Advertisement
০৬ মে ২০২৪
শেষকৃত্যের জোগাড়ও সারা

মাকে খুনের অভিযোগে ধৃত ছেলে

সাত সকালে ভাগ্নের ফোন পেয়েছিলেন মামা, ‘মা মারা গিয়েছে। তুমি চলে এসো’। ফোন পেয়ে বোনের বাড়িতে পৌঁছে যান তিনি। কিন্তু আসার পর সব দেখে তিনি হতভম্ব হয়ে যান। দেখেন ঘরের মধ্যে বোনের রক্তাক্ত দেহ পড়ে।

গারদে: ধৃত ছেলে দীপঙ্কর সাহা। নিজস্ব চিত্র

গারদে: ধৃত ছেলে দীপঙ্কর সাহা। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
উলুবেড়িয়া শেষ আপডেট: ১৩ এপ্রিল ২০১৭ ০১:৩৫
Share: Save:

সাত সকালে ভাগ্নের ফোন পেয়েছিলেন মামা, ‘মা মারা গিয়েছে। তুমি চলে এসো’। ফোন পেয়ে বোনের বাড়িতে পৌঁছে যান তিনি। কিন্তু আসার পর সব দেখে তিনি হতভম্ব হয়ে যান। দেখেন ঘরের মধ্যে বোনের রক্তাক্ত দেহ পড়ে। পাশেই পড়ে রক্তমাখা কাটারি। ঘরের বাইরে মৃতের শেষকৃত্যের জন্য রাখা জিনিসপত্র। বাইরে ভাগ্নে দীপঙ্কর সাহাকে ধরে রেখেছেন গ্রামের মানুষ। মামা শুভ নায়েকের অভিযোগ পেয়ে দীপঙ্করকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

বুধবার সকালে উলুবেড়িয়ার বীরশিবপুর গ্রামে বৃদ্ধা মিঠু সাহার (৬০) এ হেন মৃত্যুতে এলাকায় উত্তেজনা ছড়ায়।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে খবর, এদিন সকাল সাড়ে নটা নাগাদ গ্রামের মহিলারা দীপঙ্করের বাড়ির পাশের পুকুরে বাসন মাজছিলেন। তাঁরা দেখেন দীপঙ্করের বাড়ির পাশের নর্দমা থেকে পুকুরে গড়িয়ে আসছে রক্ত। তাঁদের সন্দেহ হওয়ায় সকলে মিলে দীপঙ্করের বাড়িতে যান। যে ঘরের সঙ্গে নর্দমার যোগ ছিল সেই ঘরে ঢুকে তাঁরা দেখেন মিঠুদেবীর ক্ষতবিক্ষত দেহ মেঝেতে পড়ে। দেহের পাশে পড়ে কাটারি। মেঝেতে পড়ে থাকা রক্তই চুঁইয়ে নর্দমা দিয়ে পুকুরে পড়ছে। বারান্দায় বসেছিল দীপঙ্কর। মহিলাদের আসতে দেখে সে পালাতে গেলে গ্রামের লোকজন তাকে ধরে ফেলেন। ইতিমধ্যে দীপঙ্করের মামা আমতার রসপুর গ্রাম থেকে হাজির হন। দেখেন বোনের শেষকৃত্যের জন্য প্রয়োজনীয় ধূপ, ফুলের মালা কেনা হয়েছে। সে সব পড়ে আছে বারান্দায়।

পুলিশের দাবি, জেরায় ধৃত জানিয়েছে, মাকে উচিত শিক্ষা দিতেই সে কুপিয়েছিল। মা যে মরে যাবে তা ভাবতে পারেনি। তাই মা মারা যাওয়ার পরে মামাকে খবর দিয়েছিল। কাটারিটি উদ্ধার করেছে পুলিশ।

পুলিশ জানিয়েছে, বুধবার ভোরে সে তার মাকে খুন করে। বাড়িতে একটি কাটারি ছিল। তা দিয়েই মায়ের শরীরে সে কোপ মারতে থাকে। মা মারা গেলে সে তাঁর দেহ মেঝেতে ফেলে রাখে। তারপরে মামাকে ফোন করে বলে, ‘মা মরে গিয়েছে, তুমি চলে এসো’।

কিন্তু কেন খুন?

গ্রামবাসীরা জানান, দীপঙ্করের বাবা কলকাতায় একটি মদের দোকানে চাকরি করতেন। দোতলা বাড়ি কিছু জমিজমা রয়েছে তাঁদের। বছর দশেক আগে তিনি মারা যান। দীপঙ্কর স্থায়ী কোনও কাজ করত না। প্রায়ই মাকে টাকা চাইত। তিনি না দিতে পারলে ঝগড়াঝাটি করত দীপঙ্কর। সে বিয়েও করেছে। তার দুটি পুত্রসন্তান আছে। কিন্তু শ্বশুরবাড়ি থেকেও বার বার টাকা চাইত সে। তা নিয়ে অশান্তিতে তার স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে বাপের বাড়ি চলে যান। ছেলের অত্যাচারে মিঠুদেবী কিছুদিন আগে বসন্তপুরে বাপের বাড়িতে চলে গিয়েছিলেন। দিন কয়েক আগে বাড়িতে ফিরেছিলেন।

স্থানীয় সূত্রে খবর, জমিজমা বিক্রি নিয়েও মায়ের সঙ্গে বিবাদ ছিল দীপঙ্করের। সে জমি বিক্রি করতে চাইলেও মায়ের নামে দলিল থাকায় পারছিল না। গ্রামবাসীরা জানান, মঙ্গলবার বিকেল থেকে মায়ের সঙ্গে ঝগড়া হচ্ছিল দীপঙ্করের। কিন্তু পারিবারিক বিষয় বলে তাঁরা হস্তক্ষেপ করতে চাননি। তাঁদের অনুমান জমি নিয়ে বিবাদের কারণেই মাকে খুন করেছে দীপঙ্কর।

প্রাথমিক তদন্তেও পুলিশ জানিয়েছে সম্পত্তি নিয়ে বিবাদের কারণেই এই খুন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Son Murder Mother
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE