Advertisement
E-Paper

বড়ি গোঁজা ঘরের চালে

ঘরের চালে গোঁজা আয়রন ট্যাবলেটের স্ট্রিপ! ফলিক অ্যাসিডের ট্যাবলেটেরও ঠাঁই সেখানেই!

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২৫ জানুয়ারি ২০১৯ ০০:৪৩

ঘরের চালে গোঁজা আয়রন ট্যাবলেটের স্ট্রিপ! ফলিক অ্যাসিডের ট্যাবলেটেরও ঠাঁই সেখানেই!

হুগলির আরামবাগ মহকুমার বিভিন্ন জায়গায় গর্ভবতী মহিলাদের পরিচর্যার কাজে গিয়ে এমনই অভিজ্ঞতা আশাকর্মীদের।

সরকারি হাসপাতাল বা স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে নিখরচায় ওই ওষুধ মিললেও সচেতনতার অভাব আর দায়সারা মনোভাবের জন্য আরামবাগ-সহ জেলার কিছু এলাকার গর্ভবতীদের অনেকেই ওই ওষুধ খান না বলে মানছেন স্বাস্থ্যকর্তারাও। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক শুভ্রাংশু চক্রবর্তীর কথায়, ‘‘দুই ট্যাবলেট জোগানের অভাব নেই। অভাব সচেতনতায়। খানাকুল, গোঘাট, জাঙ্গিপাড়া, বলাগড়ের মতো প্রত্যন্ত জায়গাতেও বাড়ি বাড়ি যান আমাদের দফতরের মেয়েরা। স্থানীয় পঞ্চায়েতকেও সঙ্গে নেওয়া হয়। সচেতনতা শিবিরে বার বার বলেও গর্ভবতীদের মধ্যে ওষুধ খাওয়ার ক্ষেত্রে অনীহা থাকছে।’’

রাজ্যের প্রসূতি-স্বাস্থ্য নিয়ে কেন্দ্রীয় রিপোর্টে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। ন্যাশনাল হেল্‌থ প্রোফাইল ২০১৮’-র ওই রিপোর্ট জানাচ্ছে, রাজ্যের ৭১.৯ শতাংশ প্রসূতি আয়রন ও ফলিক অ্যাসিডের ট্যাবলেট পান না। হুগলির বহু গর্ভবতী মহিলা যে শুধুমাত্র সচেতনতার অভাবে ওই দুই ট্যাবলেট খাচ্ছেন না, তা মানছেন জেলা স্বাস্থ্যকর্তারা। ফলে, তাঁদের শারীরিক সমস্যা থাকছেই।

বিভিন্ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রের কর্মীরা জানান, গর্ভবতীদের জরুরি প্রয়োজনীয়তার কথা জানিয়ে ওষুধ দেওয়া হয়। কিন্তু অনেকেই বাইরে থেকে কিনে খাবেন জানিয়ে তা নেন না। আরামবাগের হরিণখোলা-১ পঞ্চায়েত এলাকার আশাকর্মী আবিদা খাতুনের খেদ, ‘‘ওষুধের গুণাগুনের কথা বলা হলেও অনেক মহিলা বোঝেনই না যে, এই ওষুধ তাঁদের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ।’’ আরামবাগ মহকুমার এক স্বাস্থ্যকর্তা বলেন, ‘‘প্রচুর ওষুধ নষ্ট হয়।’’

স্বাস্থ্যকর্তারা জানাচ্ছেন, ওষুধ না-খাওয়ার এই প্রবণতা শহরেও কম নয়। সেই কারণে গ্রাম-শহর সর্বত্রই নিয়মিত সচেতনতা শিবির করা হয়। ব্লক ভিত্তিক ‘হেল্‌থ অ্য়ান্ড মাদার কেয়ার’ (স্বাস্থ্য এবং মায়েদের সচেতনতা) শিবির করা হয় সপ্তাহে তিনটি করে। শহরাঞ্চলে এই কাজ হয় ‘আবরান মিশন’ প্রকল্পের আওতায়। পঞ্চায়েতে স্বাস্থ্য দফতর এবং আশা প্রকল্পের মেয়েদের এই কাজে লাগানো হয়। প্রতি দলে চার জন থাকেন। স্বাস্থ্য দফতরের এক জন কর্মীর সঙ্গে তিন জন আশাকর্মী থাকেন। স্লাইড শো-এর মাধ্যমেও মহিলাদের বোঝানো হয়। শহরে কাজ করেন স্বাস্থ্যকর্মীরা।

শ্রীরামপুর ওয়ালশ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অবশ্য জানান, এখানে পরীক্ষার জন্য আসা গর্ভবতীরা আয়রন ট্যাবলেট বা ফলিক অ্যাসিড খাওয়া নিয়ে যথেষ্ট সচেতন। হাসপাতালের এক কর্তার কথায়, ‘‘ওষুধ না-খেলে রক্তাল্পতা বা গর্ভস্থ শিশুর সমস্যা হতে পারে, এটা বুঝেই তাঁরা আপত্তি করেন না।’’ আগে সমস্যা থাকলেও সচেতনতা শিবিরে কাজ হচ্ছে বলে দাবি করেছেন শ্রীরামপুর পুরসভার এক স্বাস্থ্যকর্মী।

হাওড়া জেলা স্বাস্থ্যকর্তারা দাবি করেছেন, এখানে প্রসূতি-স্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বেগের কোনও কারণ নেই। শুধু আয়রন ট্যাবলেট দেওয়াই নয়, তাঁরা তা খাচ্ছেন কিনা, সেটাও তাঁদের বাড়ি গিয়ে পরীক্ষা করে দেখা হয়। ওষুধের গুণমানও নিয়মিত পরীক্ষা করা হয়। মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ভবানী দাস বলেন, ‘‘সন্তানসম্ভবারা ঠিক আছেন কিনা, সে দিকে আমাদের সজাগ দৃষ্টি থাকে। আশাকর্মীরা নিয়মিত এ বিষয়ে রিপোর্ট দেন। গাফিলতির কোনও সুযোগ নেই।’’

কিন্তু চিকিৎসকদের একাংশ মনে করছেন, এই জেলায় এ নিয়ে সচেতনতা প্রচারে এখনও খামতি রয়ে গিয়েছে। অনেক প্রসূতি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গিয়ে ওই ওষুধ আনলেও খেতে চান না। কারণ, তাঁরা এর প্রয়োজনীয়তা বুঝতে পারেন না। উলুবেড়িয়া শহরের স্ত্রী-রোগ বিশেষজ্ঞ সুশান্ত মাইতি বলেন, ‘‘আমার কাছে প্রতিদিন গড়ে ৩০ জন সন্তানসম্ভবা আসেন। সকলের স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কার্ড করানো আছে। তাঁরা উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে আয়রন ট্যাবলেট নেন। কিন্তু খেতে চান না। কারণ, তাঁদের ঠিকমতো বোঝানো হয় না। তখন তাঁদের বিকল্প ওষুধ দিতে হয়।’’

Iron Tablet Pregnant Woman
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy