ধারাবাহিক চিকিৎসা না করানোয় যক্ষ্মা নির্মূল হওয়া তো দূরের কথা, অনেকেই ফের আক্রান্ত হচ্ছেন এই রোগে। শুধু তাই নয়, দ্বিতীয়বার আক্রান্ত হওয়ার পর রোগ আরও ভয়াবহ আকার নিয়ে রোগীর শরীরে বাসা বাঁধছে। যক্ষ্মা রোগে এমনই ছবি হাওড়ার জেলার।
জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, দ্বিতীয়বার আক্রান্ত হওয়া রোগীর পিছনে ওষুধের খরচ যেমন অনেক বেশি হয়, তেমনই রোগীর প্রাণ সংশয়ও দেখা দিতে পারে। জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে আছে যক্ষ্মা নিরাময়কেন্দ্র। রোগ নির্ধারণ-সহ বিনামূল্যে ওষুধ দেওয়া হয় এই সব যক্ষ্মা নিরাময়কেন্দ্র থেকে। নিয়ম হল, যক্ষ্মা ধরা পড়ার পরে টানা ছয় থেকে আট সপ্তাহ ওষুধ খেতে হয়। পথ্য এবং জীবনযাপনের ক্ষেত্রেও কড়া নিয়মের মধ্য দিয়ে চলতে হয় রোগীকে। কিন্তু দেখা গিয়েছে, অনেকেরই একটানা ওষুধ খাওয়ার ধৈর্য্য থাকে না। মাঝপথে ওষুধ বন্ধ রেখে তাঁরা ভিন রাজ্যে কাজে চলে যান। টানা ওষুধ না খাওয়ার ফল হয় মারাত্মক। অনেকেই ফের এই রোগে আক্রান্ত হন। দ্বিতীয় পর্যায়ে এই আক্রান্ত হওয়াকে চিকিৎসার পরিভাষায় বলা হয় এমডিআর (মাল্টিপল ড্রাগ রেজিস্ট্যান্স)। এমডিআর আক্রান্তদের চিকিৎসা বেশ জটিল এবং খরচ সাপেক্ষ বলে জানিয়েছেন জেলা স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা। ওই দফতর সূত্রে খবর, কম করে ৩ লক্ষ টাকার ওষুধ লাগে এমডিআর নিরাময় করতে।
জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে, এমডিআর আক্রান্তদের মধ্যেও অনেকে আবার টানা ওষুধ খান না। তাঁদের মধ্যে থেকে অনেকে পরবর্তীকালে আরও ভয়ঙ্করভাবে আক্রান্ত হন। তৃতীয়বার যাঁরা আক্রান্ত হন চিকিৎসার পরিভাষায় তাঁদের বলা হয় এক্সটিআর। (এক্সট্রিম রেজিস্ট্যান্স)। এই পর্যায়ের ওষুধ বাবদ খরচ হয় রোগীপ্রতি ৫ লক্ষ টাকা। হাওড়ায় প্রতি বছর গড়ে ৪ হাজার যক্ষ্মায় আক্রান্তের সন্ধান মেলে। তাঁদের মধ্য থেকে এমডিআর পর্যায়ে আক্রান্ত হন গড়ে সাড়ে পাঁচশো রোগী। গড়ে পঞ্চাশজন রোগী আক্রান্ত হন এক্সটিআর-এ।
বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে রয়েছে যক্ষ্মা নির্ধারণ এবং নিরাময়ের ব্যবস্থা। সরকারের তরফ থেকে ওষুধেরও কোনও খামতি নেই। হাওড়া জেলা হাসপাতাল এবং উলুবেড়িয়া মহকুমা হাসপাতালে বসানো হয়েছে যক্ষ্মা নির্ধারণের অত্যাধুনিক যন্ত্র। তারপরেও ‘এমডিআর’ এবং ‘এক্সটিআর’ পর্যায়ে আক্রান্তের হার না কমায় চিন্তিত স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা। তাঁরা জানান, শুধুমাত্র সচেতনতার অভাবেই এটা ঘটছে। অনেক রোগী টানা ওষুধ খাচ্ছেন না। কয়েকদিন ওষুধ খেয়ে একটু সুস্থ হলেই ওষুধ খাওয়া বন্ধ করে কাজে চলে যাচ্ছেন। অথচ রোগী বা রোগীর পরিবার একটু সচেতন হলেই এমডিআর এবং এক্সটিআর-এর সংখ্যা কমে। এর ফলে রোগীর যেমন প্রাণ সংশয় থাকে না, তেমনই ব্যয়বহুল ওষুধের ব্যবহার কমলে সরকারের আর্থিক সাশ্রয় হয়।
এই পরিস্থিতিতে বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক প্রচারে নামার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জেলা স্বাস্থ্য দফতর। যক্ষ্মা নিরাময়কেন্দ্রগুলির দায়িত্বপ্রাপ্ত সুপর্ণা চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘মহিলা ও শিশুদের রোগ প্রতিরোধের বিষয়ে যেমন ধারাবাহিক প্রচার চলে তেমনই যক্ষা নিয়েও প্রচারের সিদ্ধান্ত হয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy