Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

ভোট দিতে পারেননি, ক্ষোভ বহু ভোটারের

কোথাও ভোট দিতে গিয়ে ওঁদের শুনতে হয়েছে, ‘ভোট পড়ে গিয়েছে’। কোথাও আবার বুথের সামনে মারামারি দেখে পিছিয়ে গিয়েছেন ওঁরা। কোথাও বুথে গিয়ে তাঁরা দেখেন, গোলমালের জেরে ভোট প্রক্রিয়াই সাময়িক ভাবে স্থগিত। বাড়ি থেকে ভোট দেওয়ার জন্য বেরিয়েও নানা বাধার মুখে শনিবার ভোট দিতে না পেরে ক্ষোভে ফুঁসছেন বাঁশবেড়িয়া এবং চন্দননগরের বহু ভোটার। ভোটের দিন ঘোষণার পর থেকেই হুগলিতে সবচেয়ে বেশি রাজনৈতিক অশান্তি দেখা গিয়েছিল বাঁশবেড়িয়াতেই। ভোটের দিন গোলমাল এড়াতে বহু পুলিশও মোতায়েন ছিল। কিন্তু গোলমাল এড়ানো যায়নি। এ জন্য বিরোধীরা তৃণমূলের দিকেই আঙুল তুলেছে। তৃণমূল অভিযোগ মানেনি।

আরামবাগের স্ট্রং রুমে প্রহরা।

আরামবাগের স্ট্রং রুমে প্রহরা।

গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায় ও তাপস ঘোষ
কলকাতা ও হুগলি শেষ আপডেট: ২৭ এপ্রিল ২০১৫ ০০:৩৫
Share: Save:

কোথাও ভোট দিতে গিয়ে ওঁদের শুনতে হয়েছে, ‘ভোট পড়ে গিয়েছে’।

কোথাও আবার বুথের সামনে মারামারি দেখে পিছিয়ে গিয়েছেন ওঁরা। কোথাও বুথে গিয়ে তাঁরা দেখেন, গোলমালের জেরে ভোট প্রক্রিয়াই সাময়িক ভাবে স্থগিত।
বাড়ি থেকে ভোট দেওয়ার জন্য বেরিয়েও নানা বাধার মুখে শনিবার ভোট দিতে না পেরে ক্ষোভে ফুঁসছেন বাঁশবেড়িয়া এবং চন্দননগরের বহু ভোটার। ভোটের দিন ঘোষণার পর থেকেই হুগলিতে সবচেয়ে বেশি রাজনৈতিক অশান্তি দেখা গিয়েছিল বাঁশবেড়িয়াতেই। ভোটের দিন গোলমাল এড়াতে বহু পুলিশও মোতায়েন ছিল। কিন্তু গোলমাল এড়ানো যায়নি। এ জন্য বিরোধীরা তৃণমূলের দিকেই আঙুল তুলেছে। তৃণমূল অভিযোগ মানেনি।
অথচ, শনিবার সকাল থেকে বাঁশবেড়িয়ার বহু বুথে ভোটারদের ভিড় উপচে পড়তে দেখা যায়। কিন্তু বেলা বাড়তেই তাল কাটে। শাসকদলের বিরুদ্ধে বিরোধীরা বেশ কিছু বুথ দখলের অভিযোগ তোলে। তবে, সবচেয়ে বড় গোলমাল হয় ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বাঁশবেড়িয়া গ্যাঞ্জেস হিন্দি উচ্চ বিদ্যালয়ের বুথে। ওই স্কুলের ২৫ ও ২৬ নম্বর বুথে হঠাৎই শাসকদলের কিছু যুবক ঢুকে শূন্যে গুলি চালিয়ে বুথ দখল করে এবং ছাপ্পা ভোট দেয় বলে অভিযোগ তোলে বিরোধীরা। হামলাকারীরা ভোটকেন্দ্রের নজরদারি ক্যামেরা ভেঙে দেয়। ওই ওয়ার্ডের ফরওয়ার্ড ব্লক প্রার্থী প্রণব ঘোষ সেই সময়ে বুথে পৌঁছলে তাঁকে মারধর করে ভোটকেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। একই অবস্থা হয় বিজেপি প্রার্থী দুধনাথ ঠাকুরেরও। গোলমালের জেরে ভোট গ্রহণ কার্যত বন্ধ হয়ে যায়। ঘটনাস্থলে পৌঁছয় বিশাল পুলিশ বাহিনী। তত ক্ষণে অবশ্য হামলাকারীরা পালায়।

এর পরেই ঘটনার প্রতিবাদে প্রণববাবু এবং দুধনাথবাবুর নেতৃত্বে বামফ্রন্ট এবং বিজেপি কর্মী-সমর্থকেরা একসঙ্গে বাঁশবেড়িয়া বাজার মোড়ে প্রায় এক ঘণ্টা অবরোধ করেন। জেলা প্রশাসন এবং নির্বাচন কমিশনের পর্যবেক্ষকের কাছে অভিযোগও দায়ের করেন। প্রণববাবু বলেন, ‘‘বুথ দখল করে তৃণমূল গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে। বিরোধীরা মুখ খুললেই শাসক দলের আশ্রিত গুন্ডারা হামলা করছে। আমি প্রার্থী হওয়া সত্ত্বেও ওরা রেয়াত করেনি।’’

এই গোলমালের সময়েই স্বামীর সঙ্গে ওই বুথে ভোট দিতে গিয়েছিলেন হংসেশ্বরী মন্দির এলাকার বাসিন্দা রিনা ঘোষ। কিন্তু ভোট দিতে পারেননি। তাঁর ক্ষোভ, ‘‘স্কুলে ঢুকতেই কিছু বহিরাগত যুবক বাধা দেয়। আমরা জোর করে ঢুকতে চাইলে আগ্নেয়াস্ত্র দেখায়। আরও কয়েক জনের সঙ্গেও একই ব্যবহার করে। কোনও পুলিশকে দেখতে পাইনি যে সাহায্য চাইব। তাই ফিরে যাই। এই প্রথম আমি ভোট দিতে পারলাম না।’’

একই অভিজ্ঞতা ওই এলাকারই উমা ঘোষেরও। তাঁর কথায়, ‘‘ভোট দিতে পারব না, বুঝতে পারিনি। এত বছর ধরে ভোট দিয়ে আসছি। কোনও দিন এ ধরনের ঘটনা ঘটেনি।’’ ক্ষোভের কথা শোনা গিয়েছে ওই এলাকার লতিকা মণ্ডল, শ্যামলী ঘোষ, কাকলি ঘোষ, সাধনা মণ্ডলদের মুখেও। ওই ঘটনার পরে পুলিশের হস্তক্ষেপে অবরোধ ওঠে। ভোট-গ্রহণও শুরু হয়। কিন্তু আতঙ্কে রিনাদেবী, উমাদেবীরা আর ভোটকেন্দ্রে ফিরে আসেননি।

ভোট-পর্বের শেষ পর্যায়ে আবার তপ্ত হয়ে ওঠে চন্দননগরের ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের সুভাষপল্লি এলাকার জিএসএফ উচ্চ বিদ্যালয়ের বুথের সামনের চত্বর। মোটরবাইকে চড়ে আসা এক দল দুষ্কৃতী শূন্যে গুলি চালায়। ইএফআর জওয়ানরা তাদের ধাওয়া করেন। দুষ্কৃতীরা মোটরবাইক ফেলে পালায়। ঘটনাস্থলে বাহিনী নিয়ে চলে আসেন ভদ্রেশ্বর থানার ওসি অনুদ্যুতি মজুমদার। তখন সেখান থেকে অনেক ভোটারই ভয়ে সরে গিয়েছেন। পুলিশ তল্লাশি চালিয়ে এক যুবককে ধরলে ইএফআর জওয়ানরা তাকে হামলাকারী বলে চিহ্নিত করে। পুলিশ তাকে গাড়িতে তুলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে বাধা দেন ওই ওয়ার্ডের তৃণমূল প্রার্থী নীলেশ পাণ্ডে এবং তাঁর সঙ্গের লোকজন। পুলিশ লাঠি চালিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। নীলেশবাবুর দাবি, ‘‘যাকে পুলিশ ধরেছিল, সে দোষী নয়। নিরীহ যুবক।’’ কিন্তু এই গোলমালেও ভোট দিতে পারেননি অনেকে। তাঁরা ফিরে যান। তাঁদের মধ্যে এক বৃদ্ধ বলেন, ‘‘অনেক বার ভোট দিয়েছি। অনেক গোলমাল দেখেছি। কিন্তু এমন ঘটনা দেখিনি। বহিরাগতরা এসে এমন হামলা করল যে ভোটই দিতে পারলাম না।’’ একই কথা শোনা গিয়েছে আরও কয়েক জনের মুখে। আরামবাগে আবার মাত্র তিনটি ওয়ার্ডে ভোট হলেও বুথ দখলের অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। বিজেপির জেলা সহ-সভাপতি স্বপন পালের অভিযোগ, ‘‘জেলার অধিকাংশ পুরসভার বিভিন্ন ওয়ার্ডের ভোট কেন্দ্রে বুথ দখল করে যথেচ্ছ ছাপ্পা ভোট দিয়েছে শাসকদলের মদতপুষ্ট বহিরাগত দুষ্কৃতীরা।’’ সিপিএমের জেলা সম্পাদক সুদর্শন রায়চৌধুরীর অভিযোগ, ‘‘বহিরাগত দুষ্কৃতীদের কাজে লাগিয়ে ভোট বানচালের চেষ্টা হয়েছে। ভোটারদের ভোট দিতে দেওয়া হয়নি।’’

অভিযোগ উড়িয়ে জেলা তৃণমূল সভাপতি তপন দাশগুপ্তেরর দাবি, ‘‘জেলার সর্বত্রই শান্তিপূর্ণ ভাবে ভোট হয়েছে। দু’একটি বিক্ষিপ্ত ঘটনা ঘটলেও বড় কিছু হয়নি। মিথ্যা অভিযোগ তোলা হচ্ছে।’’

সহ প্রতিবেদন: প্রকাশ পাল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE