Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

চিকিৎসায় শহরবাসী চায় বেসরকারি উদ্যোগ

আরামবাগ মহকুমা হাসপাতালের দূরত্ব ২০ কিলোমিটার, পশ্চিম মেদিনীপুরের ক্ষীরপাই গ্রামীণ হাসপাতাল ২৮ কিলোমিটার আর ৩০ কিলোমিটার দূরে বাঁকুড়ার গোগরা ব্লক হাসপাতাল। এই ভৌগোলিক সীমায় এক কুম্ভের মতো গোঘাটের ‘স্বাস্থ্য-দুর্গ’ রক্ষায় রয়েছে কামারপুকুর ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র।

স্বাস্থ্যকেন্দ্রের গেটে পার্কিং, চরছে ছাগল। ছবি: মোহন দাস।

স্বাস্থ্যকেন্দ্রের গেটে পার্কিং, চরছে ছাগল। ছবি: মোহন দাস।

পীযূষ নন্দী
গোঘাট শেষ আপডেট: ২৭ জুলাই ২০১৫ ০১:২৮
Share: Save:

আরামবাগ মহকুমা হাসপাতালের দূরত্ব ২০ কিলোমিটার, পশ্চিম মেদিনীপুরের ক্ষীরপাই গ্রামীণ হাসপাতাল ২৮ কিলোমিটার আর ৩০ কিলোমিটার দূরে বাঁকুড়ার গোগরা ব্লক হাসপাতাল। এই ভৌগোলিক সীমায় এক কুম্ভের মতো গোঘাটের ‘স্বাস্থ্য-দুর্গ’ রক্ষায় রয়েছে কামারপুকুর ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র।

এখানে চিকিৎসার নানা অসম্পূর্ণতা নিয়ে সাধারণ মানুষের হাজারো অভিযোগ থাকলেও তাঁদের কথায়, তবু তো রাত বিরেতে এটাই ভরসা। কারণ অন্য জায়গার মতো এখানে গড়ে ওঠেনি কোনও বেসরকারি চিকিৎসা ব্যবস্থা বা বলা ভাল কোনও নার্সিংহোম। কাজেই ব্লক হাসপাতালে চিকিৎসা না পেলে বা পরিষেবায় সন্তুষ্ট না হলে গোঘাটের দুটি ব্লক ছাড়াও বাঁকুড়া এবং পশ্চিম মেদিনীপুরের সংলগ্ন গ্রামগুলির নিরুপায় রোগীর উপায় বলতে ২০ বা ২৮ নয়তো ৩০ কিলোমিটার দূরের স্বাস্থ্যকেন্দ্র বা হাসপাতাল। তবে একটা সান্ত্বনা অবশ্য রয়েছে। সেটা হল কামারপুকুর রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশন কর্তৃপক্ষের বিনামূল্যে চিকিত্‌সা পরিষেবার আয়োজন। বিশেষত বিনা পয়সায় চক্ষু অস্ত্রোপচার, মাঝেমধ্যেই গ্রামে গ্রামে চিকিৎসা শিবির, এছাড়াও টিবি এবং কুষ্ট নিয়েও ধারাবাহিক অভিযান।

এই অবস্থায় রোগীর চাপ সামলাতে হিমসিম কামারপুকুর ব্লক হাসপাতাল। হাসপাতাল সূত্রে জানা গেল, বহির্বিভাগে প্রতিদিন গড়ে ৫০০ রোগীর ভিড় হয়। অন্তর্বিভাগে শয্যা সংখ্যা ৩০। অথচ প্রতিদিন গড়ে রোগী ভর্তির জন্য আসেন ৪৫ থেকে ৫০ জন। ফলে বাড়তিদের ঠাঁই হয় মেঝেয়। ডাইরিয়া রোগীদের জন্য পৃথক ওয়ার্ড নেই। সাধারণ রোগীর পাশেই তাঁদের ঠাঁই। হাসপাতাল এবং রোগীদের তদারকির জন্য কর্মীর অভাব। গ্রুপ ডি কর্মীর ১০টি পদে আছেন মাত্র ৩ জন। ফলে জরুরি বিভাগ থেকে অসুস্থ রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করা হলে তাঁর আত্মীয়জনকেই স্ট্রেচারে করে ওয়ার্ডে নিয়ে যেতে হয়। পানীয় জল সংগ্রহ থেকে শুরু করে যাবতীয় স্বাস্থ্য পরিষেবা রোগীকে তাঁর বাড়ির লোককেই দিতে হয়। সাফাই কর্মীর অভাবে ওয়ার্ড এবং শৌচাগারগুলি অধিকাংশ সময় অপরিষ্কার থাকছে। অভাব অভিযোগের তালিকা এখানেই শেষ নয়। বহির্বিভাগ এবং প্রশাসনিক ভবন যে রকম বড় সেই তুলনায় অন্তর্বিভাগ ছোট এবং ঘিঞ্জি। স্বাস্থ্যকর্মীদের ১১টি কোয়ার্টারই ভাঙা। স্বাস্থ্যকর্মীদের অভিযোগ ভাঙা আবসনে ছাদ দিয়ে জল পড়ে। প্রায় ১২ থেকে ১৪ বিঘা জুড়ে হাসপাতাল চত্বরের বেশ কিছু এলাকা হকারদের দখলে। রাত ১০টার পর ওষুধের প্রয়োজন হলে বিপাকে পড়তে হয় রোগীর বাড়ির লোকজনদের। কোথাও ওষুধের দোকান খোলা থাকে না। জেনারেটর নেই। ফলে লোডশেডিং হলেই অন্ধকারে ডুবে যায় পুরো হাসপাতাল চত্বর। দিনের বেলাতেই অবাঞ্ছিত মানুষের লেবার রুমে উঁকি মারার ঝোঁক সামলাতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কালঘাম ছুটে যায়। এই অবস্থায় স্বাস্থ্যকেন্দ্রে তারপাশে কোনও পাঁচিল না থাকায় রোগীদের নিরাপত্তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।

স্থানীয় মানুষের বক্তব্য, ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্র ছাড়া কাছের ভরসা বলতে কামারপুকুর মিশনের দ্বারস্থ হওয়া। এর বাইরে বলতে আরামবাগ মহকুমা হাসপাতাল। আশপাশে কোনও নার্সংহোম নেই যে রাত-বিরেতে প্রয়োজনে সেখানে রোগী নিয়ে যাওয়া যাবে।

কামারপুকুর ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক সুদীপ্ত মণ্ডল বলেন, ‘‘গুরুত্বপূর্ণ পরিষেবা এবং পরিকাঠামো নিয়ে কিছু প্রস্তাব পাঠানো হচ্ছে স্বাস্থ্য দফতরে। প্রয়োজনীয় চাহিদাগুলির অন্যতম এখানে প্রসূতিকে সিজার করার ব্যবস্থা চালু ও একটি ব্লাড স্টোরেজ ইউনিটের ব্যবস্থা করা। এ ছাড়া জেনারেটর দরকার। ৫ জন চিকিত্‌সক আছেন। আরও ৩ জন দরকার। গ্রপ-ডি কর্মী প্রয়োজন। সর্বোপরি হাসপাতালের আর একটি ভবন তৈরির প্রয়োজন।’’

মহকুমা স্বাস্থ্য আধিকারিক সিদ্ধার্থ বসু বলেন, ‘‘কামারপুকুর ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রটিকে ৬০ শয্যা করার চেষ্টা চলছে। সেইসঙ্গে অন্যান্য পরিকাঠামো এবং পরিষেবা সংক্রান্ত সমস্যা সমাধানের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।’’

(চলবে)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE