অভিযান: খুলে দেওয়া হচ্ছে বেআইনি হোর্ডিং। মঙ্গলবার, বালিতে। নিজস্ব চিত্র
একই শহরে দুই চিত্র!
গত আর্থিক বছরে শহরের এক প্রান্তে রাস্তার হোর্ডিং বাবদ যেখানে আয় হয়েছিল কয়েক কোটি টাকা, সেখানে শহরের আর এক প্রান্তে এখনও পর্যন্ত হোর্ডিং বাবদ আয় ‘শূন্য’। খোদ পুরকর্তাদের অভিযোগ, পুর বিধির তোয়াক্কা না করেই সেখানে রাস্তা জুড়ে রয়েছে বেআইনি হোর্ডিং ও ব্যানার।
এই অসামঞ্জস্য দেখে এ বার প্রশ্ন তুলেছেন খোদ পুর কর্তৃপক্ষ। তাঁদের প্রশ্ন, দিনের পর দিন পুরসভাকে অন্ধকারে রেখে কী ভাবে শহরের একটি প্রান্ত মুখ ঢাকছে হোর্ডিং-ব্যানারে? ব্যবসায়ীরা কাদের মদতে বুড়ো আঙুল দেখাচ্ছেন পুর নিয়মকে?
ঘটনাস্থল: হাওড়া পুরসভার বালি-বেলুড়-লিলুয়া অঞ্চল। ২০১৫ সালের শেষের দিকে হাওড়ার সঙ্গে সংযুক্ত হয়েছে বালি পুর এলাকা। কিন্তু এখনও পর্যন্ত ওই সমস্ত এলাকা থেকে হোর্ডিং-ব্যানার বাবদ এক টাকাও রাজস্ব আদায় করতে পারেনি পুরসভা। বিষয়টি নজরে আসতেই নড়েচড়ে বসেছেন পুর কর্তৃপক্ষ। আর তাই মঙ্গলবার সকাল থেকে মেয়র পারিষদ (হোর্ডিং) গৌতম চৌধুরীর উপস্থিতিতে বালি পুর এলাকায় জি টি রোড বরাবর বেআইনি হোর্ডিং, ব্যানার খুলে লোহার কাঠামো ভাঙার কাজ শুরু করলেন পুর কর্মীরা। বালিখাল থেকে শুরু হয়েছে কাজ। চলবে চার দিন ধরে।
গৌতমবাবু জানিয়েছেন, বাম বোর্ডের আমলে হাওড়া পুরসভায় হোর্ডিং-ব্যানার থেকে আয় হত মাত্র কয়েক লক্ষ টাকা। কিন্তু ২০১৬-’১৭ আর্থিক বছরে হাওড়ার ৫০টি ওয়ার্ড থেকে রাজস্ব এসেছে সাড়ে তিন কোটি টাকা। আর বালির ১৬টি ওয়ার্ডে আয় শূন্য। তিনি বলেন, ‘‘বালির হোর্ডিং থেকে ফি পেলে সাড়ে তিন কোটির বদলে কম করে পাঁচ কোটি টাকা রাজস্ব পেত পুরসভা।’’ তাঁর আরও দাবি, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গোটা শহরকে দৃষ্টিনন্দন করে তোলার নির্দেশ দিয়েছেন। সেখানে কারও কারও মদতে কোনও সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান যেখানে সেখানে বিশাল হোর্ডিং, ব্যানার লাগিয়ে দৃশ্যদূষণ করছে।
পুরসভার ডেপুটি অ্যাসেসর তমোনাশ মিত্র জানান, ইচ্ছামতো যেখানে খুশি হোর্ডিং কিংবা ব্যানার লাগানো যায় না। পুরসভার কাছে আবেদন করার পরে নির্দিষ্ট দফতর থেকে জায়গা পরিদর্শন করা হয়। এর পরে পুরসভা নির্দিষ্ট ফি নিয়ে তবেই অনুমতি দেয়। তিনি জানান, পুর নিয়মানুযায়ী ২০০ বর্গফুট হোর্ডিয়ের জন্য দিতে হয় বর্গফুট প্রতি ৭২ টাকা। আর দু’শোর বেশি হলে প্রতি বর্গফুটে ১৫২ টাকা। তবে এগুলি সবই আলোহীন হোর্ডিং। আবার ব্যানারের ক্ষেত্রে বর্গফুট প্রতি খরচ ৫২টাকা।
জি টি রোডে বালিখাল, নিমতলা, লালবাবা কলেজ, বেলুড় মঠ, বেলুড় বাজার, লিলুয়া-সহ সর্বত্রই বড় বড় হোর্ডিং। বাতিস্তম্ভ, গাছ থেকে ফুটপাথ— সবই ব্যানারের দখলে। কিছু হোর্ডিং-ব্যানার বাণিজ্যিক সংস্থার। এ ছাড়া রয়েছে স্থানীয় পুর প্রতিনিধি, ক্লাব, সামাজিক প্রতিষ্ঠানের ব্যানারও। গৌতমবাবু এ দিন বলেন, ‘‘সব থেকে বেশি বড় হোর্ডিং রয়েছে বেলুড় ও লিলুয়ায়। কেউ একটি ছোট জায়গায় কিছু ঘাস লাগিয়ে কয়েকটি মূর্তি বসিয়ে দিল আর সেখানে জনপ্রতিনিধির নাম লিখে হোর্ডিং লাগিয়ে দিল, এটা চলতে পারে না।’’ তাঁর আরও অভিযোগ, নিয়ম অনুযায়ী জনপ্রতিনিধিদেরও ব্যানার লাগাতে হলে পুরসভার অনুমতি নিতে হয়। কিন্তু বালির ক্ষেত্রে তা-ও কেউ করেন না। আবার তৎকালীন বালি পুরসভার হোর্ডিংয়ের দায়িত্বে থাকা উচ্চপদস্থ এক কর্মীর নামেও বেশ কয়েকটি হোর্ডিং রয়েছে বলে এ দিন জানতে পারেন পুরকর্তারা। ওই কর্মী এখন হাওড়া পুরসভার এক কর্তা।
এ দিন অভিযান চলার সময়েই গৌতমবাবুর কাছে এক হোর্ডিং ব্যবসায়ী ও বাড়ির মালিক এসে আবেদন জানান সেগুলি না খোলার জন্য। তাঁরা জানান, ছাদে হোর্ডিং লাগানোর জন্য বাড়ির মালিক বছরে ১৫ হাজার টাকা পান। আর ওই ব্যবসায়ী জানান, বালির এক নেতার অফিসের ছাদে হোর্ডিং লাগানোর জন্য বছরে ২০ হাজার টাকা দিতে হয়। সব শুনে অবাক গৌতমবাবু। তিনি বলেন, ‘‘পুরসভার রাজস্ব এ ভাবে ফাঁকি দেওয়া বরদাস্ত করব না। মেয়রকে সব জানাব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy