Advertisement
E-Paper

সাব-স্টেশন ঘিরে ক্ষোভের পারদ চড়ছে

বিষয় সেই একই— বিদ্যুতের সাব-স্টেশন। ভাঙড়ে অবশ্য পাওয়ার গ্রিডের ওই প্রকল্প তৈরিতে আপত্তি তুলেছেন কিছু গ্রামবাসী। হুগলির চণ্ডীতলার হরিপুরে অবশ্য সেই আপত্তি নেই।

গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৫ জানুয়ারি ২০১৮ ০৩:২৪
বাধা: বিদ্যুতের খুঁটি পোঁতার জন্য যে গর্ত কাটা হয়েছিল তা বোজানোর চেষ্টা বিক্ষোভকারীদের। ছবি: দীপঙ্কর দে

বাধা: বিদ্যুতের খুঁটি পোঁতার জন্য যে গর্ত কাটা হয়েছিল তা বোজানোর চেষ্টা বিক্ষোভকারীদের। ছবি: দীপঙ্কর দে

এক ভাঙড় নিয়েই নাজেহাল রাজ্য সরকার। এ বার তার সঙ্গে জুড়ল হরিপুরও!

বিষয় সেই একই— বিদ্যুতের সাব-স্টেশন। ভাঙড়ে অবশ্য পাওয়ার গ্রিডের ওই প্রকল্প তৈরিতে আপত্তি তুলেছেন কিছু গ্রামবাসী। হুগলির চণ্ডীতলার হরিপুরে অবশ্য সেই আপত্তি নেই। গ্রামবাসীদের ক্ষোভ-বিক্ষোভ ক্ষতিপূরণ নিয়ে। তার জেরে গত কয়েক মাসে বারবার থমকেছে রাজ্য বিদ্যুৎ সংবহন সংস্থার ওই প্রকল্পের কাজ। বৃহস্পতিবারও হরিপুরে দ্বিতীয় পর্যায়ে কৃষিজমির উপরে হাইটেনশন তার টানা শুরু হতেই বাধা দেন গ্রামবাসীরা। ফের থমকে যায় কাজ।

২০১৩ সালে রাজ্য বিদ্যুৎ সংবহণ সংস্থা চণ্ডীতলার আঁইয়া ও দুধকানাড়ায় ৬১ একর জমিতে সাব-স্টেশন তৈরির সিদ্ধান্ত নেয়। শতাধিক চাষি স্বেচ্ছায় জমি দেন। পরের বছরেই নির্মাণকাজ শুরু হয়ে যায়। চালু হয় গত বছর। জমিদাতারা সেই সময় কিছু শর্ত আরোপ করেছিলেন। তাঁদের অভিযোগ, প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও এখনও পর্যন্ত তা পূরণ হয়নি। ফলে, এলাকায় চাষের কাজ ব্যাহত হচ্ছে। বিপন্ন হচ্ছে গ্রামবাসীর জীবন-জীবিকা। দাবি আদায়ে গ্রামবাসীরা ‘কৃষক সংগ্রাম কমিটি’ গড়েছেন। জেলা প্রশাসন থেকে মুখ্যমন্ত্রীর দফতর— সর্বত্র আবেদন করেছেন। কিন্তু এখনও সমস্যার সুরাহা হয়নি বলে তাঁদের অভিযোগ।

কী চাইছেন আন্দোলনকারীরা?

চার দফা দাবি রয়েছে আন্দোলনকারীদের। ১) জমিহারা পরিবারের একজনের সরকারি চাকরি ও বয়স্ক চাষিদের জন্য কৃষি পেনশন চালু। ২) দুধকানাড়া ও আঁইয়া মৌজার জমির জল নিকাশির জন্য গাংপুর শ্মশান থেকে দক্ষিণে এক কিলোমিটার পাকা নিকাশি নালা তৈরি। পাশাপাশি কৌশিকী খালের সংস্কার। ৩) অধিগৃহীত ৬১.১০ একর এলাকার পূর্ব, উত্তর ও দক্ষিণে পাকা রাস্তা তৈরি এবং ৪) অধিগৃহীত জমিতে থাকা গভীর নলকূপের ১১টি চেম্বার সরকারি খরচে অন্যত্র স্থাপন।

এ নিয়ে জেলা প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, ‘‘জমি হস্তান্তর হয়ে গিয়েছে। রাজ্য বিদ্যুৎ সংবহন সংস্থার এখন দায়িত্ব বিষয়টি দেখার। তবে জমিদাতারা যেহেতু জমির দাম নিয়েছেন, সে ক্ষেত্রে চাকরি দেওয়ার সুযোগ সম্ভবত আর নেই।’’ বিদ্যুৎ সংবহণ সংস্থার এক কর্তা বলেন, ‘‘স্থানীয় প্রশাসন এবং চাষিদের সঙ্গে আলোচনায় সাপেক্ষে পরবর্তী পর্যায়ে কাজ শুরু হবে। ওখানে যে সব দাবি উঠছে, তা নিয়ে র্ঊধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলা হবে।’’

সাব-স্টেশনের জন্য আড়াই বিঘা জমি দিয়েছেন আঁইয়ার সুজিত মণ্ডল। তিনি বলেন, ‘‘সরকার একরপ্রতি ১২ লক্ষ ১০ হাজার টাকা জমির দাম দিয়েছে। আমরা মেনে নিয়েছি। কিন্তু আমার ছেলে পড়াশোনা শিখে এখন বেকার। সরকারি যে কোনও কাজ হলে আমার পরিবার বাঁচে।’’ হরিপুর গ্রামের প্রলয় ঘোষের ক্ষোভ, ‘‘ব্লক অফিস থেকে বলা হয়েছিল, গ্রামে একটাই লাইন যাবে। কিন্তু এখন দ্বিতীয় পর্যায়ে কাজ হচ্ছে। আমরা চাই না আমাদের গ্রাম দিয়ে ওই তার যাক।’’

হরিপুর, আঁইয়া ও দুধকানাড়া গ্রামের অনেক বাসিন্দার অভিযোগ, জমি অধিগ্রহণের সময় শর্ত ছিল, কৌশিকী নদীর চরের মাটি দিয়ে সাব-স্টেশনের নিচু জমি ভরাট হবে। কিন্তু এখন হচ্ছে ঠিক উল্টো। সাব-স্টেশনের পিছনের ৫০-৬০ বিঘে কৃষিজমি দালালদের দিয়ে কিনে নেওয়া হয়েছে। সেই জমির মাটি কেটে ভরাট হয়েছে সাব-স্টেশনের নিচু এলাকা। ফলে, আশপাশের কৃষিজমি ধসে যাচ্ছে। চাষের অযোগ্য হয়ে পড়ছে। অন্তত ২৫০ বিঘে জমিতে জল না-যাওয়ায় এখন চাষ বন্ধ।

একই সঙ্গে চাষিদের অভিযোগ, সাব-স্টেশনের হাইটেনশন তার কৃষিজমির উপর দিয়ে যাচ্ছে। যে চাষির জমিতে খুঁটি বসছে তার মালিক টাকা পাচ্ছেন। কিন্তু যাঁদের জমির উপর দিয়ে তার যাচ্ছে, তাঁদের জমি কেউ কিনতে চাইছেন না। এ দিন গোলমালের সময় পরিস্থিতি বেগতিক দেখে হরিপুরের প্রধান তরুণ কর্মকার গ্রামে যান। তিনি জানান, গ্রামবাসীদের কিছু দাবি আছে। প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলেই কাজ শুরু হবে।

Power Substation হরিপুর
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy