমিকদের আইনি সহায়তা দিচ্ছেন চন্দননগরের আইনি সহায়তা কেন্দ্রের কর্তা বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “মিল কর্তৃপক্ষ স্থায়ী তো বটেই, অস্থায়ী ঠিকা শ্রমিকদেরও বিভিন্ন নামে চিহ্নিত করেছে। তাঁদের মর্জিমাফিক কিছু হলেই ‘গেটবাহার’ পর্যন্ত চালু করেছে। সমকাজে সমবেতনের সুপ্রিম কোর্টের বিধিও মিল-মালিকেরা মানেন না। তাই বিশ্বকর্মা পুজো দিয়ে যে শারদোৎসবের বাদ্যি বাজত, তা এখানে এখন মলিন।” আরামবাগ মহকুমায় বড় শিল্প গড়ে ওঠেনি ঠিকই। তবে ৮৮টি চালকল এবং ৩৪টি হিমধর রয়েছে। নানা কারণে সেখানেও বিশ্বকর্মা পুজোর জৌলুস কমেছে। বিশ্বকর্মা পুজোর চেনা ছবিটা অনেকদিন হারিয়ে গিয়েছে হুগলি থেকে। (সহ প্রতিবেদন: পীযূষ নন্দী)

Dunlo Hindmotor Dunlop Factory চুঁচুড়া হিন্দমোটর
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy