পিচের অস্তিত্ব বলে কিছু নেই। খোলনলচে বদল হয়নি সেই ২০০৮ সাল থেকেই। জোড়াতালি দিয়েই যাতায়াত চলছে প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনা প্রকল্পে তৈরি আরামবাগের কালীপুর থেকে গোঘাটের দামোদরপুর পর্যন্ত প্রায় ১৮ কিলোমিটার এই রাস্তা দিয়ে। তাপ্তি উঠে গেলে তার প্রকৃত রূপ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। রাস্তার মাঝে থাকা খানাখন্দকে বর্ষায় দেখলে মনে হবে ডোবা। তবুও দফতরের হুঁশ নেই।
স্কুলের ছাত্রছাত্রী থেকে শুরু করে সাইকেল, মোটরবাইক, ভ্যানরিকশা এবং বাস চলে এই রাস্তায়। মাঝে মাঝে স্থানীয়ভাবে পঞ্চায়েত সমিতির তরফে ইট-পাথর ফেলে গর্ত বোজালেও মাস খানেক পরেই যে কে সেই। ফলে বাস বন্ধ হচ্ছে প্রায়ই। জরুরি প্রয়োজনেও এই রাস্তা এড়িয়ে চলে অ্যাম্বুল্যান্সও। বাধ্য হয়ে ঘুরপথে হাসপাতালে যেতে হয়। গোঘাটের বিধায়ক তৃণমূলের মানস মজুমদারের আশ্বাস, ‘‘প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনায় রাস্তাটি আমূল সংস্কারের জন্য জেলা পরিষদের কাছে দরবার করেছি। শীঘ্রই কিছু একটা হবে”
এই প্রতিশ্রুতি অবশ্য ২০০৮ সাল থেকেই শুনে আসছেন এলাকার মানুষ। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, আরামবাগের কালীপুর থেকে গোঘাটের দামোদরপুর পর্যন্ত গ্রামীণ রাস্তাটি প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনা প্রকল্পে নির্মাণের অনুমোদন পায় ২০০৩ সালে। কেন্দ্র সরকার রাস্তাটির জন্য বরাদ্দ করে ৪ কোটি ৬৩ লক্ষ ২১ হাজার টাকা। কাজ শেষ করার সময় ছিল ২০০৫ সালের ১৯ জুলাই। কিন্তু কাজটি শেষ হয় ২০০৬ সালের ১ জুন। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, রাস্তা নির্মাণের দু’বছর যেতে না যেতেই অর্থাৎ ২০০৮ সালের বর্ষার আগেই বেশ কিছু এলাকা ভেঙেচুরে যায়। রাস্তাটি সংস্কারের দাবিতে তখন থেকেই ক্ষোভ-বিক্ষোভ এবং প্রশাসনিক মহলে দরবার চলছে। সে সময় জেলা পরিষদের তরফে বলা হয়, নিয়ম অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনা প্রকল্পের রাস্তা নির্মাণের পরে নির্মাণকারী সংস্থা পরের পাঁচ বছর রক্ষণাবেক্ষণ করবে। তার পর থেকে রাজ্যের তরফে সংশ্লিষ্ট জেলা পরিষদ ওই সমস্ত রাস্তার রক্ষণাবেক্ষণ করবে। কিন্তু রাস্তা নির্মাণের পরই নির্মাণকারী সংস্থা উধাও হয়ে যায় বলে অভিযোগ। ২০১১ সাল থেকে এই পথ একেবারেই চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ে। তখন দেখভালের দায়িত্বে জেলা পরিষদ। কিন্তু তারাও উদাসীন থাকে বলে অভিযোগ।
রাস্তাটির ভগ্ন অবস্থা দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তৃণমূল পরিচালিত গোঘাট ১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি মৃণাল আলু। তাঁর অভিযোগ, ‘‘রাস্তাটি সংস্কারের জন্য ২০১৪ সালের গোড়ায় পঞ্চায়েত সমিতি থেকে ১০ কোটি ৬১ লক্ষ টাকার প্রকল্প পাঠানো হয় জেলাপরিষদে। তারপর থেকে শুনছি অনুমোদন হয়েছে। শীঘ্রই টেন্ডার ডাকা হবে। কিন্তু কিছুই হয়নি।’’
এই রাস্তাটির গুরুত্ব যে নেই তা নয়। আগে আরামবাগ থেকে পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটালে যাতায়াত হতো মূলত ক্ষীরপাই হয়ে। গাড়িতে প্রায় সাড়ে ৩ ঘণ্টা লাগত। অথচ এই দামোদরপুর হয়ে যেতে মাত্র দেড় ঘণ্টা সময় লাগে। স্বাভাবিকভাবেই এ রাস্তা সংস্কারের দাবিতে সরব হন দুই জেলার মানুষই। এই রুটে বর্তমানে তারকেশ্বর, আরামবাগ, হাওড়া যাতায়াতের প্রায় ২০টি বাস চলে। বাস মালিক সংগঠনের অভিযোগ, ‘‘প্রতিদিন বাসের যন্ত্রাংশ ভাঙছে। দুর্ঘটনা ঘটছে। বহু বার বাস বন্ধ রেখে প্রতিবাদ করেছি। প্রশাসন আশ্বাস দেয়। কিন্তু কোনও পদক্ষেপ নিতে দেখা যায় না।’’
জেলা পরিষদের সভাধিপতি তৃণমূলের মেহবুব রহমানও আশ্বাস দেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনায় জেলার অনেক রাস্তাই সংস্কারের পরিকল্পনা আছে। অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে প্রকল্পের মধ্যে কালীপুর-দামোদরপুর রাস্তাও ধরা হয়েছে।’’