Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
বিরূপ আবহাওয়াকেই দায়ী করছেন চাষি

ফলন কম, বাজার আগুন আনাজের

গতবার এই সময়ে বাজারে এক কেজি শশার দাম ছিল ২০ টাকার আশপাশে। রবিবার বিক্রি হয়েছে ৪০ টাকা কেজি দরে। একটি লাউ গতবার বিকিয়েছে ১৫-১৭ টাকায়। এ বার সেখানে দাম পৌঁছেছে ৩৫ টাকা!

যত্নে: আয়দা গ্রামে লাউ চাষ করছেন মহাদেব ঘোষ। বলাগড়ের গুপ্তিপাড়া-১ পঞ্চায়েতে। ছবি: সুশান্ত সরকার

যত্নে: আয়দা গ্রামে লাউ চাষ করছেন মহাদেব ঘোষ। বলাগড়ের গুপ্তিপাড়া-১ পঞ্চায়েতে। ছবি: সুশান্ত সরকার

প্রকাশ পাল
বলাগড় শেষ আপডেট: ১৯ নভেম্বর ২০১৯ ০১:৫২
Share: Save:

যখন বৃষ্টি হওয়ার কথা ছিল, হয়নি। আবার যখন বৃষ্টির তেমন প্রয়োজন ছিল না, মাঠ ডুবেছে। শেষ আঘাত হেনেছে বুলবুল। ফলে, দফারফা হয়েছে আনাজ চাষের। ফলন কমায় এ বার কার্তিক মাসের শেষেও হুগলির বিভিন্ন বাজারে আনাজের দামে গেরস্থের হাত পুড়ছে। এমনটাই মত চাষিদের।

গতবার এই সময়ে বাজারে এক কেজি শশার দাম ছিল ২০ টাকার আশপাশে। রবিবার বিক্রি হয়েছে ৪০ টাকা কেজি দরে। একটি লাউ গতবার বিকিয়েছে ১৫-১৭ টাকায়। এ বার সেখানে দাম পৌঁছেছে ৩৫ টাকা! অন্যান্য আনাজের দামও বেড়েই চলেছে। সোমবার হুগলির বিভিন্ন বাজারে করলার দাম ছিল ৭০-৮০ টাকা কেজি। বেগুন ৫০, বরবটি ৫০-৬০, গাজর ১০০, বাঁধাকপি ৫০ টাকা কেজিতে বিকিয়েছে। ভাল সাইজের একটি ফুলকপি ৩৫ টাকা। দাম কবে নাগালে আসবে, সেটাই চিন্তা আম-আদমির।

সাধারণত, খেত থেকে কয়েকটি হাত ঘুরে বাজারে আনাজ পৌঁছয়। ফলন বেশি সত্ত্বেও বাজারে আনাজের দামবৃদ্ধি হলে ফড়েদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। কিন্তু এ বার সেই অভিযোগ তেমন শোনা যাচ্ছে না। দামবৃদ্ধিতে ব্যবসায়ীদের তেমন কারসাজি নেই বলেই মনে করছে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মহল। খেত থেকেই আনাজ বিকোচ্ছে চড়া দামে। তারপরে কয়েকটি হাত ঘুরে আরও কিছুটা বেশি দামে তা বাজারে বিক্রি হচ্ছে। চাষিরা মনে করছেন, পুরোদস্তুর ঠান্ডা না-পড়লে দাম কমার সম্ভাবনা কম।

হুগলির বলাগড় ব্লকের বিস্তীর্ণ এলাকায় আনাজ চাষ হয়। কিন্তু এ বার কাঙ্ক্ষিত ফলন হয়নি বলে সোমবার এখানে চাষিদের হা-হুতাশ শোনা গেল। গুপ্তিপাড়া-২ পঞ্চায়েতের আয়দা ঘোষপাড়ার মহাদেব ঘোষ ১০ কাঠা জমিতে লাউ চাষ করেছেন। তিনি জানান, ১০ কাঠায় অন্তত চল্লিশটি লাউ প্রতিদিন হওয়ার কথা। কিন্তু এখন অর্ধেকও হচ্ছে না। রবি এবং সোমবার তিনি ১৫টি করে লাউ বেচেছেন। শনিবার ৮টি।

মহাদেবের কথায়, ‘‘গুপ্তিপাড়া বড়বাজারে গিয়ে আনাজ বিক্রি করি। পাইকাররা কিনে নিয়ে যায়। বাজার স্বাভাবিক থাকলে একটি লাউ ১২-১৩ টাকায় বিক্রি হওয়ার কথা। গত বছর অধিক ফলনে দাম তলানিতে নেমেছিল। এ বার জোগানই নেই। তাই দাম বেড়েছে। আজ একটি লাউ ২৭ টাকায় বিক্রি করেছি।’’

সোমরা-১ পঞ্চায়েতের কামারডাঙায় বেহুলা নদীর ধারে ১০ কাঠা জমিতে বেগুন চাষ করেছেন কান্তি ঘোষ। তাঁর আক্ষেপ, প্রতিকূল আবহাওয়ায় চাষের ক্ষতি হয়েছে। সাদা মাছি এবং নলি পোকা গাছের ডগা আর ফলন্ত বেগুন‌ খেয়ে ফেলছে। সাধারণত ১০ কাঠা জমিতে এই সময়ে এক সপ্তাহে ৩ মণ (১২০ কেজি) বেগুন হয়। এ বার চার ভাগের এক ভাগও হচ্ছে না। তিনি বলেন, ‘‘আজ বারো কেজি বেগুন উঠেছে। তার মধ্যে চার কেজি কানা। বাকিটা ২৬ টাকা কেজিতে বিক্রি হল। গত বছর এই সময় অধিক ফলনের জন্য চার-পাঁচ টাকায় দর নেমে গিয়েছিল।’’

ওই এলাকারই হারাধন ঘোষের এক বিঘে জমিতে জলদি ফুলকপির চাষ রয়েছে। তিনি জানান, প্রতিকুল আবহাওয়ার সঙ্গে যুঝতে না পেরে ফলন কম হয়েছে। আকার-আকৃতির তারতম্য অনুযায়ী কোনও কপি ৫-১০ টাকায় বিক্রি হয়েছে, কোনওটির ২৫ টাকা দাম মিলেছে। হারাধনবাবুর কথায়, ‘‘অনেক কপি ঝিমোচ্ছে। সেগুলো ২ টাকাতেও বিক্রি হবে না। ভাল কপি একটু দামে বিক্রি না করলে পোষাতে পারব না।’’

ওই এলাকারই ক্ষুদিরাম ঘোষ বিঘে দেড়েক জমিতে শশা বসিয়েছেন। তাঁর ছেলে অসীম ঘোষ জানান, শশা এখন শেষের মুখে। এ বার ঠিক সময়ে বর্ষা না-হওয়ায় এবং পরে ঝড়বৃষ্টিতে চাষ মার খেয়েছে। বুলবুলে অঙ্কুর নষ্ট হয়ে গিয়েছে। রবিবার তাঁরা শশা বিক্রি করেছেন ২৫ টাকা কেজিতে। ফলন ভাল হলে এই সময় বিঘেপ্রতি ২০-২৫ কুইন্টাল শশা হওয়ার কথা। এ বার ১০-১২ কুইন্টালের বেশি হচ্ছে না।

শ্রীরামপুরের এক আনাজ বিক্রেতা শেওড়াফুলি হাট থেকে আনাজ কেনেন। কাটোয়া থেকে এক চাষি এখানে আনাজ নিয়ে

আসেন। তিনি ওই বিক্রেতাকে জানিয়েছেন, ওখানে গিয়ে বাঁধাকপি আনলে ৪০ টাকা কেজি আর একটা ফুলকপি ৩০ টাকায় বেচবেন। বিক্রেতা পড়েছেন আতান্তরে, ‘‘গাড়ি ভাড়া দিয়ে ওই দামে আনাজ আনলে বিক্রি করব কত টাকায়? তা ছাড়া সব মাল তো এক দামে বিক্রি হয় না। কিছু ফেলাও যায়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Weather Vegetable Market
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE