Advertisement
E-Paper

রিপোর্ট ভুল, দাবি পুরসভার

কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন মন্ত্রকের ‘স্বচ্ছ ভারত প্রকল্প’-এর সমীক্ষা বলছে, দেশের ২৫টি নোংরা শহরের মধ্যে ১৯টিই পশ্চিমবঙ্গের! সেই তালিকায় রয়েছে শ্রীরামপুরও। কেমন সেই শহরের চেহারা। তা সরেজমিনে দেখল আনন্দবাজার। কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন মন্ত্রকের ‘স্বচ্ছ ভারত প্রকল্প’-এর সমীক্ষা বলছে, দেশের ২৫টি নোংরা শহরের মধ্যে ১৯টিই পশ্চিমবঙ্গের! সেই তালিকায় রয়েছে শ্রীরামপুরও। কেমন সেই শহরের চেহারা। তা সরেজমিনে দেখল আনন্দবাজার।

প্রকাশ পাল

শেষ আপডেট: ২৭ জুন ২০১৮ ০১:৪৮
এত্তা-জঞ্জাল: শ্রীরামপুরের অলিগলির ছবিটা এরকমই। নিজস্ব চিত্র

এত্তা-জঞ্জাল: শ্রীরামপুরের অলিগলির ছবিটা এরকমই। নিজস্ব চিত্র

ঢক্কানিনাদ কম হয়নি গত কয়েক বছরে। কিন্তু শহর সাফসুতরো রাখা নিয়ে শ্রীরামপুর পুরসভার গালভরা দাবি যে আসলে ফাঁকা বুলি, তা বলে দিল কেন্দ্র সরকারের রিপোর্ট।

এ বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চের মধ্যে কেন্দ্রীয় আবাসন ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রক দেশজুড়ে বিভিন্ন জেলা শহরের পরিচ্ছন্নতা নিয়ে সমীক্ষা চালায়। গতবার ডেঙ্গি রুখে যে শ্রীরামপুর নাম কিনেছিল, বর্ষার মরসুমে আগের চেয়েও সেই শহরের অপরিচ্ছন্নতা নিয়ে ওই রিপোর্ট পুরসভাকে বড়সড় প্রশ্নের মুখে ফেলে দিল।

পুর কর্তৃপক্ষ অবশ্য দাবি করছেন, জঞ্জাল অপসারণ ব্যবস্থা আগের থেকে বহুগুণ ভাল হয়েছে। শহর সাফসুতরো হয়েছে। তা হলে কি সমীক্ষা ভুল? জঞ্জাল বিভাগের পুর-পারিষদ গৌরমোহন দে জানান, নিকাশির জন্য নর্দমা তৈরি এবং পানীয় জলের পাইপ বসাতে রাস্তা খুঁড়তে হওয়ায় বেশ কিছুদিন শহরের সার তৈরির প্রকল্প বন্ধ রাখতে হয়েছিল। তা ছাড়া, দিল্লি রোডের উপর একটি রেলসেতু সংস্কারের জন্য কিছু দিন বৈদ্যবাটীর বর্জ্য প্রতিস্থাপন প্রকল্পেও পর্যাপ্ত পরিমাণ গাড়ি পাঠানো যায়নি। এই সব কারণে কিছুদিন জঞ্জাল অপসারণ ঠিকঠাক ভাবে করা যায়নি। মনে হচ্ছে, এই সময়ের মধ্যেই সমীক্ষা হয়েছিল। একই সঙ্গে তাঁর দাবি, ‘‘সাময়িক ওই সব অসুবিধা মিটেছে। এখন সমীক্ষা হলে ফল অন্য হবে।’’

বছর কয়েক ধরে পুরসভার জঞ্জাল অপসারণ ব্যবস্থায় বদল এসেছে ঠিকই। ছ’টি পুরসভা (উত্তরপাড়া-কোতরং, কোন্নগর, রিষড়া, শ্রীরামপুর, বৈদ্যবাটী, চাঁপদানি) মিলিয়ে কঠিন বর্জ্য প্রতিস্থাপন প্রকল্প চালু হয়। সেই অনুযায়ী প্রত্যেক পুরসভার অপচনশীল আবর্জনা বৈদ্যবাটীর দীর্ঘাঙ্গিতে ফেলা হয়। প্রতিটি পুর-এলাকায় তৈরি প্রকল্পে পচনশীল আবর্জনা থেকে সার তৈরি করার কথা। কিন্তু প্রকল্পের সুবিধা সবটুকু আদায় করা যাচ্ছে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। কারণ, এখনও শহরের নানা প্রান্তে আবর্জনা ডাঁই হয়ে থাকতে দেখা যায়।

পুরসভা সূত্রের খবর, এ শহরে বাড়ির সংখ্যা প্রায় ৪০ হাজার। জনসংখ্যা প্রায় দু’লক্ষ। কয়েক বছর আগে বাড়ি বাড়ি দু’টি করে বালতি দেওয়া হয়েছিল। বলা হয়েছিল, নীল রঙের বালতিতে অপচনশীল এবং সবুজ রঙের বালতিতে পচ‌নশীল আবর্জনা জমাতে হবে। গৃহস্ত বাড়িতেই পৃথক করে রাখা আবর্জনা পুরকর্মীরা সংগ্রহ করবেন। কিন্তু এই ভাবনা বাস্তবায়িত হয়নি। বাড়িতে আবর্জনা পৃথক করে রাখা হয় না। বাড়ি থেকে আবর্জনা সংগ্রহ করা সত্ত্বেও এক শ্রেণির নাগরিকের রাস্তাঘাটে জঞ্জাল ফেলা বন্ধ হয়নি। তাই বিভিন্ন জায়গায় আবর্জনা ডাঁই হয়ে থাকে।

পুরসভার হাতগাড়িতে জঞ্জাল সংগ্রহের পরে তা কোনও জায়গায় (সেকেন্ডারি কালেকশন পয়েন্ট) জমানো হয়। সেখান থেকে বড় গাড়িতে সরিয়ে নেওয়া হয়। অভিযোগ, ‘সেকেন্ডারি কালেকশন পয়েন্ট’গুলি জঞ্জালে উপছে পড়ে। মাহেশে একাধিক জায়গায় তা জিটি রোডে চলে আসে। ফলে, কাগজে-কলমে আধুনিক ব্যবস্থা হলেও বাস্তবে তা হয়নি বলেই পুরবাসীদের অনেকে মনে করেন। তাঁদের বক্তব্য, ২০১৬-তে ডেঙ্গির প্রকোপ দেখা দিয়েছিল শহরে। তার পরে ডেঙ্গি মোকাবিলায় পুরসভা যথেষ্ট তৎপর হয়েছে। কিন্তু জঞ্জাল অপসারণের ক্ষেত্রে তা হয়নি। প্লাস্টিক-থার্মোকলের ব্যবহার নিয়ে বিধিনিষেধের বালাই নেই এখানে। পুকুর-জলাশয়ের বেহাল অবস্থা নিয়েও অসন্তোষ রয়েছে বাসিন্দাদের মধ্যে।

কয়েকটি জায়গায় রাস্তায় জঞ্জাল জমে থাকা বা পুকুর সংস্কারের ক্ষেত্রে সমস্যা রয়েছে বলে পুর-কর্তৃপক্ষ মানছেন। গৌরমোহনবাবুর আশ্বাস, জঞ্জাল অপসারণ নিয়ে দুর্গাপুজো পর্যন্ত বিশেষ অভিযান চালানো হবে।

Unclean City Serampore Survey
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy