নোট নেই, তাই কমেছে গরুর সংখ্যাও।—নিজস্ব চিত্র।
নোট বাড়ন্ত। তাই ভিড় নেই পান্ডুয়া গরুহাটে। অন্য সময় হাটবারে গরুর হাঁকডাকে কান পাতা দায় হলেও এখন সেই ছবিটাই অদৃশ্য। দেখা গেল হাটের দিন গুটিকতক গরু জাবর কেটে চলেছে। অন্যবার হাটের দিন বিভিন্ন জায়গা থেকে আসা ট্রাক দাঁড়ানোর জন্য ঠাঁই নেই, ঠাঁই নেই দশা হলেও এখন হাতেগোনা কয়েকটি ট্রাক দাঁড়িয়ে। বছরের আর পাঁচটা হাটবারের সঙ্গে গত রবিবার পান্ডুয়ার গরুহাটের এটাই ছিল তফাৎ। যার জন্য গরু হাটে আসা ক্রেতা-বিক্রেতারা দায়ী করেছেন নোটের আকালকেই। তাঁদের বক্তব্য, এখানে লেনদেন ৫০০, ১০০০-এর নোটেই চলত। কিন্তু তা বাতিল হওয়ায় মুখ থুবড়ে পড়েছে ব্যবসা।
জিটি রোডের ধারে প্রাচীন এই হাটের পোশাকি নাম ‘ফরিদ শা পশু হাট’। তবে পান্ডুয়ার গরুহাট নামেই হাটের পরিচিতি বেশি। প্রতি রবিবার এবং বুধবার হাট বসে। ব্যবসায়ীরা জানান, ওই দু’দিন গড়ে ৩০-৪০টি করে ট্রাকবোঝাই গরু আসে। কয়েক হাজার গরু কেনাবেচা হয়। তবে সপ্তাহের অন্যান্য দিনেও গরু কেনাবেচা হয়। ঝাড়খণ্ড, বিহার, উত্তরপ্রদেশ-সহ বিভিন্ন রাজ্য থেকে এখানে গরু আসে। সেখ জাহাঙ্গির নামে এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘‘এখন হাটবারে ১০টা ট্রাক আসছে কি না, সন্দেহ! বেচাকেনা লাটে উঠেছে। এর আগে এমন বিপাকে পড়িনি।’’
ব্যবসায়ীরা জানান, ভিন্ রাজ্যের ব্যাপারীরা পাঁচশো, হাজারের নোট নিচ্ছেন না। তাই তাঁরাও ক্রেতাদের থেকে ওই নোট নিতে পারছেন না। হাট কর্তৃপক্ষের তরফে মফিজুল রহমান বলেন, ‘‘একটা গরুর দাম ৭ থেকে ২০ হাজার টাকা। এত একশো টাকার নোট মানুষ পাবেন কোথায়? ফলে বিক্রি হচ্ছে না। অন্য রাজ্য থেকে ট্রাকও ঢুকছে না। ব্যবসার প্রচুর ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে।’’
বিহারের বাসিন্দা সেখ গিয়াসউদ্দিন এই হাটে গরু এনে পাইকারি দরে বিক্রি করেন। তাঁর কথায়, ‘‘শনিবার খান চল্লিশ গরু নিয়ে এসেছি। মোটে তিনটে বিক্রি হয়েছে। বাকি গরু নিয়ে কী করব, বুঝতে পারছি না। আর দু’-একটা দিন দেখি!’’ একই বক্তব্য আগ্রার হাজি এসরাতের। শনিবারেই বিহার থেকে ট্রাকে গরু নিয়ে এসেছেন শেখ আলাউদ্দিন। তাঁর বক্তব্য, ‘‘পেট্রোল পাম্পে পাঁচশো, হাজারের নোট নিচ্ছে। কিন্তু তা হলেই তো চলবে না। হোটেল বা অন্যত্র খুব সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।’’
হাটে গরুর দেখভাল করার জন্য শ’দুয়েক শ্রমিক আছেন। কিন্তু গরু না থাকায় গত কয়েক দিন ধরে তাঁদেরও কাজ নেই বললেই চলে। হাট থেকে গোবর নিয়ে গিয়ে ঘুঁটে বেচে সংসার চালান অনেকে। গরু না থাকায় বেজায় সমস্যায় পড়েছেন এঁরাও। লোকজন কম আসায় আশপাশের হোটেলগুলিতেও বিক্রি কমেছে।
এই অবস্থায় দ্রুত সমস্যা মিটুক, চাইছে পান্ডুয়ার গরুহাট।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy