Advertisement
১৫ মে ২০২৪

কারখানায় লুঠের চেষ্টা, খুন নিরাপত্তারক্ষী

দুষ্কৃতীদের ছোড়া গুলিতে খুন হলেন কারখানার নিরাপত্তারক্ষী। শুক্রবার গভীর রাতে ঘটনাটি ঘটেছে শ্রীরামপুরের সাতঘড়া এলাকায়। নিহতের নাম বিনোদ পাণ্ডে (৫২)।

কারখানায় রক্তের দাগ। ছবি: দীপঙ্কর দে।

কারখানায় রক্তের দাগ। ছবি: দীপঙ্কর দে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শ্রীরামপুর শেষ আপডেট: ৩১ জুলাই ২০১৬ ০১:৫২
Share: Save:

দুষ্কৃতীদের ছোড়া গুলিতে খুন হলেন কারখানার নিরাপত্তারক্ষী। শুক্রবার গভীর রাতে ঘটনাটি ঘটেছে শ্রীরামপুরের সাতঘড়া এলাকায়। নিহতের নাম বিনোদ পাণ্ডে (৫২)। তাঁর বাড়ি বিহারের সিওয়ান জেলায়। কর্মসূত্রে বছর খানেক ধরে এই কারখানায় থাকতেন। হুগলি জেলা পুলিশ সুপার প্রবীণ ত্রিপাঠী বলেন, ‘‘প্রাথমিক তদন্তে কিছু সূত্র মিলেছে। মনে হচ্ছে স্থানীয় দুষ্কৃতীদের কাজ।’’ পুলিশ জানায়, শনিবার রাত পর্যন্ত কেউ গ্রেফতার না হলেও দু’জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে।

তবে এই খুনের ঘটনার পরে শ্রীরামপুরে ফের অপরাধমূলক কাজকর্ম মাথাচাড়া দিচ্ছে বলে মনে করছেন এলাকার বাসিন্দারা। কারণ, বছর দু’য়েক আগে শ্রীরামপুর শহরে কয়েকটি মন্দিরে পর পর চুরির ঘটনা ঘটেছিল। পু‌লিশের ঘুম ছুটে গিয়েছিল তাতে। শেষ পর্যন্ত চুরির অভিযোগে কয়েক জন কিশোরকে পুলিশ গ্রেফতার করেছিল। তার পর থেকে অবশ্য এই ধরণের ঘটনা ঘটেনি বললেই চলে। কিন্তু গত কয়েক মাস ধরে ফের চুরি-ছিনতাইয়ের অভিযোগ উঠছে। সম্প্রতি মোটরবাইকে করে বোমা নিয়ে যাচ্ছিল তিন দুষ্কৃতী। কোনও ভাবে শহরের ব্যস্ত এলাকা শিরিষতলায় জিটি রোডের উপরেই সেই বোমা ফেটে যায়। দুই দুষ্কৃতী আহত হয়। পাশের প্রভাস‌নগর এলাকাতেও চোরের উপদ্রব বেড়েছে বলে অভিযোগ। শুক্রবার রাতেও একটি বাড়িতে ঢুকে দুষ্কৃতীরা গয়না, অন্য জিনিসপত্র নিয়ে পালায় বলে অভিযোগ হয়েছে।

শুধু শ্রীরামপুর নয়, গত কয়েক মাসে হুগলিতে চুরি-ছিনতাইয়ের পাশাপাশি বেশ কয়েকটি গুলি চালানোর ঘটনা ঘটেছে। সম্প্রতি চন্দননগরে প্রকাশ্য দিবালোকে এক যুবককে গুলি ছোড়ার অভিযোগ ওঠে এক দুষ্কৃতীর বিরুদ্ধে। মাস দু’য়েক আগে পান্ডুয়ার দাঁপুরে এক যুবক গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। ওই ঘটনার আগে পান্ডুয়ারই দাবরা গ্রামে এক ঠিকাদারের গাড়ির চালককে গুলি করে খুন করে দুষ্কৃতীরা। স্বাভাবিক ভাবে জেলায় ফের খুনের ঘটনায় চিন্তিত জেলা পুলিশ-প্রশাসন। পুলিশ জানায়, সব ঘটনার ক্ষেত্রে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এই ঘটনায় জড়িতদের ধরার জন্য সব রকম চেষ্টা করা হচ্ছে।

কী ঘটেছিল শুক্রবার রাতে?

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে খবর, শ্রীরামপুরের ওই কেবল কারখানাটি তৈরি হয় ২০০৯ সালে। জনা পঁচিশ কর্মী এখানে কাজ করেন। ওই রাতে কারখানায় ৫-৬ জন কর্মী ছিলেন। রাত সওয়া ২টো নাগাদ এক দল দুষ্কৃতী সেখানে চড়াও হয়। কারখানাটি পাঁচিল দিয়ে ঘেরা। দুষ্কৃতীরা প্রথমে কারখানার বাইরে একটি বোমা ফাটায়। পরে কারখানার ভিতরে আরও দু’টি বোমা ছোড়ে। ভয়ে কর্মীরা চিৎকার করায় দুষ্কৃতীরা পাঁচিলে ইটের ফাঁক দিয়ে গুলি চালায়। ওই গুলি বিনোদবাবুর বুকে লাগে। বোমা-গুলিতে কেউ আহত হয়েছে আন্দাজ করে দুষ্কৃতীরা আর ঝুঁকি না নিয়ে বাইরে একটি বোমা ফাটিয়ে পা‌লিয়ে যায়। কিছুক্ষণ পরে শ্রমিকেরা ‌মালিককে ফোনে ঘটনার কথা জানান। খবর পেয়ে পুলিশ আসে। বিনোদবাবুকে শ্রীরামপুর ওয়ালশ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকেরা মৃত ঘোষণা করেন। শনিবার সকালে তদন্তে আসেন শ্রীরামপুরের এসডিপিও সুবিমল পাল, আইসি নন্দদুলাল ঘোষ। দুপুরে পুলিশ সুপার প্রবীণ ত্রিপাঠী, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (শিল্পাঞ্চল) গৌরব লাল-সহ অন্য পুলিশ আধিকারিকেরা ঘটনাস্থলে যান। কারখানার মালিক কৈলাশ ঝা শ্রীরামপুর থানায় লিখিত অভিযোগ করেন।

এ দিন কারখানায় গিয়ে দেখা গেল, কাজকর্ম বন্ধ। কারখানার শেডে ঢোকার মুখেই চাপ চাপ রক্ত। প্রত্যক্ষদর্শী তথা কারখানার কর্মী গুরু কুমার বলেন, ‘‘বোমা পড়ায় খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। সকলে চিৎকার করে শেডে ঢোকার মুখে জড়ো হই। হঠাৎই গুলি খেয়ে বিনোদদা পড়ে গেলেন।’’ স্থানীয় বাসিন্দা তথা কারখানার কর্মীরা জানান, শ্রীরামপুরে ফের দুষ্কৃতীদের যে উৎপাত শুরু হয়েছে শুক্রবারের ঘটনা তার প্রমাণ।

তবে কী কারণে দুষ্কৃতীরা হামলা চালাল তা নিয়ে ধন্দে পুলিশ। একই ভাবে বছর দু’য়েক আগে দুষ্কৃতীরা এই কারখানায় ডাকাতি করতে এসে বোমা ছুড়েছিল। সে বার তারা ডাকাতি করতে পারলেও এ বার সফল হয়নি। তাই নিছক ডাকাতি না কি পুরনো কোনও শত্রুতার জেরে এই হামলা তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। যদিও কারখানার মালিকবাবু বলেন, ‘‘শত্রুতার কোনও প্রশ্ন নেই। ফের যা ঘটল আর কেউ এখানে কাজ করতে চাইবে? এখন রাতে পুলিশ টহল দেয় কি না, জানি না।’’ পুলিশ জানায়, প্রতিদিনই ওই এলাকায় টহল দেওয়া হয়। তবে শুক্রবারের ঘটনার পরে নজরদারি আরও বাড়ানো হবে। কারখানায় সিসিটিভি থাকলেও দিন কয়েক ধরে তা খারাপ। সে জন্য ঘটনার ছবি ক্যামেরায় ধরা পড়েনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

miscreant murder
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE