১০ টা ৭ মিনিট। ঝাঁট দেওয়া হচ্ছে দফতর।
ক্ষমতায় এসে মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যে কর্ম সংস্কৃতির হাল ফেরানোর উপরে জোর দিয়েছিলেন। যদিও বিভিন্ন সময়ে সরকারি ছুটির তালিকা বাড়ানোয় তাঁর সিদ্ধান্ত নিয়ে বিতর্কও হয়েছে। তারপরেও অবশ্য রাজ্যে কর্ম সংস্কৃতির হাল আগের সরকারের চেয়ে ভাল বলে তাঁর দাবি। জেলায় জেলায় প্রশাসনিক কাজকর্মের গতি বাড়াতে ও সেই সঙ্গে বিভিন্ন প্রকল্পের হাল-হকিকত জানতে মুখ্যমন্ত্রী বিভিন্ন জেলায় প্রশাসনিক বৈঠক করেন। সোমবার হাওড়ার শরৎসদনে জেলার প্রশাসনিক কর্তাদের নিয়ে তেমনই বৈঠক ছিল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। সেখানেও মুখ্যমন্ত্রী কর্মসংস্কৃতির উন্নতিতে জোর দিয়েছেন। তবে সেই বার্তা যে অনেক ক্ষেত্রেই সরকারি কর্মীদের কানে পৌঁছচ্ছে না জেলায় মুখ্যমন্ত্রীর প্রশাসনিক বৈঠকের দিনেই তা দেখা গেল উলুবেড়িয়া মহকুমায় এক সরকারি দফতরে।
এ দিন সকাল ১০টা নাগাদ হঠাই উলুবেড়িয়া ২ নম্বর বিডিও অফিসে হাজির হন এই প্রতিবেদক। কিন্তু কোথায় কর্মীরা? ঘড়িতে তখন ১০টা বেজে ৭ মিনিট। দেখা গেল এক মহিলা অফিসের ভিতরে ঝাঁট দিচ্ছেন। নাম বললেন পুষ্প বাগ। ১০টা বেজে ১০ মিনিট। কারও দেখা নেই। তবে ১০টা বাজার আগে থেকেই দফতরের সামনে ‘কন্যাশ্রী’- ফর্ম জমা দেওয়ার জন্য লাইন পড়ে গিয়েছে। এ ছাড়াও বিভিন্ন কাজের জন্য আসা লোকের ভিড়ও দেখা গেল। ১০টা ২৬ মিনিট। হন্তদন্ত হয়ে দফতরে ঢুকলেন আপার ডিভিশন ক্লার্ক শৈল গুছাইত। দেরি হয়ে গেল? প্রশ্ন শুনে তারই পুনরাবৃত্তি করে বললেন, ‘‘ট্রেজারি গিয়েছিলাম তো, তাই।’’ ঘড়িতে ১০টা ৪০ মিনিট। বাইরে ক্রমেই অধৈর্য্য হচ্ছে ভিড়। দফতরে ঢুকলেন কন্যাশ্রী বিভাগের অফিসার ইমরান কাজী। ঢুকেই বলতে লাগলেন, ‘‘কী করব, বাস লেট। অটো দেরি করিয়ে দিল।’’ তবে কাকে বললেন, বোঝা গেল না। দশ মিনিট পরে ঢুকলেন এসজিএসওয়াই গ্রুপের কাজকর্ম দেখভালের দায়িত্বে থাকা সুমিতা মালিক। ১০টা ৫৫ মিনিট, ঢুকলেন আর এক কর্মী মনোরঞ্জন সাঁতরা। ছবি তুলতেই প্রশ্ন, ‘কে আপনি?’ সব জেনে তাঁর মন্তব্য, ‘‘ছবি তুলে কী করবেন! অফিসেও ক্যামেরা লাগানো আছে। কখন আসি, কখন যাই সব দেখা যায়।’’ বুক ফুলিয়ে সামনে দিয়ে ভিতরে চলে গেলেন। ফিশারি বিভাগের অফিসার অরুণিমা শীল যখন ঢুকলেন, ঘড়ির কাঁটা ১১টা পেরিয়ে গিয়েছে। নাম জিজ্ঞাসা করতেই তেড়ে এলেন, ‘‘কে আপনি?’’ পরিচয় দেওয়ার পরে ফের বললেন, ‘‘ও সব ছবি টবি তুলে কিছু হবে না। কতদূর থেকে আসতে হয় জানেন। যা জানার বিডিও সাহেবের কাছে জানবেন।’’
বিডিও দেবব্রত রায়। অনুমতি নিয়ে ঘরে ঢুকে কর্মীদের দেরি নিয়ে প্রশ্ন করতেই তাঁর সহাস্য উত্তর, ‘‘আসলে অনেক দূর থেকে তো সবাইকে আসতে হয়। আমি অফিসের কোয়ার্টারে থাকি। আমাকে সব সময় পাবেন। তবে যাঁরা দেরিতে আসছেন তাঁদের ‘অ্যাবসেন্ট’ করে দেওয়া হবে।’’
কথা শেষ হতে না হতেই ছিটকে ঘরে ঢুকলেন পিডিও মৌসুমী সেনগুপ্ত। ঘড়ির কাঁটায় ১১টা ১০ মিনিট। ‘‘স্যার, আমি অনেক আগেই এসেছি। খাতায় সই করতে ভুলে গিয়েছি।’’ কথা শুনে হেসে হাজিরা খাতা এগিয়ে দিলেন বিডিও।
ঘড়িতে সাড়ে ১১টা। প্রশাসনিক বৈঠকে যোগ দিতে বেরিয়ে গেলেন বিডিও। বেরিয়ে আসার সময় ভিতর থেকে ভেসে এল হাসি-ঠাট্টার আওয়াজ।
—নিজস্ব চিত্র।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy