Advertisement
E-Paper

শ্রীরামকৃষ্ণ স্নেহধন্যেই অনন্য সাদা বোঁদে

বোঁদে বলতেই চোখের সামনে ভাসে লাল-হলুদের সমাহার। অবশ্য গোঘাটের কামারপুকুরে সেই রঙের কৌলিন্য হারিয়ে সে এক্কেবারে সাদা। তবে এ জন্য তার খেদ নেই, বরং গর্ব রয়েছে। আর তা যাঁর জন্য তিনি পরমপুরুষ শ্রীরামকৃষ্ণ।

পীষূয নন্দী

শেষ আপডেট: ২৮ জুলাই ২০১৫ ০০:৩২
দোকানের শো-কেসে সাদা বোঁদে।

দোকানের শো-কেসে সাদা বোঁদে।

বোঁদে বলতেই চোখের সামনে ভাসে লাল-হলুদের সমাহার। অবশ্য গোঘাটের কামারপুকুরে সেই রঙের কৌলিন্য হারিয়ে সে এক্কেবারে সাদা। তবে এ জন্য তার খেদ নেই, বরং গর্ব রয়েছে। আর তা যাঁর জন্য তিনি পরমপুরুষ শ্রীরামকৃষ্ণ। জানা যায়, ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ সাদা বোঁদে খেতে ভালবাসতেন। আর সে জন্যই কামারপুকুরের সাদা বোঁদে এখন শিল্পের মর্যাদা পেয়েছে বলে এখানকার মিষ্টান্ন ব্যবসায়ীদের দাবি।

নভেম্বর মাস থেকে মার্চ মাস কামারপুকুরের আশপাশের অঞ্চল বোঁদের গন্ধে ম-ম করতে থাকে। প্রতিদিন গড়ে ৮০ থেকে ১০০ কুইন্টাল সাদা বোঁদে তৈরি হয় কামারপুকুরের ২ কিলোমিটার ব্যাসার্ধ এলাকার ২০টি দোকানে। এর কারণও রয়েছে। ওই সময় রামকৃষ্ণ মঠ গমগম করে পর্যটকদের ভিড়ে। আর বাকি মরশুমে প্রতিদিন বিক্রি গড়ে ২০ থেকে ৩০ কুইন্টাল। হুগলি ও পাশাপাশি জেলা বর্ধমান, বাঁকুড়া, দুই মেদিনীপুর, হাওড়ায় সাদা বোঁদের নাম ছড়িয়েছে। কদর বাড়িয়ে তা প্যাকেটবন্দি হয়ে পাড়ি জমিয়েছে ওড়িশা, গুজরাত-সহ ভিনরাজ্যেও।

কামারপুকুরের সাদা বোঁদের সৃষ্টি রহস্য অবশ্য কারও জানা নেই। তার বয়স নিয়েও সঠিক দিশা মেলা ভার। তবে কামারপুকুরের আদি বাসিন্দাদের মধ্যে প্রবীণ জগন্নাথ ঘোষের কাছে জানা গেল, তাঁরা বংশানুক্রমে শুনে এসেছেন সাদা বোঁদের বয়স অন্তত ২০০ বছর। গদাধর ঠাকুর তথা দক্ষিণেশ্বরের শ্রীরামকৃষ্ণ তাঁর বাড়ির লাগোয়া (বর্তমানে রামকৃষ্ণ মঠ) সে সময়ের সত্য ময়রার (সত্যকিঙ্কর মোদক) দোকান থেকে সাদা বোঁদে কিনে খেতেন। সত্য তথা সত্যকিঙ্করের বর্তমান উত্তরসূরী কাশীনাথ মোদকের কথায়, ‘‘পূর্বপুরুষদের কাছে শুনেছি, ঠাকুরের প্রিয় ছিল সাদা বোঁদে। তবে বোঁদের পাশপাশি জিলিপিও খেতেন। বলতেন জিলিপির গাঁটে গাঁটে রস।’’ এই বোঁদের খ্যাতির সেটাও কারণ, জানালেন তিনি।

স্থানীয় মিষ্টান্ন ব্যবসায়ীদের সূত্রে জানা গেল, কামারপুকুরের আদি মিষ্টির দোকানটি ছিল সত্য ময়রার। সে সময়ের মিষ্টির দোকান বলতে থাকতো শুধু বোঁদে, টানা নাড়ু, মুড়কি, বাতাসা এবং জিলিপি। ১৯৪৭ সালে রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশন কর্তৃপক্ষ কামারপুকুরে শ্রীরামকৃষ্ণের জন্মস্থান অধিগ্রহণ করার পর এখানকার সাদা বোঁদের খ্যাতি ভক্তদের হাত ধরে দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে পড়ে। বেড়ে যায় চাহিদাও। কামারপুকুর মঠ চত্বর সংলগ্ন এলাকা ছাড়াও লাহা বাজার এবং কামারপুকুরে ঢোকার মুখে কামারপুকুর চটিতে মিষ্টির দোকানের সংখ্যা কুড়িটি। যার মধ্যে তিনটিই সত্য ময়রার বংশধরদের।

ব্যস্ত কারিগর।

কিন্তু শ্রীরামকৃষ্ণের স্নেহধন্য কামারপুকুরের সাদা বোঁদের রেসিপির রহস্য?

না, তা নিয়ে কোনও রাখঢাক নেই। কাশীনাথবাবু বলেন, ‘‘আতপ চালের গুঁড়ি আর রমার বেসনের (রম্ভা কলাই) মিশ্রণে তৈরি হয় ছোট ছোট দানা। ঘিয়ে ভাজার পর চিনির রসে ডুবিয়ে নিলেই হল। তবে স্বাদ আনতে হলে, মেশিনে গুঁড়ো নয়, চাই ঢেঁকিতে গুঁড়ো করা আতপ চাল।’’ তবে সাদা বোঁদের স্বাদের তারতম্য যাতে না হয় সে জন্য দোকানে অন্য কারিগর থাকলেও সাদা বোঁদে তৈরির ভারটা নিজের হাতেই তুলে নিয়েছেন কাশীনাথবাবু। তাঁর কাছেই জানা গেল, এই বোঁদের আর এক বৈশিষ্ট্য এর আয়ু। প্যাকেটে ভরে রাখলেও এক মাস ভাল থাকবে। দামেও লাল-হলুদ বোঁদের তুলনায় একটু সস্তা, ৮০ টাকা প্রতি কিলো।

বর্ধমানের সীতাভোগ আর মিহিদানা, শক্তিগড়ের ল্যাংচা, কে সি দাসের রসগোল্লার ব্র্যান্ডের তকমা সাদা বোঁদের কোথায়? এর বাজার বাড়ানো নিয়েই বা কী ভাবছেন এখানকার ব্যবসায়ীরা?

এক ব্যবসায়ী শান্তিনাথ মোদক বলেন, ‘‘স্থানীয় বাজারেই সাদা বোঁদের যা চাহিদা, তার জোগানেই হিমসিম খেতে হয়। তা ছাড়া স্থান সঙ্কুলানের অসুবিধায় দোকানের সংখ্যাও বাড়ানোর উপায় নেই। কারণ এখানকার প্রায় ৭৫ শতাংশ জায়গাই রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশন কর্তৃপক্ষের অধিগৃহীত। এ ছাড়া অন্যান্যদের জায়গা রয়েছে।’’ তবে অর্ডার থাকলে অন্যত্রও সরবরাহ করা হয়, জানালেন অন্য ব্যবসায়ীরা।

(শেষ)

ছবি: মোহন দাস।

piyush nandi pijush nandi sellable sweet kamarpukur shri ramkrishna white bondey
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy