Advertisement
E-Paper

পরিযায়ী শ্রমিকদের ঝুঁকির যাত্রায় আগল

দুর্ঘটনার কথা জানাজানি হতেই নড়েচড়ে বসে হুগলি জেলা প্রশাসন।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১২ মে ২০২০ ০৩:২৮
রেললাইন ধরে পরিযায়ী শ্রমিকদের বাড়ি ফেরা আটকাতে জিআরপির নজরদারি ডানকুনিতে। ছবি: দীপঙ্কর দে

রেললাইন ধরে পরিযায়ী শ্রমিকদের বাড়ি ফেরা আটকাতে জিআরপির নজরদারি ডানকুনিতে। ছবি: দীপঙ্কর দে

ঔরঙ্গাবাদ-দুর্ঘটনার পরেও রেল এবং সড়কপথে পরিযায়ী শ্রমিকদের হেঁটে ঘরে ফেরার চেষ্টা অব্যাহত। ডানকুনিতে গেলেই এ দৃশ্য এখনও চোখে পড়ছে। তাই লকডাউন পর্বে ফের কোনও অবাঞ্ছিত ঘটনা এড়াতে উদ্যোগী হল জেলা প্রশাসন। পরিযায়ী শ্রমিকদের আটকে তাঁদের বিশ্রাম-খাওয়া এবং ফেরার জন্য বাসের ব্যবস্থা করা হয়েছে। জেলাশাসকের কাছে এমনই সুষ্ঠু ব্যবস্থার আবেদন জানিয়েছিলেন জেলা তৃণমূল নেতৃত্বও।

জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, পরিযায়ী শ্রমিকদের বিশ্রামের জন্য ডানকুনিতে একটি অস্থায়ী শিবির তৈরির কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। তাঁদের ফেরার জন্য চন্দননগর পুলিশ কমিশনারেটের ট্র্যাফিক বিভাগকে পাঁচটি বাস দেওয়া হয়েছে।

কমিশনারেটের এসিপি (ট্র্যাফিক) তমাল সরকার বলেন, ‘‘আমরা ওই পাঁচটি বাসে ঘরে ফিরতে চাওয়া শ্রমিকদের রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় পৌঁছে দেওয়ার কাজ শুরু করেছি। কোনও নির্দিষ্ট জেলায় যাওয়ার জন্য ১৫-২০ জন শ্রমিককে পেলেই আমরা পাঠিয়ে দিচ্ছি। সেই বাস ফিরলে আবার অন্য দলকে পাঠাচ্ছি।’’

কিছু শুকনো রুটি আর একটি টিফিন কৌটোয় সামান্য চাটনি নিয়ে গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মহারাষ্ট্রের ঔরঙ্গাবাদের জলনা থেকে রেললাইন ধরে হেঁটে রওনা দিয়েছিলেন ২০ জন পরিযায়ী শ্রমিক। ঠিক ছিল ভুসাবল থেকে শ্রমিক স্পেশ্যাল ট্রেনে তাঁরা মধ্যপ্রদেশ ফিরবেন। কিন্তু আর ফেরা হয়নি। প্রায় ৪০ কিলোমিটার হেঁটে করমাডের কাছে পৌঁছে ক্লান্তিতে অবসন্ন ওই শ্রমিকেরা এলিয়ে পড়েছিলেন রেললাইনে। শুক্রবার ভোরে মালগাড়ির চাকায় ছিন্নভিন্ন হয়ে যায় ১৬ জনের দেহ।

এই দুর্ঘটনার কথা জানাজানি হতেই নড়েচড়ে বসে হুগলি জেলা প্রশাসন। কারণ, পূর্ব রেলের হাওড়া-বর্ধমান মেন ও কর্ড শাখা এবং সড়কপথে দিল্লি রোড এবং দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে কাছে হওয়ায় লকড়াউনের মাঝ-পর্ব থেকেই বহু পরিযায়ী শ্রমিককে ডানকুনিতে আসতে দেখা যাচ্ছিল। তাঁদের মধ্যে কেউ রেলপথ ধরছিলেন, কেউ বা সড়কপথ। দুর্ঘটনার পরেও সেই ঝুঁকির যাত্রায় বিরাম নেই। ওই দলে রাজ্যের বিভিন্ন জেলার শ্রমিকেরা যেমন আছেন, তেমনই অনেকের গন্তব্য ঝাড়খণ্ড, ওড়িশা বা বিহারও। জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ বা স্থানীয় গ্রামের মানুষজন বিচ্ছিন্ন ভাবে তাঁদের খাবার বা জল দেওয়ার চেষ্টা করছেন।

এ বার ওই শ্রমিকদের ঝুঁকি নিয়ে ঘরে ফেরাটাই আটকাতে চাইছেন জেলা প্রশাসনের কর্তারা। কারণ, সড়কপথে গাড়ি কম চললেও রেলপথে মালগাড়ি চলছে। চলছে বিশেষ ট্রেনও। গত শনিবারই জেলাশাসক ওয়াই রত্নাকর রাওয়ের কাছে এক আবেদনে জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব জানিয়েছিলেন, ওই শ্রমিকদের সুষ্ঠু ভাবে বাড়ি পৌঁছতে প্রশাসন নির্দিষ্ট পদক্ষেপ করুক। না হলে ফের কোনও বড় বিপদ ঘটে যেতে পারে। প্রশাসন অবশ্য সে দিনই উদ্যোগী হয়। ডানকুনি স্টেশনেও রেল পুলিশ নজরদারি বাড়ায়। জেলা তৃণমূল সভাপতি দিলীপ যাদব বলেন, ‘‘আমরা জেলাশাসককে অনুরোধ করি, যাতে ভবিষ্যতে এখানে ঔরঙ্গাবাদের মতো আর দুর্ঘটনা না-ঘটে। বিপদ এড়াতে এখনই কিছু ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।’’

সোমবারই শিলিগুড়ির মাটিগাড়া থেকে ওড়িশা যাওয়ার পথে প্রশান্ত পারিদা নামে এ শ্রমিককে ডানকুনি টোলপ্লাজ়ার কাছে পুলিশ থামায়। প্রশান্ত বলেন, ‘‘আমি হেঁটে এবং গাড়িতে এতদূর এসেছি। পুলিশ আটকানোয় আমি পুলিশকে অনুরোধ করেছি, খড়্গপুর পৌঁছে দিতে।’’ একই ভাবে এ দিনই ঝাড়খণ্ডে ফেরার পথে প্রমোদ দাসকেও আটকায় পুলিশ। তিনি বলেন, ‘‘পুলিশকে বলেছি, কিছু একটা ব্যবস্থা করতে। এতদিন নরেন্দ্রপুরে আটকে ছিলাম।’’

প্রশাসন অবশ্য সব শ্রমিককে নিরাপদে বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে।

Migrant Labourers Police Accident
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy