Advertisement
E-Paper

জল সঙ্কটের আশঙ্কায় হাওড়া

হাওড়া জেলায় জলের স্তর সাধারণত ৬০০ ফুট থাকে। কিন্তু এইটুকু গরমেই তা ৩০ ফুট নেমে গিয়েছে বলে প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে। বাসিন্দাদের অভিযোগ, ওই সব নলকূপ থেকে পর্যাপ্ত জল উঠছে না।

নুরুল আবসার

শেষ আপডেট: ১৮ এপ্রিল ২০১৮ ০১:৪৯
অপেক্ষা: জলের জন্য লাইন। ডোমজুড়ে। নিজস্ব চিত্র

অপেক্ষা: জলের জন্য লাইন। ডোমজুড়ে। নিজস্ব চিত্র

জল সঙ্কটের আশঙ্কায় ত্রস্ত হাওড়া জেলার গ্রামীণ এলাকাও। ক্যালেন্ডারের পাতায় গ্রীষ্মকাল আসকে না আসতেই জলস্তর নামতে শুরু করেছে। ভয় পাচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

গ্রামাঞ্চলে সাধারণত পানীয় জল মেলে দু’ভাবে। প্রথমত, জনস্বাস্থ্য কারিগরি বিভাগের জল, যা আসে স্ট্যান্ডপোস্টের মাধ্যমে পাড়ায় পাড়ায়। আর আছে নলকূপ। গরমে সমস্যা দেখা দেয় নলকূপগুলির ক্ষেত্রেই।

হাওড়া জেলায় জলের স্তর সাধারণত ৬০০ ফুট থাকে। কিন্তু এইটুকু গরমেই তা ৩০ ফুট নেমে গিয়েছে বলে প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে। বাসিন্দাদের অভিযোগ, ওই সব নলকূপ থেকে পর্যাপ্ত জল উঠছে না। অনেক নলকূপ আবার পুরোপুরি বিকল। সেগুলির বদলে নতুন নলকূপ করার বসানো ছাড়া উপায় নেই। জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে টাকা বরাদ্দ হলেও নির্বাচনী বিধি বলবৎ হয়ে যাওয়ার সেটা করা যাচ্ছে না।

এমনিতে নলকূপের ছোটখাট মেরামতির কাজ করার জন্য পঞ্চায়েতগুলির হাতে টাকা দেওয়া থাকে। তবে একেবারে খারাপ হয়ে গেলে নতুন নলকূপ বসানো ছাড়া উপায় নেই। অনেক পঞ্চায়েত সমিতি দাবি করেছে, তারা আগে ভাগেই ব্যবস্থা নিয়ে রেখেছে। পাঁচলা পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি আবদুল জলিল বলেন, ‘‘আমরা গত নভেম্বরেই বেশ কয়েকটি নতুন নলকূপ তৈরি করেছি। তবে এই মুহূর্তে আবার কোনও নলকূপ খারাপ হলে চটজলদি তা করা সম্ভব নয়। নির্বাচনী আচরণবিধি এখনও বহাল।’’

শ্যামপুর ১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি রঞ্জিত বেরাও বলেন, ‘‘গ্রীষ্মকালে যে এমন হবে তা তো জানাই ছিল। অনেক আগে থেকেই আমাদের প্রস্তুতি রয়েছে। নলকূপ মেরামতির পর্যাপ্ত টাকা পঞ্চায়েতগুলিতে দেওয়া আছে।’’ পাঁচলা বা শ্যামপুর ১ পঞ্চায়েত সমিতির সমস্যা অবশ্য খুব একটা প্রকট হবে নয়। কারণ পাঁচলায় কলকাতা মেট্রোপলিটন স্যানিটেশন অথরিটি (কেএমডব্লিউএসএ) এবং শ্যামপুর ১ ব্লকে জনস্বাস্থ্য কারিগরি বিভাগও জল সরবরাহ করে।

কিন্তু এমন অনেক গ্রাম আছে যেখানে কেএমডব্লিউএসএ বা জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের কোনও জল সরবরাহ ব্যবস্থা নেই। সেখানে ভরসা শুধুমাত্র নলকূপ। গ্রীষ্মকালে জলের স্তর নেমে যাওয়ায় সেইসব গ্রামের মানুষই বেশি করে সমস্যায় পড়েছেন। তার উপর ভোট নিয়ে সমস্যা। ১ মে ভোট হবে কিনা তা নিয়েই সংশয় তৈরি হয়েছে। অথচ, এখনও বহাল রয়েছে নির্বাচনী আচরণ বিধি। ভোট কবে শেষ হবে, তারপর কাজ হবে নলকূপের। এ সব নিয়েই চিন্তিত বাসিন্দারা।

আমতা-১ ব্লকের রসপুর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের কোনও জলের পাম্প নেই। এখানে নলকূপই ভরসা। একই হাল ডোমজুড়ের দক্ষিণ ঝাঁপড়দহ পঞ্চায়েত এলাকায়। রসপুরে ১১০টি নলকূপ আছে। জলস্তর নেমে যাওয়ায় অর্ধেকের বেশি নলকূপে পর্যাপ্ত জল আসে না। পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে মেরামত করা হচ্ছে কিন্তু ফের এক সপ্তাহের মধ্যে তা বিকল হয়ে যাচ্ছে। উপপ্রধান জয়ন্ত পোল্যে বললেন, ‘‘আমাদের এলাকায় শুধু নলকূপের উপরে ভরসা করতে হয়। জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের পাম্প থাকলে এই অসুবিধা হত না।’’

দক্ষিণ ঝাঁপড়দহে প্রায় ২০০ নলকূপ। জলস্তর নেমে যাওয়ায় নলকূপগুলি বিকল হতে শুরু করেছে। এখানেও সমস্যা সেই বিকল্প জলের ব্যবস্থা না থাকা। গরম পড়ার সঙ্গে সঙ্গে এমন পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে জেলার বিভিন্ন গ্রামে।

জেলা পরিষদের জনস্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষ সীতানাথ ঘোষ বলেন, ‘‘জলের স্তর নেমে যাওয়ায় পানীয় জলের সমস্যা দেখা দেয় প্রতিবারই। সেই কারণে আমরা জেলার বিভিন্ন গ্রামে ১৩৫টি নতুন নলকূপ বসানোর জন্য পরিকল্পনা করেছি। টেন্ডারও হয়ে গিয়েছে। কিন্তু বরাত দেওয়ার আগেই নির্বাচনী আচরণবিধি বলবৎ হয়। ফলে আমাদের হাত পা বাঁধা।’’ রসপুর বা দক্ষিণ ঝাঁপড়দহের মত যে সব গ্রামে জনস্বাস্থ্য কারিগরি বিভাগের পানীয় জলের ব্যবস্থা নেই, সেখানে খুব শীঘ্র তা করা যাবে বলে সীতানাথবাবু জানান।

Public Water Crisis
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy