Advertisement
E-Paper

মাছ আর পাখির টানে স্কুলে ফিরছে পড়ুয়ারা

নিজেদের হাতে লাগানো আনাজ পাতে পড়লে আলো খেলে যায় ছোট ছোট মুখগুলোতে।

সুব্রত জানা

শেষ আপডেট: ১৫ জানুয়ারি ২০২০ ০১:১১
মনোযোগী: অ্যাকোয়ারিয়াম আর পাখির খাঁচার সামনে পড়ুয়ারা। নিজস্ব চিত্র

মনোযোগী: অ্যাকোয়ারিয়াম আর পাখির খাঁচার সামনে পড়ুয়ারা। নিজস্ব চিত্র

প্রতিদিন স্কুলে ঢুকেই এখন পাখির ছানাগুলো কত বড় হল, একবার দেখে নেওয়া চাই-ই খুদে পড়ুয়াদের।

মাছেদের খেতে দেওয়ার দায়িত্ব নিতে হুড়োহুড়ি পড়ে যায় পড়ুয়াদের মধ্যে।

নিজেদের হাতে লাগানো আনাজ পাতে পড়লে আলো খেলে যায় ছোট ছোট মুখগুলোতে।

এভাবেই খাঁচার বদ্রিকা আর অ্যাকোয়ারিয়ামের মাছেরা বেঁধে রেখেছে হাওড়া গ্রামীণের উলুবেড়িয়া-২ ব্লকের চকবৃন্দাবনপুর জুনিয়র বেসিক স্কুলের পড়ুয়াদের। তফসিলি এই এলাকার পড়ুয়াদের স্কুলমুখী করতে এই পথ নিয়েছেন স্কুলের শিক্ষকরা। তাঁদের দাবি, এর ফলে সুফলও মিলছে।

১৯৪৬ সালে গ্রামে এই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পথ চলা শুরু। বেশ কয়েকটি গ্রামের শিশুরা এখানে পড়াশোনা করতে আসত। কিন্তু কয়েক বছর আগে স্কুলছুট ক্রমশ বাড়তে থাকে। স্কুলের বর্তমান প্রধান শিক্ষক শশীশেখর রাণা বলেন, ‘‘পাখি, মাছ বা যে কোনও পোষ্যই শিশুদের কাছে আকর্ষণীয়। তাই ধীরে ধীরে আমরা খাঁচা তৈরি করে পাখি পুষতে শুরু করি। অ্যাকোয়ারিয়ামে রাখা হয় মাছ। শুধু তাই নয়, ওদের খাওয়ানো বা দেখভালের দায়িত্বও দিতে শুরু করি খুদে পড়ুয়াদের। তাতেই কাজ হয়।’’ স্কুলের আর এক শিক্ষক জানান, মাছ আর পাখির মাধ্যমে পড়ুয়াদের সংখ্যার পাঠও দেওয়া হয়। শেখানো হয় রংও।

শিশুদের পড়ানোর জন্য স্কুলে বসানো হয়েছে প্রজেক্টর। আর পাশাপাশি মিড ডে মিলের রান্নার সব আনাজও চাষ করানো হয় স্কুলের লাগোয়া এক ফালি জমিতে। পড়ুয়াদের হাতে-কলমে চাষের পাঠ দেওয়া হয়। শিক্ষকদের তত্ত্বাবধানে চলে গাছে নিয়মিত জল দেওয়া, সেই আনাজ জমি থেকে তোলা—সব কিছু।

পোষ্য রাখলেই যে হয় না, তার যে যত্নের প্রয়োজন, এই উদ্যোগের মাধ্যমে সেই শিক্ষা পাচ্ছে শিশুরা। পোষ্যদের যত্ন, তাদের খাওয়ানো, অসুস্থ হলে পরিচর্চার মাধ্যমে ধীরে ধীরে দায়িত্বের পাঠও পাচ্ছে এই পড়ুয়ারা। শিক্ষকরা জানান, লম্বা ছুটির সময়ও মাছ-পাখির খোঁজ নিয়ে যায় তারা। পালা করে দিয়ে যায় খাবারও। স্কুলের প্রধান শিক্ষকের কথায়, ‘‘এই পৃথিবীতে মানুষের মতোই পাখি, মাছ, পশুদেরও সমান ভূমিকা রয়েছে, সেটা আমরা শেখাই পড়ুয়াদের। কোনও প্রাণীর উপর অত্যাচার হতে দেখলে, ওরা প্রতিবাদও করে।’’

অভিভাবিকা লিপিকা মণ্ডল, কাজল সর্দার বলেন, ‘‘স্কুল কামাই করতেই চায় না ছেলেমেলেরা। ছুটির দিনেও স্কুলে আসার জন্য বায়না করে। আর বাড়ি ফিরে মাছ-পাখির কত গল্প!’’ সমর সর্দার নামে এর এক অভিভাবক বলেন, ‘‘মেয়ে স্কুলে চাষ শিখে গিয়ে বাড়িতে টবে ধনেপাতা চাষ করেছে। আর সেই পাতা তরকারিতে দেওয়ায় কী খুশি!’’

স্কুলের এই উদ্যোগের প্রশংসা করলেন উলুবেড়িয়া-২-এর বিডিও নিশীথকুমার মাহাতো। তিনি বলেন, ‘‘শিশুদের প্রাণীদের প্রতি সহানুভূতিশীল করে তোলা একটা বড় কাজ। সেই কাজ করছেন ওই শিক্ষকরা। এটা শিক্ষণীয়।’’

School Student Aquarium Fish Bird
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy