Advertisement
E-Paper

লগ্নি সংস্থার কর্তা উধাও, বিক্ষোভ

সারদা, রোজভ্যালি-কাণ্ড সামনে আসার পরে গত কয়েক বছর ধরে বেআইনি অর্থলগ্নি সংস্থায় সাধারণ মানুষ যাতে টাকা না-রাখেন, সে জন্য সরকারি স্তরে প্রচারের খামতি ছিল না।

সুব্রত জানা

শেষ আপডেট: ২৬ অগস্ট ২০১৯ ০১:১৪
বেআইনি অর্থলগ্নি সংস্থায় টাকা রেখে প্রতারিতদের িবক্ষোভ। উলুবেড়িয়ার বাণীবনে।

বেআইনি অর্থলগ্নি সংস্থায় টাকা রেখে প্রতারিতদের িবক্ষোভ। উলুবেড়িয়ার বাণীবনে।

টনক নড়েনি শত প্রচারেও। এখন মাথায় হাত পড়েছে।

সারদা, রোজভ্যালি-কাণ্ড সামনে আসার পরে গত কয়েক বছর ধরে বেআইনি অর্থলগ্নি সংস্থায় সাধারণ মানুষ যাতে টাকা না-রাখেন, সে জন্য সরকারি স্তরে প্রচারের খামতি ছিল না। তবু সেই প্রচারে কান দেননি উলুবেড়িয়ার রাজাপুর থানা এলাকার বাণীবনের বহু বাসিন্দা। পাঁচ বছরে দ্বিগুণ লাভের আশায় তাঁরা টাকা জমাচ্ছিলেন এলাকার ‘সোমনাথ ফান্ড’-এ। যে সংস্থার মালিক গ্রামেরই বাগপাড়ার তৃণমূল নেতা, বছর চল্লিশের সনৎ মাঝি। কিন্তু সেই সনৎ স্ত্রী-পুত্র নিয়ে এক মাস ধরে বেপাত্তা। ঝাঁপ বন্ধ তার সংস্থারও। দেখা নেই কর্মীদের। মহালয়ার আগে যে সব গ্রামবাসী টাকা ফেরতের প্রতিশ্রুতি পেয়েছিলেন, তাঁদের মাথায় হাত পড়েছে। রবিবার তাঁরা ওই যুবকের বিরুদ্ধে থানায়
প্রতারণার অভিযোগ দায়ের করেছেন। বিকেলে সনতের বাড়ির সামনে বিক্ষোভও দেখান গ্রামবাসী। কিছু ঢিল ছোড়া হয়। পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি সামলায়।

সনতের এই কারবারের কথা পুলিশ প্রশাসনেরও অজানা ছিল। হাওড়া (গ্রামীণ) জেলা পুলিশের এক কর্তা জানিয়েছেন, ‘‘অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু হয়েছে।’’ সনৎকে দলীয় নেতা হিসেবে মানতে চাননি স্থানীয় তৃণমূল নেতা প্রতাপ ভক্তা। তাঁর দাবি, ‘‘সনৎ আগে বিজেপি করত। লোকসভা ভোটের আগে ও আমাদের দলে সাধারণ সমর্থক হিসেবে যোগ দেয়। ভোটের সময় আমাদের হয়ে কাজ করেছে ঠিকই। কিন্তু ওর অর্থলগ্নি ব্যবসার বিষয়ে দল কিছু জানত না। এর সঙ্গে দলের কোনও সম্পর্ক নেই। পুলিশ তদন্ত করবে।’’ বিজেপি তৃণমূলের দাবি মানেনি। বাণীবনের বিজেপি নেতা তথা দলের জেলা সহ-সভাপতি রমেশ সাধুখাঁর দাবি, ‘‘সনৎ কোনও দিনই বিজেপি করেনি। তৃণমূল কালিমা থেকে বাঁচার জন্য বিজেপির নাম বলছে।’’

আদতে স্থানীয় একটি শাটল কক কারখানার কর্মী সনৎ। তাঁর ছেলের নাম সোমনাথ। বছর পনেরো আগে ছেলের নামেই অর্থলগ্নি সংস্থা খুলে টাকা তুলতে শুরু করেন ওই যুবক। গ্রামবাসীদের দাবি, ইতিমধ্যে কয়েক কোটি টাকা তুলেছেন সনৎ। তাঁর সংস্থার গ্রাহক-সংখ্যা অন্তত তিন হাজার। কারও থেকে প্রতি সপ্তাহে টাকা তুলতেন। দুর্গাপুজোর আগে পাঁচ শতাংশ সুদ-সহ সেই টাকা ফেরত দিতেন। আবার কারও থেকে পাঁচ বছরের জন্য এককালীন টাকা নিতেন। মেয়াদ শেষে অনেককে টাকা ফেরত দিয়ে আস্থা অর্জনও করেছিলেন। ফলে, সারদা-রোজভ্যালি কাণ্ড সামনে আসার পরেও ‘সোমনাথ ফান্ড’-এর ব্যবসায় ছেদ পড়েনি। কিন্তু এ বার গ্রামবাসীর সেই আস্থা হারালেন সনৎ।

রবিবার বাগপাড়ায় গিয়ে দেখা যায়, সনতের দোতলা বাড়ি তালাবন্ধ। বাডির চারদিকে সিসিক্যামেরা বসানো। ঘরগুলি শীতাতপনিয়ন্ত্রিত। নীচেই তাঁর লগ্নি সংস্থার অফিসও বন্ধ। ওই বাড়ির পাশেই একটি বাড়িতে সনতের বৃদ্ধা মা মলিনাদেবী থাকেন। ছেলের কারবার নিয়ে
তিনি কিছু জানেন না বলে দাবি করেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘সনৎ ওর বউ-ছেলেকে নিয়ে বেড়াতে গিয়েছে বলেই তো জানি। কবে ফিরবে
কিছুই বলেনি।’’

গ্রামবাসীর দাবি, মহালয়ায় সব মিলিয়ে কয়েক কোটি টাকা ফেরত দেওয়ার কথা ছিল সনতের। তা দিতে পারেবন না বুঝেই গা-ঢাকা দিয়েছেন। বাণীবন গ্রামের গৃহবধূ চম্পা দলুই বাড়িতে জরির কাজ করেন। তিনি গত বছর দুর্গাপুজোর পর থেকে এ পর্যন্ত সনতের লগ্নি সংস্থায় ৪০ হাজার টাকা জমিয়ে ছিলেন। ভেবেছিলেন, পুজোর সময় টাকা তুলে মেয়ের বিয়ের গয়না তৈরি করবেন। কিন্তু এখন কপাল চাপড়াচ্ছেন। তাঁর কথায়, ‘‘কী করব বুঝতে পারছি না। ফান্ডের পাশবইও আমার থেকে নিয়ে নিয়েছিলেন সনৎ।’’ লালপোলের এক ব্যক্তিও বিপাকে পড়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘চার লক্ষ টাকা পাঁচ বছরের জন্য ‘ফিক্সড’ করেছিলাম ওখানে। ভেবেছিলাম টাকা পেলে বাড়ি তৈরি করব।
আর কি পাব?’’

Chit Fund Agitation Fraud
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy