শোকার্ত নিহতের পরিজনেরা। ছবি: সঞ্জীব ঘোষ
আট দিনের ব্যবধানে দু’টি রাজনৈতিক খুন। বিধানসভা ভোট যত এগিয়ে আসছে, আরামবাগ মহকুমার সাধারণ মানুষ ফের আতঙ্কে ভুগতে শুরু করেছেন।
গত ৬ অগস্ট আরামবাগের ঘোলতাজপুরে তৃণমূলের গোষ্ঠী-সংঘর্ষে খুন হন যুবকর্মী শেখ ইসরাইল খান। শনিবার, স্বাধীনতা দিবসের সকালে জাতীয় পতাকা তোলাকে কেন্দ্র করে খানাকুলের নতিবপুর-২ পঞ্চায়েত এলাকার সাজুরঘাটে গোলমালের জেরে পিটিয়ে-কুপিয়ে খুন করা হল বিজেপির মণ্ডল সভাপতি সুদর্শন পরামাণিককে। এ ক্ষেত্রে অভিযোগের তির তৃণমূলের দিকে।
বহু সাধারণ মানুষের আশঙ্কা, বিধানসভা ভোট যত এগিয়ে আসবে, এ ভাবে মহকুমায় রাজনৈতিক হিংসারও পারদ চড়বে। প্রতিবার ভোটের আগে যে ছবি দেখতে দেখতে তাঁরা ক্লান্ত, বিরক্ত, হতাশ এবং আতঙ্কিত। তা শাসকদলের গোষ্ঠী-সংঘর্ষই হোক বা বিরোধীদের সঙ্গে আকচাআকচির জের। গত লোকসভা নির্বাচনের পর মহকুমায় বিজেপি প্রভাব বিস্তার করা থেকেই রাজনৈতিক খুন আর সন্ত্রাস বন্ধ নেই বলে মানুষের অভিযোগ। গত লোকসভা নির্বাচনের পর থেকে এখনও পর্যন্ত মোট ৮ জন রাজনৈতিক হিংসায় বলি হলেন। নিছক পারিবারিক বিবাদও এখানে রাজনৈতিক রং নিয়ে রক্ত ঝরাচ্ছে বলে পুলিশেরও দাবি।
এলাকায় সংগঠনের ভিত মজবুত করার ‘অপরাধে’ই সুদর্শনকে পরিকল্পনা করে খুন করা হল বলে স্থানীয় বিজেপি নেতৃত্বের দাবি। তাঁরা বলছেন, না হলে শুধুমাত্র পতাকা উত্তোলন নিয়ে বচসার জেরে ওই ভাবে খুন হতে হত না সুদর্শনকে। তাঁরা জানাচ্ছেন, রাস্তা সংস্কারের দাবিতে একাধিকবার ক্ষোভ-বিক্ষোভ, পথ অবরোধে নেমেছেন সুদর্শন। আমপান ক্ষতিপূরণ-সহ সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পে শাসকদলের দুর্নীতির প্রতিবাদে পঞ্চায়েত ঘেরাও কিংবা ব্লক অফিসে স্মারকলিপি দেওয়ার ক্ষেত্রেও প্রথম সারিতে থাকতেন তিনি।
বিজেপির আরামবাগ সাংগঠনিক জেলা সভাপতি বিমান ঘোষ বলেন, “সুদর্শন নিজের এলাকা ছাড়াও জেলায় যেখানে যা কর্মসূচি থাকত, প্রথম সারিতে থাকতেন। গত লোকসভা ভোটেও খানাকুল বিধানসভা এলাকায় তৃণমূলের ভোট ১৪ হাজারে নামিয়ে আনার ক্ষেত্রেও তাঁর ভূমিকা ছিল। তাই পরিকল্পনা করে তৃণমূল খুন করল।’’ তৃণমূল প্রথম থেকেই এই খুনের অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
সুদর্শন রাজমিস্ত্রির জোগাড়ের কাজ করতেন। বাবা লক্ষ্মণ পরামাণিক বহুদিন নিখোঁজ। মা, স্ত্রী মামণি এবং এক মেয়ে ও এক ছেলেকে নিয়ে তাঁর সংসার ছিল। মা ও স্ত্রী দিনমজুরি করেন। মামণির অভিযোগ, “দুর্নীতির প্রতিবাদ করত বলে তৃণমূলের কয়েকজন স্বামীকে অনেকদিন ধরেই হুমকি দিচ্ছিল। তাদের পরিষ্কার করা জায়গায় জাতীয় পতাকা তোলার জন্য খুন করল ওঁকে। আমরা পুরো পরিবারটাই বিপদে পড়ে গেলাম।’’
নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে পুলিশের কাছে তৃণমূলের ১৮ জনের নামে খুনের অভিযোগ দায়ের করেছেন। শনিবার রাতেই পুলিশ ছ’জনকে (আজারউদ্দিন মল্লিক, আলি হোসেন মল্লিক, মহম্মদ গোলাম, গৌতম মান্না, জলধর হাজরা এবং কালীপদ কোটাল) গ্রেফতার করে।
ময়নাতদন্তের পরে রবিবার সন্ধে সাড়ে ৬টা নাগাদ নেতার মৃতদেহ গ্রামে ফেরে। অশান্তির আশঙ্কায় বিশাল পুলিশ বাহিনী মোতায়েন করা হয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy