মাস পাঁচেকের আগের ঘটনা। সেই ঘটনার আতঙ্ক এখনও রয়েছে আরামবাগবাসীর মধ্যে।
তার পরেও কি শিক্ষা নিয়েছে আরামবাগ হাসপাতল কর্তৃপক্ষ? মুর্শিদাবাদে আগ্নিকাণ্ডের পরে ফের এই হাসপাতাল ঘুরে দেখা গেল, ছেঁড়া-কাটা তার এবং নিম্নমানের সরঞ্জাম দিয়ে বিদ্যুতের করা হয়েছে। হাসপাতালের মূল ফটক তথা জরুরি বিভাগ সংলগ্ন করিডোর বরাবর দেখা যাচ্ছে কোনওরকম ভাবে জড়িয়ে ঝোলানো আছে তার। অপারেশন থিয়েটারের প্রবেশ মুখ থেকে শুরু করে প্রায় সমস্ত ওয়ার্ডেই ওই ভাবেই তারের সংযোগ হয়েছে। হাসপাতাল কর্মীদের একাংশের অভিযোগ, যথাযথ ওয়ারিং-সহ বিদ্যুৎ ব্যবহারের নিরাপত্তার বিষয়গুলি নিয়ে বিদ্যৎবণ্টন কোম্পানি যেমন তদারকি করে না, তেমনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও উদাসীন।
অথচ গত ৪ এপ্রিল আরামবাগ মহকুমা হাসপাতালের ওয়ার্ড মাস্টারের ঘরের পাশেই বৈদ্যুতিক মিটার ঘরে আগুন লেগেছিল। পাশেই মজুত ছিল অক্সিজেন সিলিন্ডার। স্বাভাবিক ভাবে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছিল গোটা হাসপাতালে। সে যাত্রায় অবশ্য দমকল বাহিনীর তৎপরতায় বড় বিপদ থেকে রক্ষা পেয়েছিল এই মহকুমা হাসপাতাল। মিনিট কুড়ির মধ্যেই আগুন নিয়ন্ত্রণে এনেছিলেন দমকল কর্মীরা। শর্ট সার্কিট থেকে লেগেছে বলে দমকল বাহিনী জানিয়েছিল। সেই ঘটনার পর শুধু ত্রুটিযুক্ত মিটারগুলি সংস্কার হয়। আর অক্সিজেন সিলিন্ডার মজুত রাখার জায়গাটি পরিবর্তন করা হয়। কিন্তু হাসপাতালের কর্মী ও রোগীর পরিজনেরা জানাচ্ছেন, সার্বিকভাবে বিপদের মুখেই রয়ে গিয়েছে মহকুমা হাসপাতাল। তাঁদের কথার সঙ্গে মিলও পাওয়া গিয়েছে হাসপাতাল ঘুরে।
হাসপাতালের নিজস্ব অগ্নি সুরক্ষার ব্যবস্থা বলতে প্রতি ওয়ার্ড-সহ বিভিন্ন জায়গায় ৪২টি অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র ঝুলছে। সেগুলির মেয়াদ ঠিক রয়েছে কি না দমকল দফতর ৬ মাস অন্তর দেখেও যাচ্ছে। কিন্তু তাতেও বিপদের আশঙ্ক থেকেই যাচ্ছে। কারণ, ওই যন্ত্রগুলি কী ভাবে ব্যবহার করতে হয়, তার প্রশিক্ষণ কারও নেই। এ ছাড়া, তিনতলায় শীততাপ নিয়ন্ত্রিত এইসিসিইউ এবং এইচডিইউ-র একটি মাত্র দরজা। দমকল বাহিনীর আরামবাগের ওসি সুজিত মোহান্তি বলেন, ‘‘মহকুমা হাসপাতালের মূল সমস্যা ওয়ার্ডগুলির ভিতরে আগুন লাগলে তা নেভাবার জন্য জলের ব্যবস্থা নেই। আমরা সুপারিশ করেছি প্রতিটি ওয়ার্ডে সেই হোস পাইপ সংযোগের ব্যবস্থা রাখার। এছাড়াও শীততাপ নিয়ন্ত্রিত দু’টি ইউনিটে বিকল্প দরজার ব্যবস্থা করতে।’’
২০১১ সালে আমরি কাণ্ডের পর আরামবাগ মহকুমা জুড়েও অগ্নি-নির্বাপণ ব্যবস্থা খতিয়ে দেখা নিয়ে মাসখানেক মাত্র তৎপরতা দেখা গিয়েছিল। সে সময় হাসপাতাল কর্মীদের শেখানো হয়, কী ভাবে অগ্নি নির্বাপক যন্ত্রগুলি ব্যবহার করতে হয়। কোন আগুন নেভাতে কী উপাদান ব্যবহার করতে হবে সে সম্পর্কেও হাতেকলমে দেখানো হয়। কিন্তু সে সব প্রশিক্ষণের কিছু মনে রাখতে পারেননি কর্মীরা।
নিরাপত্তায় ত্রুটি যে রয়েছে, সরাসরি না হলেও ঘুরিয়ে স্বীকার করে নিয়েছেন হাসপাতালের ভারপ্রপ্ত সুপার সুব্রত ঘোষ। তিনি বলেন, ‘‘মহকুমা হাসপাতালে অগ্নি সুরক্ষা ব্যবস্থা ঢেলে সাজার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। বিদ্যুৎ সংযোগ সংক্রান্ত ত্রুটি-বিচ্যুতি খতিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেক নিতে বলা হবে। দমকল বাহিনীর সুপারিশগুলি কার্যকর করা হবে। আগুন নেভানোর প্রাথমিক প্রশিক্ষণ হিসেবে সিলিন্ডারগুলির ব্যবহারের প্রক্রিয়া এবং কোন আগুন নেভাতে কী উপাদান ব্যবহার করতে হবে সে সম্পর্কেও প্রশিক্ষণের জন্য দমকল বাহিনীর সাহায্য নেওয়া হবে।’’