Advertisement
১৭ এপ্রিল ২০২৪

নাবালিকা বিয়ে বন্ধে মিশল বাস্তব ও অভিনয়

কপালে তিলক কেটে নামাবলি গায়ে বিড়বিড় করে মন্ত্র পড়ছেন পুরুতমশাই। বিয়ে হচ্ছে নাবালিকার। এমন সময় পুলিশ নিয়ে হাজির বিডিও। শুক্রবার বিকেলে হরিপালের জামাইবাটি উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে ওই দৃশ্য আসলে স্কুলের বার্ষিক ক্রীড়ার  ‘যেমন খুশি সাজো’ প্রতিযোগিতায় বাল্য-বিবাহ বন্ধের অভিনয়।

অভিনয়: যেমন খুশি সাজো প্রতিযোগিতার একটি মুহূর্ত। নিজস্ব চিত্র

অভিনয়: যেমন খুশি সাজো প্রতিযোগিতার একটি মুহূর্ত। নিজস্ব চিত্র

প্রকাশ পাল
হরিপাল শেষ আপডেট: ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০২:০৪
Share: Save:

চলছিল অভিনয়। হঠাৎ সামনে বাস্তব!

কপালে তিলক কেটে নামাবলি গায়ে বিড়বিড় করে মন্ত্র পড়ছেন পুরুতমশাই। বিয়ে হচ্ছে নাবালিকার। এমন সময় পুলিশ নিয়ে হাজির বিডিও। শুক্রবার বিকেলে হরিপালের জামাইবাটি উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে ওই দৃশ্য আসলে স্কুলের বার্ষিক ক্রীড়ার ‘যেমন খুশি সাজো’ প্রতিযোগিতায় বাল্য-বিবাহ বন্ধের অভিনয়। আর তখনই স্কুলে হাজির সত্যিকারের পুলিশ। সঙ্গে স্কুলেরই এক ছাত্রী, মাথায় সিঁদুর! যাকে শ্বশুরবাড়ি থেকে উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। এমন অদ্ভুত সমাপতনে মাঠে উপস্থিত সকলেই তখন হতবাক। শিক্ষক-শিক্ষিকারাও থ!

এই স্কুলেরই অষ্টম শ্রেণির ওই ছাত্রী সম্প্রতি পালিয়ে এক তরুণকে বিয়ে করে সংসার শুরু করেছিল। দিনকয়েক আগে স্কুলের কন্যাশ্রী ক্লাবের মাধ্যমে প্রধান শিক্ষক সন্দীপ সিংহের কানে সে খবর পৌঁছয়। গোটা বিষয়টি জানিয়ে হরিপালের বিডিও বিমলেন্দু নাথকে চিঠি লেখেন সন্দীপবাবু। প্রশাসনের আধিকারিকেরা খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, মেয়েটির বয়স সবে চোদ্দো পেরিয়েছে। ছেলেটিরও বিয়ের বয়স হয়নি। সে কলকাতায় কাঠের কাজ করে। শুক্রবার ব্লক অফিস, থানা এবং চাইল্ড লাইনের আধিকারিকেরা ছেলেটির বাড়িতে গিয়ে ওই ছাত্রীকে উদ্ধার করেন। পুলিশ মেয়েটিকে নিয়ে স্কুলে যায় বয়স সংক্রান্ত নথিপত্র নেওয়ার জন্য। তখন সেখানে ‘যেমন খুশি সাজো’ প্রতিযোগিতা চলছে।

বাল্য-বিবাহ হলে প্রশাসন যে ব্যবস্থা নেয়, হাতেকলমে সেই প্রমাণ পেয়ে গ্রামের মানুষ তখন স্থানুবৎ দাঁড়িয়ে। সুযোগ হাতছাড়া করতে চাননি শিক্ষক-শিক্ষিকারা। তাঁরা নাবালিকা বিয়ে বন্ধ করা নিয়ে মানুষকে বোঝাতে শুরু করেন। ছাত্রছাত্রীদেরও বোঝানো হয়। অনেক অভিভাবকই জানিয়ে দেন, কম বয়সে মেয়ের বিয়ে দেওয়ার কথা ভাববেন না। অনেক মেয়ের মুখেও শোনা যায়, পড়াশোনা করে তারা নিজের পায়ে দাঁড়াতে চায়। শনিবার মেয়েটিকে চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটিতে পাঠানো হয়। মেয়েটির অভিভাবকেরা মুচলেকা দিয়ে জানান, আঠারো বছর না হলে তাকে সংসার করতে পাঠানো হবে না।

কয়েক বছর ধরেই নাবালিকা বিয়ে বন্ধে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন‌ স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারা। পোস্টার সাঁটা, অভিভাবকদের হাতে লিফলেট পৌঁছে দেওয়া— সবই হয়েছে। এর আগেও নাবালিকার বিয়ের তোড়জোড় হচ্ছে শুনে তা আটকানোর চেষ্টা করেছেন তাঁরা। প্রধান শিক্ষক সন্দীপবাবুর কথায়, ‘‘অনেকেই সচেতন হয়েছেন। তবে কম বয়সে মেয়েদের বিয়ে দেওয়ার প্রবণতা এখানে এখনও বন্ধ হয়নি। নাবালিকা বিয়ের খবর পেলে চোখ বুজে থাকব না। প্রশাসনের সাহায্যে তা বন্ধের চেষ্টা করব।’’

‘যেমন খুশি সাজো’ প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান পেয়ে গিয়েছে নাবালিকা বিয়ে বন্ধের অভিনেত্রী-ছাত্রীরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Go as You Like Minor Marriage
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE