স্মৃতি: রাজু রাউতের ছবি নিয়ে পরিজনরা। নিজস্ব চিত্র
সে দিন ছিল রজনীর আট বছরের জন্মদিন। সন্ধে বেলা যখন অনুষ্ঠান শুরু হবে, তখনই এসেছিল খবরটা— দুপুরেই মাওবাদীদের পাতা মাইন বিস্ফোরণে উড়ে গিয়েছে সিআরপি-র কনভয়। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয়েছিল বছর তিরিশের জওয়ান রাজু রাউতের— রজনীর ‘পাপা’।
হুগলির সাহাগঞ্জে ডানলপের কর্মী আবাসনে রাউত পরিবারে তারপর থেকে আর কোনও অনুষ্ঠান হয়নি। ২০১৪ সালের ৯ ফেব্রুয়ারির সেই স্মৃতি আরও একবার উস্কে দিয়েছে বৃহস্পতিবার কাশ্মীরের পুলওয়ামায় সেনা কনভয় জঙ্গিহানার ঘটনা।
শুক্রবার ব্যান্ডেলের সাহাগঞ্জে রাজু রাউতের বাড়ি গিয়ে দেখা মিলল তাঁর বৃদ্ধ বাবা বাবুলাল রাউতের। বাবুলাল ছিলেন ডানলপ কর্মী। কারখানা বন্ধের পরই কাজ খুঁজতে শুরু করেন ছেলে রাজু। ডাক আসে সেনাবাহিনী থেকে। ২০০৩ সালে সিআরপি-র ২১৯ নম্বর ব্যাটেলিয়নে যোগ দিয়েছিলেন তিনি। ছত্তিসগঢ়ের সুকমাতেই কর্মরত ছিলেন।
২০১৪ সালেই জানুয়ারি মাসে বাড়ি ফিরেছিলেন রাজু। পরিবারের সঙ্গে মেয়ের জন্মদিনের সব কেনাকাটা সেরে রেখে ফের যোগ দিয়েছিলেন কাজে। আর ঘটনাচক্রে মেয়ের জন্মদিনের দিনই মাওবাদী হানায় প্রাণ গিয়েছিল তাঁর। রজনী এ দিন বলে, ‘‘সে দিন তো পাপা সকালে ফোন করেছিল। আমার মনে আছে। জন্মদিন বলে ফোনেই আদর করেছিল অনেক।’’ তারপর ঠিক কী হয়েছিল, তা রজনী জেনেছে মায়ের কাছে। ঠাকুরদার মুখে শুনেছে মাওবাদীরা মেরে ফেলেছে তার বাবাকে। ঘটনাটা বুঝতে সময় লেগেছে অনেক। হয়তো ১৩ বছরের কিশোরী এখনও ঠিকঠাক উপলব্ধি করতে পারেনি। তবে বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে টিভির পর্দায় ভেসে ওঠা আরও এক জঙ্গিহানার খবর নাড়িয়ে দিয়েছে তাকে। তার প্রশ্ন, ‘‘সব জায়গায় কেন এ রকম হয়?’’
গত পাঁচ বছরে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ জমেছে রাউত পরিবারে। বাবুলাল বলেন, ‘‘স্ত্রী, পুত্রবধূ, নাতি-নাতনিকে নিয়ে পাঁচ জনের সংসার। এই বয়সে বেসরকারি এক সংস্থায় ছোট একটা কাজ করি। সরকারি আশ্বাস ছিল। কিন্তু লাভ হয়নি।’’ রাজুর স্ত্রী নীলম বলেন, ‘‘সে সময় রাজ্য সরকার বলেছিল আমাকে একটা চাকরি দেওয়া হবে। তা তো পাইনি।’’ আর্থিক সাহায্যও তেমন মেলেনি বলে দাবি পরিবারের।
তবে এ সব কিছুর বাইরে রাজুর পরিবার চায় সেনাবাহিনীর নিরাপত্তা। নীলম বলেন, ‘‘যাঁরা দেশ রক্ষার কাজ করেন, তাঁদের নিরাপত্তার কথাও ভাবুক দেশ।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy