Advertisement
E-Paper

অবন-স্মৃতি বাঁচাতে মিছিলে সামিল কোন্নগর

বিশ্ব হেরিটেজ দিবস উপলক্ষে শুক্রবার রাজ্য হেরিটেজ কমিশনের উদ্যোগে কলকাতার জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ির সামনে থেকে পদযাত্রা বের হয়। কোন্নগর পুরসভার তরফে শতাধিক শহরবাসী তাতে সামিল হন। তাঁদের হাতে ছিল প্ল্যাকার্ড-পোস্টার, ব্যানার-ফেস্টুন। ছিলেন পুরপ্রধান বাপ্পাদিত্য চট্টোপাধ্যায়ও।

গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায় ও প্রকাশ পাল

শেষ আপডেট: ২৪ নভেম্বর ২০১৮ ০০:৪০
দাবি: মিছিল জোড়াসাঁকোয়। নিজস্ব চিত্র

দাবি: মিছিল জোড়াসাঁকোয়। নিজস্ব চিত্র

‘প্রোমোটারের গ্রাস’ থেকে অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিধন্য বাগানবাড়ি বাঁচানোর দাবি এ বার মহানগরের রাস্তায় তুলে ধরলেন কোন্নগরবাসী।

বিশ্ব হেরিটেজ দিবস উপলক্ষে শুক্রবার রাজ্য হেরিটেজ কমিশনের উদ্যোগে কলকাতার জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ির সামনে থেকে পদযাত্রা বের হয়। কোন্নগর পুরসভার তরফে শতাধিক শহরবাসী তাতে সামিল হন। তাঁদের হাতে ছিল প্ল্যাকার্ড-পোস্টার, ব্যানার-ফেস্টুন। ছিলেন পুরপ্রধান বাপ্পাদিত্য চট্টোপাধ্যায়ও।

রাজ্য হেরিটেজ কমিশনের চেয়ারম্যান শুভাপ্রসন্নের বিরুদ্ধেই কোন্নগরে অবনীন্দ্রনাথের বাগানবাড়িটি হস্তান্তরের অভিসন্ধির অভিযোগ এনেছেন পুর কর্তৃপক্ষ। পুরসভার বিরুদ্ধে পাল্টা শুভাপ্রসন্নও একই অভিযোগ তুলেছেন। এ নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরেই দু’পক্ষের টানাপড়েন চলছে। এই অবস্থায় শুক্রবার হেরিটেজ কমিশনের ওই কর্মসূচিতে উপস্থিতি কেন? কোন্নগরের পুরপ্রধানের জবাব, ‘‘কমিশনের সচিবের আহ্বানে গিয়েছি। কোনও পরিস্থিতিতেই ওই জমি প্রোমোটারের হাতে যেতে দেব না।’’ তাঁর অভিযোগ, ‘‘সঙ্গে করে প্রোমোটারকে এনে সম্প্রতি শুভাপ্রসন্ন বাগানবাড়িটি দেখে গিয়েছেন। বাড়িটি প্রোমোটারকে দিয়ে দখল করাতে চাইছেন। নিজে শিল্পী হয়ে কী করে এমন সম্পদ প্রোমোটারের হাতে তুলে দিয়ে চান, সেটা রহস্যের।’’

পুরসভার বিরুদ্ধে শুভাপ্রসন্নের পাল্টা অভিযোগ, ‘‘ওই সম্পত্তি পুরোটাই দখল করে বাপ্পাবাবুরা প্রোমোটারি করতে চাইছেন। জমিটি যিনি কিনেছেন, তাঁর সঙ্গে কথা বলে আমি ওই জমির একাংশে অবনীন্দ্রনাথের উপর একটি সংগ্রহশালা করতে চেয়েছিলাম। বাকিটা জমির মালিক তাঁর মতো ব্যবহার করতেন। বাপ্পাবাবুরা তা হতে দেবেন না।’’

কোন্নগরের মিরপাড়া লেনে জিটি রোডের পাশে বেশ কয়েক বিঘা জমিতে গঙ্গাঘেঁষা বাগানবাড়িটি ২০০৭ সালে ‘হেরিটেজ প্লেস’ হিসেবে ঘোষণা করে হেরিটেজ কমিশন। পুর কর্তৃপক্ষ এটি সংরক্ষণের পরিকল্পনা নিয়েছেন। সেই সংক্রান্ত কাজও শুরু হয়েছে। পুর-কর্তৃপক্ষ জানান, ঠাকুর পরিবারের থেকে হাতবদল হয়ে প্রথমে কলকাতার রায় পরিবারের হাতে যায় বাগানবাড়িটি। পরে ১ কোটি ১০ লক্ষ টাকায় সতীশ লাখোটিয়া নামে এক ব্যবসায়ী তা কেনেন। তিনি মিউটেশনের আবেদনও করেন। এখানে আবাসন করার পরিকল্পনা রয়েছে তাঁর। কিন্তু পুর কর্তৃপক্ষ তাতে আপত্তি তুলেছেন।

বাপ্পাদিত্যবাবু বলেন, ‘‘ওই ব্যবসায়ী যে টাকায় ওই সম্পত্তি কিনেছেন, তা দিয়ে পুরসভার নামে পুরোটাই সংরক্ষণ করতে আমরা তৈরি।’’ পরিবেশবিদ বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘হেরিটেজ ঘোষিত ঐতিহাসিক বাড়ি কী ভাবে হাতবদল হল, সেটাই প্রশ্ন। আইন বলছে, গঙ্গায় যেখানে জোয়ার-ভাটা খেলে, তার ৪৭ মিটার পর্যন্ত সরকারের।’’ সতীশবাবুর দাবি, ‘‘আমরা পুরসভার সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলাম। সংগ্রহশালার জন্য জায়গা ছেড়ে বাকি অংশে প্রকল্প করব বলে সবাই তখন রাজি ছিলেন।’’

গঙ্গার উল্টো দিকে পানিহাটিতেও ঠাকুর পরিবারের বাগানবাড়ি রয়েছে। নৌকা ভাসিয়ে দু’পারের বাগানবাড়িতে যাতায়াত ছিল ঠাকুর পরিবারের সদস্যদের। চিত্রকলার পাশাপাশি ‘ক্ষীরের পুতুল’ বা ‘বুড়ো আংলা’র মতো শিশুসাহিত্য রয়েছে অবন ঠাকুরের। স্মৃতিকথাও লিখেছেন। ‘জোড়াসাঁকোর ধারে’ বইয়ে ছড়িয়ে রয়েছে নানা স্মৃতিকথা। কোন্নগরের বাড়িটিরও উল্লেখ রয়েছে তাতে। সাঁতার শেখা, নৌকা, শিকারের নানা স্মৃতিতে ছোটবেলায় কোন্নগরের বাড়ি তাঁর স্বপ্নের মতো কেটেছে। এখানেই জীবনে প্রথম কুঁড়েঘর এঁকেছেন। বাগানবাড়িতে বহু গাছ ছিল। এখনও আছে। একটি কাঁঠাল গাছের কথা ‘জোড়াসাঁকোর ধারে’ বইতে উল্লেখ আছে। জোৎস্না রাতে চাঁদের আলোয় কাঁঠালতলার ঘন ছায়ার কথা উল্লেখ করেছেন অবন ঠাকুর।

কী ভাবে রক্ষিত হবে স্মৃতি, প্রশ্ন এখন সেটাই।

Procession House Heritage Abanindranath Tagore
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy