Advertisement
E-Paper

ঝাঁপ দিয়ে মৃত্যু ঝাঁপান উৎসবে, রুজু খুনের মামলা

চৈত্র সংক্রান্তিতে ঝাঁপান উৎসবে উঁচু পাটাতন থেকে লাফিয়ে এক পুণ্যার্থীর মৃত্যুতে উদ্যোক্তাদের বিরুদ্ধে অনিচ্ছাকৃত মৃত্যু ঘটানোর মামলা রুজু করল পুলিশ। সেই সঙ্গে অসামরিক প্রতিরক্ষা দফতরের প্রতিনিধির উপস্থিতি, অ্যাম্বুল্যান্স এবং চিকিৎসার যথাযথ ব্যবস্থা রাখা না হলে এ ধরনের অনুষ্ঠানের অনুমতি না দিতেও অনুরোধ জানাল ব্লক প্রশাসনের কাছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৬ এপ্রিল ২০১৫ ০২:১৭

চৈত্র সংক্রান্তিতে ঝাঁপান উৎসবে উঁচু পাটাতন থেকে লাফিয়ে এক পুণ্যার্থীর মৃত্যুতে উদ্যোক্তাদের বিরুদ্ধে অনিচ্ছাকৃত মৃত্যু ঘটানোর মামলা রুজু করল পুলিশ। সেই সঙ্গে অসামরিক প্রতিরক্ষা দফতরের প্রতিনিধির উপস্থিতি, অ্যাম্বুল্যান্স এবং চিকিৎসার যথাযথ ব্যবস্থা রাখা না হলে এ ধরনের অনুষ্ঠানের অনুমতি না দিতেও অনুরোধ জানাল ব্লক প্রশাসনের কাছে।

হাওড়ার শ্যামপুরের রতনপুরে রত্নমালা মন্দির প্রাঙ্গণে মঙ্গলবার রাতে বসেছিল ঝাঁপানের আসর। সেখানে বাঁশ বেঁধে তৈরি করা হয়েছিল প্রায় ৪৮ ফুট উঁচু পাটাতন। নীচে খড়বোঝাই বস্তার উপরে রাখা ছিল বিশেষ ধরনের বঁটি (এমন ভাবে তৈরি যাতে সামান্য নড়াচড়া হলেই ফলা খুলে যায়, যিনি ঝাঁপাচ্ছেন তাঁর চোট না লাগে)। খড়ের বস্তাটি টান টান করে ধরে রেখেছিলেন জনা ছ’য়েক যুবক।

ঝাঁপ দেওয়ার জন্য ছ’জনকে বেছেছিল উৎসব কমিটি। দু’নম্বরে ঝাঁপানোর কথা ছিল লাগোয়া গ্রাম ঘনশ্যামপুরের বাসিন্দা, কৃষিজীবী কমল দলুইয়ের (৫০)। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, কমলবাবু এ ধরনের ঝাঁপ দেওয়ায় অভিজ্ঞ। অন্তত ২০ বছর ধরে তিনি ঝাঁপান উৎসবে যোগ দেন। পুলিশ সূত্রের খবর, ঝাঁপ দিয়ে খড় বোঝাই বস্তার উপরেই পড়েন ওই প্রৌঢ়। কিন্তু সে সময় নীচের কয়েকজনের হাত থেকে বস্তার একাংশ ফস্কে যায়। ফলে, গুরুতর চোট পান কমলবাবু। সেই অবস্থায় পটলডাঙা ব্লক প্রাথমিক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।

কমলবাবুর ছেলে পলাশ দলুই বুধবার সকালে শ্যামপুর থানায় উৎসব কমিটির বিরুদ্ধে কোনও সুরক্ষার বন্দোবস্ত ছাড়াই এ ধরনের উৎসবের আয়োজন করার অভিযোগ দায়ের করেন। দাবি করেন, উদোক্তাদের গাফিলতিতেই মৃত্যু হয়েছে তাঁর বাবার। এ দিন রতনপুর গ্রামে গিয়ে উৎসব কমিটির কারও সন্ধান মেলেনি। গ্রাম কার্যত সুনসান।

পরে টেলিফোনে যোগাযোগ করা হলে উৎসব কমিটির পক্ষে ধনঞ্জয় পণ্ডিত দাবি করেন, ‘‘আগে আরও উঁচু থেকে পুণ্যার্থীরা ঝাঁপ দিতেন। বিপদের সম্ভাবনা মাথায় রেখে আমরা পাটাতনের উচ্চতা কমিয়ে এনেছি। ফি বছর এই উৎসব হচ্ছে। কোনও দিন এমন ঘটেনি।’’ তাঁর সংযোজন: ‘‘দুর্ঘটনার পরে আমাদের লোকজনই কমলবাবুকে হাসপাতালে নিয়ে যান।’’

তবে পলাশ দলুই বলছেন, ‘‘নীচে থাকা লোকেদের হাত থেকে বস্তাটা ছুটে যাওয়াতেই বাবার বুকে গুরুতর চোট লাগে। কোনও ডাক্তার হাজির না থাকায় চিকিৎসা করা যায়নি। হাসপাতালে নিয়ে যেতে যেতে অনেক দেরি হয়ে যায়!’’

পুলিশও বলছে, এ রকম অনুষ্ঠান করতে গেলে যে ধরনের কারিগরি জ্ঞান দরকার, তা অসামরিক প্রতিরক্ষা দফতরের লোকজনের রয়েছে। পাটাতন কত উঁচু হলে খড়ের বস্তা কতটা পুরু হতে হবে— তাঁরাই সেটা বলতে পারেন। প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য ডাক্তার এবং অ্যাম্বুল্যান্স রাখাটাও বাধ্যতামূলক হওয়া উচিত।

জেলায় খোঁজ নিয়ে দেখা গিয়েছে, দু’-একটি জায়গা বাদে ঝাঁপান উৎসবের উদ্যোক্তারা চিকিৎসার ব্যবস্থা বা অ্যাম্বুল্যান্স রাখেন না। বাগনানের বাইনানে গাজন উৎসব কমিটির পক্ষে রবীন্দ্রনাথ কাঁড়ার যেমন বললেন, ‘‘পরের বছর থেকে ভাবছি, সার্কাসে ট্রাপিজের খেলা দেখানোর সময় যেমন জাল ব্যবহার করা হয়, সে রকম জাল নীচে পেতে ঝাঁপের ব্যবস্থা করব।’’ উলুবেড়িয়ার বাহিরতফা গাজন উৎসব কমিটির পক্ষে রাজু অধিকারীও মানছেন, ‘‘এ ধরনের ঝাঁপের ক্ষেত্রে চোট লাগার ঝুঁকি থেকেই যায়। তাই ঝাঁপ দেওয়ার পাটাতনের উচ্চতা মাত্র সাত ফুট করেছি আমরা। তবে আমাদের কাছে প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা থাকে। ডাক্তার থাকেন না। পরের বার থেকে ডাক্তার রাখা যায় কি না, দেখছি।’’

জেলা পুলিশের এক কর্তা অবশ্য বলেন, ‘‘উৎসবের নামে অসুরক্ষিত ভাবে এ ধরনের অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়েছে জানতে পারলেই এ বার থেকে উদ্যোক্তাদের আমরা ধরব।’’

howrah southbengal shyampur police jhapan festival accident
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy