অবসর: স্কুলে হাজির শিক্ষকরা। নিজস্ব চিত্র
রাজনীতির সাতেপাঁচে নেই তাদের কেউই। সকলেই নিতান্ত স্কুল পড়ুয়া। তবু পঞ্চায়েত বোর্ড গঠনের আঁচ এসে পড়ল তাদের উপরেও। মঙ্গলবার বোর্ড গঠনকে ঘিরে এলাকায় তুমুল গোলমাল হতে পারে আশঙ্কায় আগাম ছুটি দিয়ে দেওয়া হল উলুবে়ড়িয়া-২ ব্লকের তুলসিবেড়িয়া পঞ্চায়েতের কামিনা হাইস্কুলে।
আশঙ্কার অবশ্য অমূলক ছিল না। তুলসিবেড়িয়া পঞ্চায়েতের বোর্ড গঠনকে কেন্দ্র করে অশান্তি হয়েছে। তৃণমূল-বিজেপির সংঘর্ষে বোমা পড়েছে মুড়ি মুড়কির মতো।
ফলে স্কুল পড়ুয়াদের অভিভাবকরা নিশ্চিন্ত— ছোটরা কেউ স্কুলে যায়নি। তবে তাঁদের ক্ষোভ, ‘‘রাজনীতির জন্য এ ভাবে পড়াশোনা বন্ধ করতে হবে কেন!’’ সে উত্তর অবশ্য দিতে পারেনি কোনও দায়িত্বশীল রাজনৈতিক নেতাও।
সোমবারই নোটিস দেওয়া হয় কামিনা হাইস্কুলে— মঙ্গলবার ছুটি থাকবে সমস্ত শ্রেণির পঠনপাঠন। ফলে এ দিন প্রায় ১৩০০ পড়ুয়ার জন্য মিড-ডে মিলও হয়নি। স্কুল পরিচালন সমিতির সভাপতি সমর ভৌমিক বলেন, ‘‘এলাকার রাজনৈতিক পরিস্থিতি খারাপ। বোর্ড গঠনকে কেন্দ্র করে গোলমাল হতে পারে। ছাত্রছাত্রীদের নিরাপত্তার কথা ভেবেই স্কুলে ছুটি দেওয়া হয়।’’ একই সুরে প্রধান শিক্ষক স্বপন ঘড়ুইও বলেন, ‘‘অন্য এলাকার ছবি তো টিভিতে দেখেছি। এখানেও যে তেমন কিছু হবে না কী করে বুঝব। তাই আগেই পড়ুয়াদের আসতে নিষেধ করে দিয়েছিলাম।’’
স্কুল কর্তৃপক্ষের এই সিদ্ধান্তে ভুল কিছু দেখছেন না অভিভাবকদের একটা বড় অংশও। ভোলানাথ প্রামাণিক, শম্ভূ শী-এর মতো অভিভাবকেরা বলেন, ‘‘গোলমাল হলে ছোটদের নিরাপত্তার দায়িত্ব কে নিত?’’ জেলা স্কুল পরিদর্শক শান্তনু সিংহ রায় বলেন, ‘‘পরিচালন সমিতি যদি মনে করে নিরাপত্তার কারণে স্কুলে ছুটি দেওয়া যেতে পারে, তবে তো ছুটি দেওয়াই যায়।’’
নিরাপত্তার কথা ভেবে স্কুলে ছুটি দেওয়ার সিদ্ধান্তকে সমর্থন করলেও শিক্ষক এবং অভিভাবকদের অন্য একটি অংশ মনে করেন, প্রধান নির্বাচনের সঙ্গে স্কুলের পঠন-পাঠনকে মিশিয়ে দিয়ে যে ভাবে ছুটি দেওয়া হল তা মেনে নেওয়া যায় না। তাঁদের বক্তব্য, এর দায় রাজনৈতিক দলগুলির উপরেও বর্তায়। নেতাদেরই উচিত ছিল নিরাপত্তার দায়িত্ব নেওয়া।
যদিও এ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলি দায় ঠেলাঠেলি শুরু করে দিয়েছে। বিরোধীদের উপরই সব দায় চাপিয়েছে তৃণমূল। দলের শিক্ষা সেলের উলুবেড়িয়ার সভাপতি মুক্তেশ দে বলেন, ‘‘বিজেপির নোংরা রাজনীতির জন্য সব জায়গায় গোলমাল হচ্ছে শিক্ষাঙ্গনও তার বাইরে নয়।’’
বিজেপির হাওড়া গ্রামীণ জেলা সভাপতি অনুপম মল্লিক আবার বলেন, ‘‘গণতন্ত্রকে কলুষিত করছে তৃণমূল। জোর করে সর্বত্র ক্ষমতা দখল করতে চাইছে তারা। এই সন্ত্রাসের বলি হচ্ছে পড়ুয়ারাও।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy