Advertisement
E-Paper

ধর্মীয় সমাবেশে প্যান্ডেল ভেঙে জখম বহু

অন্ধকারে বাঁশ-কাঠ পড়ে তখন অনেকে রক্তাক্ত। বাকিরা প্রাণ বাঁচাতে ছুটছেন। আর্তনাদে খান খান হয়ে যাচ্ছিল চারপাশ।

তাপস ঘোষ

শেষ আপডেট: ২৪ মার্চ ২০১৯ ০৫:৩৭
লন্ডভন্ড: ভেঙে পড়ে রয়েছে প্যান্ডেল। পান্ডুয়ার রামেশ্বরপুরে। নিজস্ব চিত্র।

লন্ডভন্ড: ভেঙে পড়ে রয়েছে প্যান্ডেল। পান্ডুয়ার রামেশ্বরপুরে। নিজস্ব চিত্র।

গভীর রাতে আচমকা ঝড়বৃষ্টিতে ভেঙে পড়েছিল সংখ্যালঘুদের ধর্মীয় সমাবেশের বিরাট প্যান্ডেল। বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল বিদ্যুৎ সংযোগ। অন্ধকারে বাঁশ-কাঠ পড়ে তখন অনেকে রক্তাক্ত। বাকিরা প্রাণ বাঁচাতে ছুটছেন। আর্তনাদে খান খান হয়ে যাচ্ছিল চারপাশ। আর ঘরে থাকতে পারেননি সমীর চট্ট্যোপাধ্যায়, সঞ্জয় ঘোষ, জয়দেব মুর্মু, শুকদেব ওঁরাওরা। বৃষ্টি মাথায় করেই বেরিয়ে পড়েছিলেন। উদ্ধার করলেন সইদুল ইসলাম, মনসুর আলি, মহম্মদ আকবর-সহ আরও অনেককে।

শুক্রবার পান্ডুয়ার রামেশ্বরপুরের এই ছবি মনে করিয়ে দিল গত জানুয়ারিতে বাগনানের চন্দ্রপুরের এক দুর্ঘটনার পরবর্তী মুহূর্তগুলিকেও। সেখানে গঙ্গাসাগরগামী বাস দুর্ঘটনায় পড়ায় জখম যাত্রীদের উদ্ধারে এগিয়ে আসেন শেখ তৈবুর রহমান, শেখ সাহারাত আলি, শেখ জালালউদ্দিনরা। সেখানে জখম হয়েছিলেন হিন্দুরা। পান্ডুয়ায় হলেন মুসলিমরা। তফাত এটুকুই। বিপদে ধর্ম ভুলে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর আরও এক নজির তৈরি হল।

যা দেখে পান্ডুয়ার ওই সমাবেশ কমিটির আহ্বায়ক হাজি কামরুল হুদা বলেন, ‘‘প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের উপর কারও হাত নেই। তবে এই বিপদের সময়ে জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে মানুষ যে উদ্ধারকাজে এগিয়ে এসেছেন এটাই আমাদের দেশের একতা। ওঁরা সময়ে না-এলে হয়তো প্রাণহানিও ঘটত। ওঁদের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ।’’ উদ্ধারকাজে এগিয়ে আসা স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে শুকদেব ওঁরাও অবশ্য এর মধ্যে কোনও বাহাদুরি দেখছেন না। তিনি বলেন, ‘‘ওখানে এগিয়ে না-গেলে আমাদের মনুষ্যত্ব বলে কিছু থাকত না। বিপদের সময় মানুষের পাশে দাঁড়ানোই সকলের কর্তব্য।’’

আরও পড়ুন: দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, রামেশ্বরপুরের জায়ের মাঠে প্রতি বছর তিন দিনের জন্য ওই ধর্মীয় সমাবেশের আয়োজন করা হয়। এ বার শনিবার থেকে তা কোনও মতে শুরু হলেও শুক্রবার রাতে যে ওই বিপর্যয় ঘটবে, কেউ ভাবতে পারেননি। সে দিন সকাল থেকেই রাজ্যের বিভিন্ন এলাকার মুসলিম সম্প্রদায়ের কয়েক হাজার মানুষ ওই প্যান্ডেলে আসতে শুরু করেন। সেখানে রাতে তাঁদের থাকা-খাওয়ারও আয়োজন হয়েছিল। কিন্তু রাত ১১টা নাগাদ প্রবল ঝড়বৃষ্টিতে সব তছনছ হয়ে যায়। হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে প্যান্ডেল। জয়দেব, শুকদেব, সমীর, সঞ্জয়-সহ বহু স্থানীয় বাসিন্দা উদ্ধারকাজে হাত লাগান। দমকলের একটি ইঞ্জিন এবং পুলিশ বাহিনীও ঘটনাস্থলে আসে। বাঁশ পড়ে কারও মাথা ফাটে, কারও হাত ভাঙে, কেউ কোমরে চোট পান। কেউ কেউ পড়ে গিয়ে অন্ধকারে পদপিষ্টও হন। আহতদের প্রথমে পান্ডুয়া হাসপাতালে পাঠানো হয়। তার মধ্যে ১১ জনের অবস্থা গুরুতর। পরে তাঁদের মধ্যে এক জনকে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এবং ছ’জনকে চুঁচুড়া হাসপাতালে স্থানান্তরিত করানো হয়।

শনিবার সকালে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, এলাকা যেন ভগ্নস্তূপ। চারদিকে ভাঙা প্যান্ডেলের বাঁশ-কাঠ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে রয়েছে। পড়ে রয়েছে সমাবেশে আগতদের বালিশ, চাদর,জলের বোতলও। তার মধ্যে অবশ্য উদ্যোক্তারা ফের সমাবেশ আয়োজনের চেষ্টা করছেন। তদারক করছেন জেলা (গ্রামীণ) পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ঈশানী পাল, ডিএসপি (ক্রাইম) শুভাশিস চৌধুরী, মগরার সার্কেল ইনস্পেক্টর অরূপ ভৌমিক-সহ পুলিশকর্তারা। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জানান, ফের যাতে কোনও দুর্ঘটনা না-ঘটে সে দিকে নজর রাখা হচ্ছে। এলাকাবাসী যে ভাবে সঙ্গে সঙ্গে উদ্ধারকাজে এগিয়ে এসেছেন, তাতে প্রাণহানি এড়ানো গিয়েছে।

সমাবেশে আসা গোঘাটের বৃদ্ধ শেখ মনসুর আলি চুঁচুড়া ইমামবাড়া হাসপাতালে ভর্তি। তিনি বলেন, ‘‘শোওয়ার তোড়জোড় করছিলাম। তখনই দুর্ঘটনা। মাথায় বাঁশ পড়ায় জ্ঞান হারাই। পরে জেনেছি, হিন্দু-ভাইরা কী ভাবে উদ্ধার করেছেন। ওঁদের কথা ভুলতে পারব না।’’

Accidents Pandua Religious Programmes
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy