Advertisement
E-Paper

জেলই নিরাপদ আশ্রয় ‘নামজাদা’ অপরাধীদের

পুলিশ বলছে, জেলে বসে মামলা লড়ার একটা বড় খরচ থাকে। তা ছাড়া, এই সব অপরাধীরা তোলাবাজির জীবনেই অভ্যস্ত হয়ে যায়। ফলে, টাকার প্রয়োজন থাকেই। তাই নিজেদের নাম খাটিয়ে জেলে বসে দলবলকে কাজে লাগিয়ে চালিয়ে যায় তোলাবাজি।

গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২২ জানুয়ারি ২০১৮ ০৩:১১
—প্রতীকী চিত্র।

—প্রতীকী চিত্র।

কাদা মাখা দু’পায়ে ছেলেটা রীতিমতো মুন্সিয়ানার সঙ্গে ‘ড্রিবল’ করছিল। সারা শরীরে এত কাদা যে, পরিচিত পুলিশ আধিকারিক ঠাহর করতে পারেননি। হুগলি জেলের ভিতরের মাঠে বন্দিদের খেলা দেখে থমকে দাঁড়ান তিনি। সহকর্মী সম্বিত ফেরান— ‘‘স্যার, ওই তো নেপু গিরি।’’ সে দিনের সেই ফুটবল আজও ভোলেননি ওই পুলিশ কর্তা।

একদিন এক মামলার তদন্তে ওই পুলিশ আধিকারিক আদালতের অনুমতিতে জেলে ঢুকে কথা বলেছিলেন নেপুর সঙ্গে। ঠান্ডা মাথায় সে দিন প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর দিয়েছিল নেপালি যুবকটি। গত সপ্তাহে সেই পুলিশ আধিকারিকই হতভম্ব — ক্রমাগত ইটবৃষ্টি আর লকলকে আগুনের সামনে দাঁড়িয়ে ভেবেছিলেন, এ সবের পিছনেও সেই আশ্চর্য ‘ড্রিবল’ করা নেপু!

জেলের ভিতর বন্দিরা ঠিক কী করে, কী ভাবে করে— সে সব নিয়ে সাধারণ মানুষের উৎসাহের অন্ত নেই! কিন্তু বাস্তবটা বড় গোলমেলে। আপাত সংশোধনের মোড়কে সংশোধনাগারকে যে, কার্যত ঘাঁটি বানিয়ে ফেলে ‘দাগী’রা, তার প্রমাণ স্বয়ং নেপু— বলছেন পুলিশেরই একাংশ।

সাধারণত, গুনতির পর সেলের বাইরে ঘোরাফেরা করতে দেওয়া হয় বন্দিদের। তার মধ্যে সাজাপ্রাপ্তরা খানিকটা থিতু। নিয়ম মাফিক কিছু কাজ করতে হয়। কিন্তু বিচারাধীন বন্দিদের ঘুরতে হয় আদালত চত্বরে।

পুলিশ কর্মীদের একাংশ জানান, পুরনো অপরাধীদের ক্রমাগত বিভিন্ন মামলায় এক আদালতের থেকে অন্য আদালতে ঘুরতে হয় তাদের। আর তাতেই তাদের মধ্যে অন্য ধরনের একটা মনোবল তৈরি হয়। অপরাধ যাদের পেশা, তারা জেলের ভিতরে থেকেও ছক কষে চলে পরবর্তী অপরাধের। জেলে বসেই নাম ভাঙিয়ে নেওয়ার সুযোগ থাকে ‘নামজাদা’ অপরাধীদের।

‘‘হুগলি জেলের অন্দরে থাকা নেপু বা আক্রমদের মতো দুষ্কৃতীরা অন্ধকার গারদকেই টাকশাল বানিয়ে ফেলেছে’’, বললেন এক পুলিশ কর্মী। কিন্তু কী ভাবে?

পুলিশ বলছে, জেলে বসে মামলা লড়ার একটা বড় খরচ থাকে। তা ছাড়া, এই সব অপরাধীরা তোলাবাজির জীবনেই অভ্যস্ত হয়ে যায়। ফলে, টাকার প্রয়োজন থাকেই। তাই নিজেদের নাম খাটিয়ে জেলে বসে দলবলকে কাজে লাগিয়ে চালিয়ে যায় তোলাবাজি। সে ক্ষেত্রে জেলের ভিতরে থাকাটাকেই বেশি নিরাপদ বলে মনে করে তারা। কারণ বাইরে থাকলে বিরুদ্ধ গোষ্ঠীর সঙ্গে লড়াই প্রাণহানির আশঙ্কা থেকেই যায়। তার চেয়ে জেলের নিশ্চিন্ত জীবনে কাজ করা অনেক সহজ হয়ে যায়।

হাওড়ার বালি-বেলুড় থেকে হুগলির ডানকুনি শিল্পাঞ্চল ছুঁয়ে একেবারে উত্তরপাড়া হয়ে চুঁচুড়া, চন্দননগর— প্রোমোটারদের রমরমা। সেই সুযোগটাই গারদের ভিতরে থেকে চেটেপুটে খাচ্ছে নেপুরা।

ধরা না পড়া, বা জামিনে ছাড়া পাওয়া শাগরেদরা প্রোমোটারের ডেরায় গিয়ে সরাসরি হিসেব চাইছে। প্রতি বর্গফুট মেপে টাকা চাইছে আক্রমদের অল্প বয়সী এজেন্টরা।

না দিলে? প্রথমে মার। তারপর ভাঙচুর। আর বখরায় কমতি হলেই কিন্তু বোমা, গুলি— ঝাঁঝরা বুকের পাঁজর। কিছুদিন আগেই যেমনটা হয়েছিল কোন্নগরে নবগ্রামে।

Prison Jail criminal Crime চুঁচুড়া
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy