Advertisement
১৯ মে ২০২৪
তারকেশ্বরে শ্রাবণী মেলা

বেলাগাম দূষণেও নির্বিকার প্রশাসন

নানা সমস্যার অভিযোগ মাঝেমধ্যেই উঠছিল। সে সবের দাওয়াইয়ের কথাও বলা হচ্ছিল সরকারের বিভিন্ন স্তরে। কিন্তু তা যে নেহাতই কথার কথা, শ্রাবণী মেলাকে কেন্দ্র করে তারকেশ্বরের দূষণচিত্রই তার প্রমাণ।

দুধপুকুরে দূষণ (বাঁদিকে)। মন্দিরের পথে প্লাস্টিকের ছড়াছড়ি। ছবি: দীপঙ্কর দে।

দুধপুকুরে দূষণ (বাঁদিকে)। মন্দিরের পথে প্লাস্টিকের ছড়াছড়ি। ছবি: দীপঙ্কর দে।

গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ০৩ অগস্ট ২০১৬ ০৩:০৭
Share: Save:

নানা সমস্যার অভিযোগ মাঝেমধ্যেই উঠছিল। সে সবের দাওয়াইয়ের কথাও বলা হচ্ছিল সরকারের বিভিন্ন স্তরে। কিন্তু তা যে নেহাতই কথার কথা, শ্রাবণী মেলাকে কেন্দ্র করে তারকেশ্বরের দূষণচিত্রই তার প্রমাণ।

শ্রাবণী মেলাকে ঘিরে শুধু এ রাজ্য নয়, ভিন রাজ্য থেকেও লাখ লাখ পুণ্যার্থী এখন শৈব্যতীর্থ তারকেশ্বরমুখী। শেওড়াফুলির নিমাইতীর্থ ঘাট থেকে গঙ্গার জল নিয়ে হেঁটে ভক্তরা পাড়ি দিচ্ছেন তারকেশ্বরে। যাত্রাপথে যাতে পানীয় জল বা খাবারের কোনও সমস্যা না হয় সে জন্য বহু স্বেচ্ছাবেসী সংস্থা ভান্ডারা খুলেছে। দুধপুকুর লাগোয়া তারকেশ্বর মন্দির চত্বরে নিত্য লাখো ভক্ত সমাগম। এই আবহে পরিবেশবিদদের মত, যাত্রাপথে একাধিক ভান্ডারার পাশাপাশি মন্দির চত্বরে প্রচুর ভক্তের ভিড়ের জোড়া ধাক্কায় দূষণ নিয়ন্ত্রণ শিকেয় উঠেছে। মেলা-মন্দিরকে ঘিরে প্লাস্টিকের রমরমা।

অথচ মন্দির লাগোয়া দুধপুকুরকে দূষণমুক্ত রাখতে হুগলির জেলা জজের নির্ধারিত কমিটির নির্দিষ্ট গাইড লাইন রয়েছে। দুধপুকুর-সহ গোটা মন্দির চত্বরকে কী ভাবে দূষণমুক্ত রাখতে হবে তা নিয়ে নানা নির্দেশিকাও রয়েছে। কিন্তু সে সব বিধি মানা হচ্ছে না বলেই বিভিন্ন মহলের অভিমত।

কয়েক বছর আগে বিচারপতি ভগবতীপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতা হাইকোর্টকে জানিয়েছিলেন, তারকেশ্বরের দুধপুকুর-সহ গোটা মন্দির চত্বর ভয়াবহ দূষণের কবলে। সেই সময় আদালত সরকারকে নির্দেশ দেয় তারকেশ্বরের পরিস্থিতি দ্রুত জানাতে হবে আদালতকে। সরকার নির্ধারিত একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি তৈরি হয় দুধপুকুরের অবস্থা খতিয়ে দেখতে। কমিটি সরকারকে জানায়, বিচারপতির উদ্বেগ যুক্তিযুক্ত। দুধপুকুরের দূষণ মাত্রাছাড়া।

এরপরই দুধপুকুর-সহ গোটা এলাকাকে দূষণমুক্ত করতে হাইকোর্ট রাজ্য সরকারকে নির্দেশ দেয়। সেই সময় রাজ্যের বাম সরকার আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী কাজ শুরু করে। বিশেষ়জ্ঞ কমিটি তৈরি হয়। জনস্বাস্থ্য-কারিগরি দফতর দুধপুকুরকে দূষণমুক্ত করতে প্রকল্প তৈরি করে। খরচ হয় বেশ কয়েক লক্ষ টাকা। ঠিক হয়, শিবলিঙ্গের মাথায় ভক্তেরা যে জল ও দুধ ঢালেন তা সরাসরি পুকুরে গিয়ে পড়বে না। মন্দির চত্বরে জলদূষণ নিয়ন্ত্রণে যন্ত্র বসানো হবে। ভক্তদের ঢালা দুধ ও জল ওই যন্ত্রে পড়বে। তারপর তা দূষণমুক্ত হয়ে পুকুরে মিশবে। এতে পুকুরের দূষণমাত্রা বাগে আনা যাবে।

সেই সময় বহু বাড়ির নিকাশি নালা সরাসরি দুধপুকুরের সঙ্গে যুক্ত ছিল। ফলে সেই ভাবেও জলের দূষণের মাত্রা বাড়ছিল। দুধপুকুরে স্নান, বাসন মাজা, জামা কাপড় কাচা চলত অবাধে। শৌচাগার কম থাকায় অনেকে পুকুরেই শৌচকর্ম করতেন। মন্দির চত্বরে প্লাস্টিকের উপর কোনও নিয়ন্ত্রণ ছিল না। আদালতের হস্তক্ষেপে সেই পরিস্থিতি অনেকটাই বদলায়।

কিন্তু সম্প্রতি ফের নানা মহল থেকে দুধপুকুর এবং সংলগ্ন এলাকা মারাত্মক দূষণের কবলে বলে অভিযোগ উঠছিল। মাস কয়েক আগে জেলা জজ বিষয়টি খতিয়ে দেখে সংশ্লিষ্ট কমিটিকে ব্যবস্থা নিতে বলেন। কমিটি ঠিক করে, দুধপুকুর এবং তারকেশ্বর চত্বরে হোর্ডিং লিখে মানুষকে সচেতন করা হবে। দুধপুকুর দূষণমুক্ত রাখতে পদক্ষেপ করা হবে। জনস্বাস্থ্য-কারিগরি দফতরের যে প্রকল্প জলদূষণ নিয়ন্ত্রণ করত তা ফের চালু করা হবে।

প্রসঙ্গত, বিশেষ়জ্ঞ কমিটির সদস্য পরিবেশবিদ বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায় আগেও দুধপুকুরকে দূষণমুক্ত করতে কাজ করেছিলেন। মঙ্গলবার তিনি বলেন, ‘‘দুধপুকুরকে ফের দূষণমুক্ত করতে কমিটি যে নির্দেশিকা জারি করেছিল, তাতে কোনও কাজই হয়নি। এমন কী পুকুরের জল দূষণমুক্ত করতে জনস্বাস্থ্য-কারিগরি দফতরের প্রকল্পটি পর্যন্ত চালু হয়নি। ফলে দূষণ পরিস্থিতি একই থেকে গিয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

pollution government
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE