Advertisement
E-Paper

চেক বিভ্রাটের শেষে ক্ষতিপূরণ

গত ২৩ অক্টোবর সাঁতরাগাছি স্টেশনে দুর্ঘটনার মধ্যে পড়ে সুকিয়া স্ট্রিটের সাউ পরিবার। একই সময়ে অনেকগুলি ট্রেন স্টেশনে ঢুকে পড়ায় স্টেশনের ফুট ওভারব্রিজে পদপিষ্ট হয়ে মৃত্যু হয় দু’জনের।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৫ নভেম্বর ২০১৮ ০৭:২০
সাঁতরাগাছি স্টেশন।—ফাইল চিত্র।

সাঁতরাগাছি স্টেশন।—ফাইল চিত্র।

সাঁতরাগাছি স্টেশনের ফুট ওভারব্রিজে পদপিষ্ট হওয়া পরিবার ২০ দিনের মাথায় ক্ষতিপূরণ পেল। সোমবার ওই পরিবারের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে রেলের দেওয়া চেক ভাঙিয়ে এক লক্ষ ৯৫ হাজার টাকা জমা পড়েছে। এর আগে কয়েক বার রেলের দেওয়া ক্ষতিপূরণের চেক ‘বাউন্স’ করে। তবে চেক ‘বাউন্স’ হওয়ার দায় রেল সংশ্লিষ্ট ব্যাঙ্কের উপরেই চাপিয়েছে। ব্যাঙ্ক অবশ্য জানিয়েছে, চেক ভাঙানোর জন্য যা করা প্রয়োজন, সবই করা হয়েছিল।

গত ২৩ অক্টোবর সাঁতরাগাছি স্টেশনে দুর্ঘটনার মধ্যে পড়ে সুকিয়া স্ট্রিটের সাউ পরিবার। একই সময়ে অনেকগুলি ট্রেন স্টেশনে ঢুকে পড়ায় স্টেশনের ফুট ওভারব্রিজে পদপিষ্ট হয়ে মৃত্যু হয় দু’জনের।

১২ জন আহতের মধ্যে ছিলেন সাউ পরিবারের গৃহকর্তা হনুমন্ত, তাঁর স্ত্রী কিরণ, বছর দশেকের ছেলে অক্ষত এবং সাত বছরের মেয়ে অর্ণা। রেলের তরফে ক্ষতিপূরণ বাবদ হনুমন্ত এবং অক্ষতকে এক লক্ষ ৯৫ হাজার টাকার চেক দেওয়া হয়। কিরণ পান ৫০ হাজার টাকার আর একটি চেক। হনুমন্তের অভিযোগ, ‘‘গত ২৯ নভেম্বর থেকে দু’টি চেকই বেশ কয়েকবার ব্যাঙ্কে জমা করার পরে সেগুলি বাউন্স করেছে।’’

সাউ পরিবারের খবর প্রকাশ্যে আসায় নড়েচ়ড়ে বসে রেল। সরকারি চেক ‘বাউন্স’ করায় শোরগোল পড়ে যায় নানা মহলে। দক্ষিণ-পূর্ব রেলের তরফে যোগাযোগ করা হয় ইন্ডিয়ান ওভারসিজ ব্যাঙ্কের শ্রীমানি মার্কেট শাখায়। ওই শাখাতেই এক লক্ষ ৯৫ হাজার টাকার ক্ষতিপূরণের চেকটি জমা করেছিলেন হনুমন্ত। দক্ষিণ-পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক সঞ্জয় ঘোষ বলেন, ‘‘স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া খড়্গপুর শাখার রেলের অ্যাকাউন্ট থেকে চেকটা দিয়েছিলাম আমরা। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার চেকটি ইন্ডিয়ান ওভারসিজ ব্যাঙ্কের শ্রীমানি মার্কেট শাখায় জমা করার পরে ওই ব্যাঙ্কের উচিত ছিল, সেটা খড়্গপুরে স্টেট ব্যাঙ্কের শাখায় পাঠিয়ে দেওয়া। তা না করে ওই ব্যাঙ্ক চেকটি স্থানীয় ক্লিয়ারিং হাউসে পাঠিয়ে দিয়েছিল।’’ সঞ্জয়বাবুর আরও যুক্তি, ‘‘তা ছাড়া ওই চেকের উপরে অ্যাট-পার কথাটি লেখা ছিল না। ফলে ওভারসিজ ব্যাঙ্কের বোঝা উচিত ছিল যে, চেকটি খড়্গপুরেই পাঠাতে হবে। অকারণ ক্ষতিগ্রস্তেরা হয়রানির শিকার হলেন।’’ ইন্ডিয়ান ওভারসিজ ব্যাঙ্কের শ্রীমানি মার্কেট শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যাঙ্ক আধিকারিক অবশ্য বলেন, ‘‘নিয়ম মেনেই স্থানীয় ক্লিয়ারিং হাউসে চেকটি পাঠানো হয়েছিল। খড়্গপুরের শাখায় পাঠানোর কথা চেকের উপরে লেখা থাকলে সুবিধা হত।’’

ব্যাঙ্ক বিশেষজ্ঞেরা অবশ্য জানাচ্ছেন, একটি রাজ্যের ব্যাঙ্কের শাখা থেকে দেওয়া চেক ভিন্‌ রাজ্যের কোনও ব্যাঙ্কের শাখায় ভাঙানো হলে দ্বিতীয় ব্যাঙ্ক একটি ‘ফি’ নিয়ে থাকে। ওই ‘ফি’ আগে কেটে নেওয়া হলে তবেই চেকে ‘অ্যাট-পার’ কথাটি লেখা থাকে। কিন্তু, ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থার কেন্দ্রীকরণের পরে এই পদ্ধতি প্রায় উঠেই গিয়েছে। সব চেকই এখন ‘অ্যাট-পার’। স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়ার প্রাক্তন চেয়ারপার্সন অরুন্ধতী ভট্টাচার্যও বলেন, ‘‘ইন্ডিয়ান ওভারসিজ ব্যাঙ্ক ভুল কিছু করেছে বলে তো মনে হচ্ছে না। চেকের উপরে আলাদা করে লেখা না থাকলে স্থানীয় ক্লিয়ারিং হাউসেই তো চেক পাঠাবে তারা।’’

দায় কার, তা নিয়ে বিতর্ক থাকলেও অবশেষে ক্ষতিপূরণের টাকা পাওয়ায় খুশি হনুমন্তেরা। জানালেন, ছেলে অক্ষতের এখনও ফিজিওথেরাপি চলছে গার্ডেনরিচ রেল হাসপাতালে। হনুমন্তের কথায়, ‘‘ছেলের চিকিৎসা এখনও বাকি। আমার স্ত্রীরও ওষুধ চলছে। টাকাটা প্রয়োজন।’’ সেই সঙ্গে তাঁর অনুরোধ, ‘‘রেল বা ব্যাঙ্ক— দু’পক্ষই সতর্ক হোক। না হলে আমাদের মতো মানুষের হয়রানি হয়।’’

Compensation Check Santragachi Stampede
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy