Advertisement
E-Paper

‘দাদারা’ নেই, দেহ পেতেই হয়রানি চরমে

দেহ হস্তান্তরের জন্য স্থানীয় কাউন্সিলর বা বিধায়কের যে শংসাপত্র লাগে, তা পেতেই সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত নাজেহাল হলেন তাঁরা। অভিযোগ, থানার সহযোগিতা পাওয়া তো দূর, দেহটি থানা থেকে মর্গে নিয়ে যেতেও গাড়ি ভাড়া বাবদ টাকা চাওয়া হয়।

দেবাশিস দাশ

শেষ আপডেট: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০০:১২
প্রীতম সাউ

প্রীতম সাউ

‘দাদা’ থাকলে সব হয়!

আর না থাকলে কপালে জোটে চরম ভোগান্তি। দুর্ঘটনায় এক যুবকের মৃত্যুর পরে সেটাই হাড়ে হাড়ে টের পেলেন তাঁর আত্মীয়-বন্ধুরা। দেহ হস্তান্তরের জন্য স্থানীয় কাউন্সিলর বা বিধায়কের যে শংসাপত্র লাগে, তা পেতেই সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত নাজেহাল হলেন তাঁরা। অভিযোগ, থানার সহযোগিতা পাওয়া তো দূর, দেহটি থানা থেকে মর্গে নিয়ে যেতেও গাড়ি ভাড়া বাবদ টাকা চাওয়া হয়।

সোমবার এই ঘটনা ঘটেছে হাওড়ার দাশনগরে। পুলিশ জানায়, রবিবার রাতে গাড়ির ধাক্কায় মারা যান হাওড়ার ডুমুরজলার বাসিন্দা প্রীতম সাউ (৩০)। রাত আড়াইটে নাগাদ ওই ঘটনা ঘটার পরে দাশনগর থানার পুলিশ দেহটি উদ্ধার করে কোনা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পাঠায়। সেখানে চিকিৎসকেরা ওই যুবককে মৃত ঘোষণা করলে ফের থানায় নিয়ে আসা হয় দেহটি।

সোমবার সকাল থেকে শুরু হয় হয়রানির আসল অধ্যায়। নিয়ম অনুযায়ী, অস্বাভাবিক মৃত্যুর ক্ষেত্রে পরিবারের তরফে যিনি দেহটি নেন, তাঁকে এলাকার কোনও প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তির শংসাপত্র আনতে হয়। এত দিন ওই শংসাপত্র এলাকার কাউন্সিলরেরা দিতেন। কিন্তু হাওড়া পুরসভায় নির্বাচন না করে নির্বাচিত বোর্ড ভেঙে দেওয়ায় এখন ওয়ার্ডগুলি সামলানোর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে পুর এলাকার পাঁচ বিধায়ক ও হাওড়ার সাংসদকে।

মৃত যুবকের পরিবার ও বন্ধুদের অভিযোগ, সোমবার তাঁদের থানায় ডেকে জানিয়ে দেওয়া হয়, দেহ এ দিনই পেতে হলে প্রাক্তন কাউন্সিলর বা বিধায়কের শংসাপত্র আনতে হবে। না হলে দেহ পাওয়া যাবে না। তা শুনেই মৃতের পরিজনেরা ৪৩ নম্বর ওয়ার্ডে তৃণমূলের প্রাক্তন কাউন্সিলর দেবাংশু দাসের কাছে যান। দেবাংশু জানান, তিনি আর দায়িত্বে নেই। বিষয়টি দেখছেন এলাকার ওয়ার্ড সভাপতির এক ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি।

মৃতের পরিজনেরা ওই ব্যক্তির কাছেও যান। কিন্তু তিনি জানান, শংসাপত্রের প্যাডের কাগজ তাঁর কাছে নেই। তাই বিধায়কের থেকেই শংসাপত্র নিতে হবে। মৃতের বাড়ি যেখানে, সেই এলাকার বিধায়ক জটু লাহিড়ী। দীর্ঘক্ষণ তাঁর অফিসের সামনে অপেক্ষার পরে জানানো হয়, জটুবাবু বেড়াতে গিয়েছেন। তিন দিন পরে ফিরবেন। যাঁর কাছে বিধায়কের সই করা শংসাপত্র থাকে, সেই ব্যক্তি জানিয়ে দেন, জটুবাবু ফিরলে তবেই শংসাপত্র পাওয়া যাবে।

মৃতের দাদা শ্যাম সাউ বলেন, ‘‘সকাল আটটা থেকে ঘুরে ক্লান্ত হয়ে দুপুর ১টা নাগাদ থানায় গিয়ে আমরা আমাদের অপারগতার কথা জানাই। তখন থানার কয়েক জন অফিসার পরিষ্কার বলেন, ওই শংসাপত্র নিয়ে এলে তবেই দেহ মিলবে। প্রয়োজনে তিন দিন অপেক্ষা করতে হবে।’’ এ কথা শোনার পরে ওই যুবকের পরিবারের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে। তা হলে কি মৃতদেহ মিলবে না? ওই পরিবারের দাবি, পুলিশ তাদের জানায়, মৃতদেহ নিজেদের খরচে ময়না-তদন্তের জন্য নিয়ে যেতে হবে। থানা কোনও গাড়ির ব্যবস্থা করতে পারবে না।

মৃতের পরিবারের সঙ্গে থানায় আসা রাজু ভুঁইয়ার দাবি, ‘‘অনেক কাকুতি-মিনতির পরে পুলিশ ১৫০০ টাকার বিনিময়ে এক ডোমকে দিয়ে ট্রলিতে চাপিয়ে মৃতদেহটি মল্লিক ফটক পুলিশ মর্গে পাঠাতে রাজি হয়। হাওড়া পুরসভার প্রশাসক বিজিন কৃষ্ণকে আমাদের এক পরিচিত ব্যক্তি ফোন করায় বিকেল ৩টে নাগাদ সমস্যা মেটে। এলাকার প্রাক্তন কাউন্সিলরই উদ্যোগী হয়ে সাংসদ প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়ের শংসাপত্র জোগাড় করে দেন।’’

পুর প্রশাসক বলেন, ‘‘এমনটা হওয়ার কথা নয়। যে ব্যক্তি মারা গিয়েছেন, তাঁর পরিবারের যে কেউ নিজের পরিচয় দিয়ে চিঠি দিলে পুলিশ মৃতদেহ দিয়ে দেয়। এ ক্ষেত্রে কেন এমন হল, খোঁজ নিচ্ছি।’’

হাওড়া সিটি পুলিশের এক পদস্থ কর্তা বলেন, ‘‘গোটা ঘটনাটি কোনও ভুল বোঝাবুঝির জন্য হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। বিশদে খোঁজ নিচ্ছি।’’

Morgue Dead Body Police
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy