Advertisement
E-Paper

ডেঙ্গির শহরে পা ফেলতেও ভয়

এ শহরে এখন পা ফেলতেও ভয় পাচ্ছেন ওঁরা! কারও মেয়ে আসেন টিউশন নিতে। কারও আত্মীয়ের বাড়ি এখানে। কেউ বা আসেন ব্যবসার কাজে। ভয়ে কাঁপুনি ধরেছে সকলেরই। জমজমাট শ্রীরামপুর এখন যে ‘ডেঙ্গির শহর’! সরকারি হাসপাতালে জ্বরে আক্রান্ত রোগীর আসার বিরাম নেই।

গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৭ অগস্ট ২০১৬ ০২:১৭
ডাক্তার দেখিয়ে শ্রীরামপুর হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে আসছেন রোগীরা। শনিবার ছবিটি তুলেছেন দীপঙ্কর দে।

ডাক্তার দেখিয়ে শ্রীরামপুর হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে আসছেন রোগীরা। শনিবার ছবিটি তুলেছেন দীপঙ্কর দে।

এ শহরে এখন পা ফেলতেও ভয় পাচ্ছেন ওঁরা!

কারও মেয়ে আসেন টিউশন নিতে। কারও আত্মীয়ের বাড়ি এখানে। কেউ বা আসেন ব্যবসার কাজে। ভয়ে কাঁপুনি ধরেছে সকলেরই। জমজমাট শ্রীরামপুর এখন যে ‘ডেঙ্গির শহর’! সরকারি হাসপাতালে জ্বরে আক্রান্ত রোগীর আসার বিরাম নেই।

উত্তরপাড়ার ভদ্রকালী থেকে শ্রীরামপুরের নেতাজি সুভাষ অ্যাভিনিউতে ফিজিক্স পড়তে আসেন শ্রাবণী মল্লিক। কিছুদিন আগে তিনিও জ্বরে আক্রান্ত হন। পরে জানা যায়, শ্রাবণীর ডেঙ্গি হয়েছে। চিকিৎসার পরে তিনি এখন সুস্থ। রাজ্য সরকার শ্রীরামপুরে ডেঙ্গিকে মহামারি ঘোষণা করেছে জানতে পেরে শনিবার শ্রাবণীর মা বলেন, ‘‘মেয়েকে আপাতত ওই শহরে যেতে দেব না। পড়া মাথায় থাক। মেয়ে প্রাণে বাঁচুক।’’

রেলকর্মী শম্পা মুখোপাধ্যায়ের শ্বশুরবাড়ি শ্রীরামপুরে। তিনি এখন উত্তরপাড়ার দোলতলায় বাপেরবাড়ি থেকে অফিস যাতায়াত করছেন। তাঁর কথায়, ‘‘ছেলের স্কুল কামাই হয় হোক। মায়ের ফ্ল্যাট থেকেই কয়েক দিন অফিস করব। অন্তত শ্রীরামপুরে ফিরতে হবে না!’’

ছোট থেকেই শ্রীরামপুরে মানুষ অভিনেত্রী লোপামুদ্রা সিংহ। এখন গড়িয়ায় থাকেন। আগামী রবিবার তাঁর শ্রীরামপুরে আসার কথা ছিল। কিন্তু মহামারির কথা জানতে পেরে তিনি সেই ইচ্ছায় দাঁড়ি টেনেছেন। লোপামুদ্রা বলেন, ‘‘আপাতত কিছুদিন ওমুখো হব না। তা হলে জ্বর ছড়াতে পারে।’’

শ্রাবণী, শম্পা বা লোপামুদ্রাদের আতঙ্কের সুর শোনা গিয়েছে শহরের আরও অনেকের মুখেও। কেউ রাতারাতি মশারি কিনেছেন। কেউ জ্বর হওয়ার আগেই প্যারাসিটামল জোগাড় করে রাখছেন। কেউ আবার জীবিকার কারণে শহরে থাকলেও নিকটাত্মীয়দের দূরে পাঠাচ্ছেন। যেমন, মাহেশের আইনজীবী সোমনাথ বালিয়াল। তিনি বলেন, ‘‘ছেলে-বৌকে কিছু দিন আত্মীয়ের বাড়িতে ‌পাঠিয়ে দেব। ঝুঁকি তো আর নিতে পারি না।’’

শহরের অন্তত ৬টি ওয়ার্ডে জ্বরের প্রকোপ চলছে বেশ কিছু দিন ধরে। শুক্রবারই সরকারি হিসেবে জানানো হয়েছে, শ্রীরামপুর মহকুমায় ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা ৪৫০। এর মধ্যে ২২ জনের রক্তের ‘সেরোটাইপিং’ করা হয়েছে। তার মধ্যে ১৬ জনের শরীরেই মিলেছে ডেঙ্গির সবচেয়ে ভয়াবহ ‘ডেঙ্গ-২’ ভাইরাস। ইতিমধ্যে জ্বরে আক্রান্ত হয়ে দু’জনের মৃত্যু হওয়ায় আতঙ্কের মাত্রা বেড়েছে।

শহরের এক চিকিৎসক বলেন, ‘‘প্রতি বছরেই এই সময় সাধারণ ভাবে জ্বর-সর্দি হয়। কিন্তু এখন মানুষ যে ভাবে আতঙ্কে প্রতিদিন আমাদের চেম্বারে ভিড় জমাচ্ছেন, তেমনটা আগে হয়নি। কেন পরিস্থিতি এমন হল, তার মূল কারণ খুঁজতেই হবে। না হলে পরিস্থিতি আরও জটিল হবে।’’

শনিবার বেলা ১২টার মধ্যেই শ্রীরামপুর ওয়ালশ হাসপাতালে নতুন করে জ্বরে আক্রান্ত ১১ জনকে ভর্তি করানো হয়েছে। জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, হাসপাতাল এবং ফিভার ক্লিনিক মিলিয়ে প্রায় দেড়শো জনের রক্তের নমুনা পরীক্ষার জন্য পাঠানো হচ্ছে। ডেঙ্গি নিশ্চিত হয়েছে, হাসপাতালে এমন রোগীদের শয্যা দেওয়া গেলেও জ্বরে আক্রান্ত অনেককে মেঝেতে জায়গা দিতে হচ্ছে। হাসপাতালেরই এক চিকিৎসক জানান, শয্যা ফাঁকা হলেই জ্বরের রোগীদের গুরুত্ব দিয়ে সেখানে রাখা হচ্ছে। এখানে ২৭০টি শয্যা রয়েছে। কিন্তু রোগীর সংখ্যা ৩৫০ ছাড়িয়েছে।

আতঙ্ক থেকে কবে নিস্তার, এই প্রশ্নই এখন ঘুরে বেড়াচ্ছে লোকের মুখে মুখে।

Dengue
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy