Advertisement
E-Paper

পসরা সাজিয়ে অপেক্ষায় শ্রীরামপুর

জামাকাপড় কিনলে লটারির ‘হাতছানি’। আশপাশের কোনও দোকানে তখন খদ্দেরের আশায় রাস্তার দিকে চেয়ে ব্যবসায়ী। কোনও দোকানে হাতেগোনা দু’-এক জন ক্রেতা।

প্রকাশ পাল

শেষ আপডেট: ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০১:১৮
সুনসান: হাতে গোনা খদ্দের। শ্রীরামপুর বাজারে। ছবি: দীপঙ্কর দে

সুনসান: হাতে গোনা খদ্দের। শ্রীরামপুর বাজারে। ছবি: দীপঙ্কর দে

বেলা পৌনে দু’টো। শ্রীরামপুর স্টেশন সংলগ্ন রাস্তায় দাঁড়িয়ে লিফলেট বিলি করছেন দুই মহিলা। স্থানীয় দু’টি বস্ত্র বিপণির লিফলেট। একটিতে রয়েছে কেনাকাটায় ছাড়ের শতাংশের হিসেব। অন্যটিতে ছোটদের জামাকাপড় কিনলে লটারির ‘হাতছানি’। আশপাশের কোনও দোকানে তখন খদ্দেরের আশায় রাস্তার দিকে চেয়ে ব্যবসায়ী। কোনও দোকানে হাতেগোনা দু’-এক জন ক্রেতা।

শ্রীরামপুর বাজারকে ‘হুগলি জেলার নিউমার্কেট’ বলা যেতে পারে। রেললাইনের ধারে, লাগোয়া সুপার মার্কেট, নেতাজি সুভাষ অ্যাভেনিউ, বিপি দে স্ট্রিট জুড়ে কয়েকশো দোকান। পুজোর আগে খদ্দেরের ভিড়ে পা ফেলা দুষ্কর হয়। কিন্তু এ বারের ছবিটা একেবারে আলাদা। পুজোর আর পনেরো দিনও বাকি নেই। অথচ একের পর এক দোকানে মাছি তাড়ানোর অবস্থা। তথাকথিত বড় দোকান বা শপিং মলেও ভিড় নেই বললেই চলে!

প্রৌঢ় শঙ্কর দাসের কথায়, ‘‘এ বার এমনও দিন গিয়েছে যে, বউনি করতে দুপুর গড়িয়েছে। গত ত্রিশ বছরে এমনটা দেখিনি।’’ ব্যবসায়ীরা জানান, অগস্ট মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে পুজোর বাজার শুরু হয়ে যায়। যাতায়াতের সুবিধার কারণে তারকেশ্বর, আরামবাগ, ধনেখালি, চণ্ডীতলা, বেগমপুর, বর্ধমান-সহ বিস্তীর্ণ এলাকার মানুষ এখানে কেনাকাটা করতে আসেন। খদ্দের সামলাতে খাওয়ার সময় থাকে না।

রঞ্জিত হালদার নামে এক ব্যবসায়ীর কথায়, ‘‘বিক্রি নেই। অন্যান্য বছর এই সময়ে রবিবার আমার দোকানে ৮০-৯০ হাজার টাকা বিক্রি হয়। গত রবিবার বিক্রি হয়েছে পঞ্চাশ হাজার টাকার। এই মরসুমে সেরা বিক্রি হয়েছে ওই দিনই।’’ ব্যবসায়ীদের দাবি, সার্বিক ভাবেই পরিস্থিতি ‘খারাপ’। এখানকার ব্যবসায়ীরা মূলত কলকাতা এবং হাওড়ার বিভিন্ন হাট থেকে পোশাক কিনে আনেন। তাঁদের বক্তব্য, পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলা, ভিন্ রাজ্য থেকেও ব্যবসায়ীরা এই সব হাট থেকে পোশাক কিনে নিয়ে যান। এ বার তাঁদের সংখ্যাও কম। অনেকেই বলছেন, শো-কেস খালি হচ্ছে না। তাই, নতুন করে সামগ্রী মজুত করতে ভরসা পাচ্ছেন না।

নেতাজি সুভাষ অ্যাভেনিউতে ‘মানসী বাজারে’ ছোটদের পোশাক বিক্রেতা মনোজ দাসের কথায়, ‘‘যত টাকা লগ্নি করেছি, সেই তুলনায় বিক্রি হচ্ছে কোথায়! ক্রেতা টানতে লিফলেট ছড়াতে বাধ্য হচ্ছি।’’ অনেকেই বলছেন, নোটবন্দি, জিএসটির পর থেকেই বাজার একটু একটু করে পড়তির দিকে। এ বার সেই রেখচিত্র একেবারেই নিম্নমুখী। অনেকেই বলছেন, ঋণ নিয়ে তাঁরা ব্যবসা করেন। পরিস্থিতির জেরে দেনা শুধবেন কি করে, তা নিয়েই চিন্তায় পড়েছেন তাঁরা। কারও দুশ্চিন্তা, পুজোর পরেও ‘সঙ্কট’ না কাটলে কী হবে, তা নিয়ে।

শ্রীরামপুর কেন্দ্রীয় ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি তথা হুগলি চেম্বার অফ কমার্সের সাধারণ সম্পাদক সুব্রত বসু অশনি সঙ্কেত দেখছেন। তিনি বলেন, ‘‘হুগলি শিল্পাঞ্চল ধুঁকছে। বেকারত্বের সমস্যা রয়েছে। শুনছি, চাষবাসও ভাল হয়নি। এর উপরে পড়েছে দেশ জোড়া আর্থিক মন্দার থাবা। সব কিছুর জাঁতাকলে বাজারের এই হাল।’’ শিল্প পরিস্থিতির উন্নতি না হলে এই অবস্থা বদলানোর সম্ভাবনা কার্যত নেই বলে তিনি মনে করেন।

Puja Shopping Hooghly
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy