Advertisement
E-Paper

করোনা-আবহে পড়াশোনাও ভার্চুয়াল, কদর বাড়ছে স্মার্টফোনের

করোনা আবহে কাজের বাজার সঙ্কুচিত হয়েছে। পরিবহণ সমস্যা এখনও মেটেনি। বহু মানুষ দুশ্চিন্তায় ভুগছেন। এর মধ্যেও কেউ কেউ নিজেদের উদ্যোগে খুঁজে নিচ্ছেন উপার্জনের নয়া ক্ষেত্র বা উপায়। সে সব উদ্যোগ নিয়ে আনন্দবাজারের প্রতিবেদন।করোনা বঙ্গবাসীর জীবনে এনেছে বিপুল পরিবর্তন। তার ছোঁয়া লেগেছে পড়ুয়াদের জীবনেও।

প্রকাশ পাল

শেষ আপডেট: ১৩ অগস্ট ২০২০ ০৮:১৮
চলছে অনলাইনে পড়াশোনা। বুধবার মশাটে। ছবি: দীপঙ্কর দে

চলছে অনলাইনে পড়াশোনা। বুধবার মশাটে। ছবি: দীপঙ্কর দে

স্কুল বন্ধ। হারিয়ে গিয়েছে কচিকাঁচাদের কিচিরমিচির। পড়াশোনা থেকে গল্পগুজব— সবই চলছে স্মার্ট ফোনে। করোনা-আবহে কচিকাঁচাদের দুষ্টুমি-ও এখন ‘ভার্চুয়াল’।

দু’টি ক্লাসের মাঝে ১৫ মিনিটের বিরতি। স্কুল খোলা থাকলে সেই সময়ে একে অপরের উপরে ‘আছড়ে পড়ত’ সহপাঠীরা। জামা ধরে টানা, ঘুসি মারা বা ভেংচি কাটা, সবই চলত। বিরতি শেষ হতেই সবাই এক ছুটে হাজির হত ক্লাসে। তারপর ডুব দিত বইয়ের পাতায়। লকডাউন পর্বেও এর ধারাবাহিকতা বজায় রয়েছে। তবে ফারাক একটাই। পড়াশোনা হোক বা হট্টগোল—সবটাই চলছে স্মার্টফোনে।

করোনা বঙ্গবাসীর জীবনে এনেছে বিপুল পরিবর্তন। তার ছোঁয়া লেগেছে পড়ুয়াদের জীবনেও। ‘নিউ নর্মাল’ জীবনে মোবাইল ফোনের পর্দা ছাত্রছাত্রীদের কাছে কখনও ক্লাসরুম, কখনও স্কুলের মাঠ। বিশেষত, বেসরকারি স্কুলের খুদে পড়ুয়ারা দ্রুত নিজেদের খাপ খাইয়ে নিয়েছে নয়া এই ব্যবস্থায়। শহর থেকে গ্রাম— সর্বত্রই স্মার্টফোন কেনার হিড়িক পড়েছে। অনেকে ধারদেনা করেও কিনছেন। না-হলে ছেলেমেয়ে পিছিয়ে পড়বে যে! অনেকে বলছেন, লকডাউনে চার দেওয়ালের মধ্যে বন্দি থাকতে থাকতে ছেলেমেয়ের জীবনে একঘেয়েমি আসছে। নিঃসঙ্গতা কাটাচ্ছে স্মার্টফোন।

শ্রীরামপুরের মাহেশের বাসিন্দা তনুশ্রী ভট্টাচার্য তারকেশ্বর ব্লকের বালিগোড়ি অধরমণি দত্ত বিদ্যামন্দিরের বাংলার শিক্ষিকা। তাঁর মেয়ে ইন্দ্রাবতী ডানকুনির একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী। সে জানায়, টিফিনের সময় স্কুলের মাঠে রীতিমতো দৌড়ঝাঁপ করত তারা। ফ্ল্যাটের কাছেই বৈষ্ণবপাড়ায় মামার বাড়িতে গিয়ে বিকেলে সাইকেল চালানো, ব্যাডমিন্টনে মেতে থাকত। লকডাউনে সব বন্ধ। তাই অনলাইনে ক্লাসের ফাঁকে মোবাইল ফোনেই চলছে বন্ধুদের সঙ্গে যাবতীয় আলোচনা। তনুশ্রী বলেন, ‘‘চার দেওয়ালের মধ্যে আবদ্ধ থাকায় লকডাউনের প্রথম দিকে মেয়ের মধ্যে কিছুটা মনমরা ভাব লক্ষ্য করছিলাম। অনলাইন ক্লাস ওকে রেহাই দিয়েছে। শুধু বন্ধু নয়, শিক্ষিকাদের অভাবও অনুভব করছিল মেয়ে।’’ নিজের স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের মধ্যেও এমনটা লক্ষ্য করেছেন ওই শিক্ষিকা।

বাড়িতে স্মার্টফোন না থাকায় বৈদ্যবাটী বিদ্যানিকেতনের পড়ুয়া জয় মণ্ডল অনলাইন ক্লাসে যোগ দিতে পারছিল না। তাঁর বাবা রাজমিস্ত্রি। ব্যাঙ্কঋণ নিয়ে দিন পনেরো আগে প্রায় সাড়ে ১২ হাজার টাকা দিয়ে ছেলেকে স্মার্টফোন কিনে দিয়েছেন। হরিপালের দ্বারহাট্টা গ্রামের সঞ্জয় গুঁইও ছেলে রাহুলের জন্য স্মার্টফোন কিনেছেন ধারদেনা করে। অনলাইন ক্লাস বাদেও ইন্টারনেটে জীবন বিজ্ঞান, ভৌতবিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয় খুঁজছে পড়ুয়ারা। ইউটিউবের ব্যবহারও বেড়েছে। করোনা-পরিস্থিতিতে বন্ধুদের সঙ্গে ক্রিকেট খেলা বন্ধ। দুধের স্বাদ ঘোলে মেটাতে মোবাইলেই খেলছে ক্রিকেট। রাহুলের দাদা সৌরেন স্নাতক। চাকরির পরীক্ষার প্রস্তুতি হচ্ছেন। কাজে লাগাচ্ছেন স্মার্টফোনকে।

সঞ্জয়ের স্কুল দ্বারহাট্টা রাজেশ্বরী ইনস্টিটিউশনের প্রধান শিক্ষক গোপা‌লচন্দ্র ঘোষ বলেন, ‘‘পরিস্থিতি কবে স্বাভাবিক হবে, জানি না। এই পরিস্থিতিতে স্মার্টফোন ছাড়া গতি নেই। কষ্ট করেও অনেকে ছেলেমেয়েকে স্মার্টফোন কিনে দিচ্ছেন। কিন্তু সবাই তা পারছেন না। এই খামতির জন্য আমাদের মতো স্কুলে অনলাইনের সুফল সবাই পাচ্ছে না।’’ একই অভিমত বৈদ্যবাটী বিদ্যানিকেতনের প্রধান শিক্ষক প্রিয়রঞ্জন ঘটকের।

অনেকে বলছেন, পরিস্থিতি না শুধরোলে সরকার সাইকেল না-দিয়ে পড়ুয়াদের জন্য স্মার্টফোনের ব্যবস্থা করুক। অন্তত, যাদের বাড়িতে স্মার্টফোন নেই, তাদের কথা ভাবা দরকার। ক্লাসের পড়াশোনা অনলাইনে কতদূর সম্ভব, তা নিয়ে বহু শিক্ষক-শিক্ষিকা সন্দিহান। তবু, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে আপাতত ক্লাসরুমের বিকল্প হিসাবে মোবাইল ফোনকেই আঁকড়ে ধরতে হচ্ছে তাঁদের।

Coronavirus in West Bengal Online Teaching Smartphones
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy