Advertisement
E-Paper

জাতীয় সাঁতারে রেকর্ডের লক্ষ্যে ছোট্ট পৃথা

একরত্তি মেয়েটাকে দেখে মায়ের দিকে বিস্ময়ে তাকিয়েছিলেন প্রশিক্ষক। সেদিন আর সুইমিং পুলে নামা হয়নি মেয়ের। কয়েক মাস পরে ফের মেয়েকে নিয়ে যান মা।

প্রকাশ পাল

শেষ আপডেট: ১৭ জুন ২০১৬ ০৭:৫৯
পৃথার ছবিটি তুলেছেন তাপস ঘোষ।

পৃথার ছবিটি তুলেছেন তাপস ঘোষ।

এ জলে নামবে?

একরত্তি মেয়েটাকে দেখে মায়ের দিকে বিস্ময়ে তাকিয়েছিলেন প্রশিক্ষক। সেদিন আর সুইমিং পুলে নামা হয়নি মেয়ের। কয়েক মাস পরে ফের মেয়েকে নিয়ে যান মা। কোচকে অনুরোধ করেন, মেয়েকে সুইমিং পুলে নামাতে। বলেছিলেন, মেয়ে যদি হাবুডুবু খায়, তা হলে আর আসবেন না। মায়ের কথা ফেলতে পারেননি কোচ। জলে নামার পর মেয়ের হাত-পা ছোড়া তাক লাগিয়ে দিয়েছিল‌ কোচকে।

তারপর সমানে চলতে থাকে প্রশিক্ষণ। তবে নিয়মের গেরোয় রাজ্য স্তরের প্রতিযোগিতায় নামার ছাড়পত্র মিলেছে নয় বছরে পা দেওয়ার পর। সম্প্রতি রিষড়ায় রাজ্য সাঁতার প্রতিযোগিতায় নেমেছিল হুগলির সিমলাগড়ের চাপাহাটি কলোনির পৃথা দেবনাথ। নেমেই বাজিমাত। বালিকাদের ২০০ মিটার ইন্টার মিডলেতে রাজ্য রেকর্ড করেছে সে। সময় ০৩:০৮:০২ মিনিট। ৬টি ইভেন্টে নেমে পৃথার ঝুলিতে একটি সোনা ছাড়াও দু’টি রুপো ও দু’টি ব্রোঞ্জ। একটি ইভেন্টে চতুর্থ স্থানে শেষ করে সে। চলতি মাসে বেঙ্গালুরুতে জাতীয় সাঁতার প্রতিযোগিতায় নামবে সে। কিন্তু প্রতিভাবান মেয়ের ভবিষ্যৎ নিয়ে এখন থেকে চিন্তায় পড়েছেন বাবা-মা। কারণ টাকার জোগান। অসচ্ছল পরিবারে স্ত্রী, মেয়ে আর অবিবাহিতা বোনকে নিয়ে টেনেটুনে সংসার চালাতে হয় ভোলানাথবাবুকে। সিমলাগড় স্টেশনের কাছে ছোট্ট চায়ের দোকান থেকে রোজগার যৎসামান্য। তার উপর টাইফয়েড হওয়ায় গত কয়েক মাস দোকান খুলতে পারেননি। স্ত্রী ঝুমাদেবীও অসুস্থ। তবু মেয়েকে ‘কোনি’ তৈরি করার লক্ষ্যে অটুট বাবা-মা।

চুঁচুড়া সুইমিং ক্লাবে কোচ নির্মল দত্তের তত্ত্বাবধানে এখন পৃথার প্রশিক্ষণ চলছে। ভোর সাড়ে ৪টের ট্রেন ধরে মেয়েকে নিয়ে আসেন ঝুমাদেবী। অনুশীলন সেরে বেলা ১০টা নাগাদ বাড়ি ফিরেই স্কুল। চাপাহাটি জিএসপি বিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রীটি স্কুল থেকে ফিরেই ফেল বিকেলে নেমে পড়ে চুঁচুড়ায় সুইমিং পুলে। বাড়ি ফিরতে রাত। ছোট্ট মেয়েটার বিশ্রাম কার্যত হয় না বললেই চলে। কিন্তু, জলের টানে একদিনও প্র্যাকটিস কামাই করতে রাজি নয় মেয়ে, জানালেন মা।

বাবা ভোলানাথবাবুও ফুটবল খেলতেন। মহারাষ্ট্রের হয়ে ’৯২ সালে জাতীয় প্রতিযোগিতায় খে‌ল‌েছেন। ’৯৬তে মহমেডা‌ন স্পোর্টিংয়ে খেলেন। কিন্তু নানা কারণে ফুটবলকে বিদায় জানাতে হয়। বললেন, ‘‘মেয়ের যখন ৮ মাস বয়স, তখন ওর হা-পা ছো়ড়া ওকে নিয়ে পুকুরে চলে যেতাম। আমাকে তখনই ধরে জলের মধ্যে হাত-পা ছুড়ত, কোনও ভয়ডর ছিল না।’’ ঝুমাদেবী বলেন, ‘‘দু’বছর বয়সেই সাঁতরে পুকুরে এ পার-ও পার করতে শুরু করে। সাঁতারে ওর আগ্রহ দেখেই ওকে সুইমিং ক্লাবে নিয়ে যাই। প্রথমে ফিরিয়ে দিলেও পরে অবশ্য মেয়েকে সাঁতার শেখাতে রাজি হন ওর কোচ।’’

রাজ্য সাঁতার সংস্থার সভাপতি রামানুজ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘মেয়েটার প্রতিভা রয়েছে। তবে আর্থিক অসচ্ছলতা সত্ত্বেও ওর বাবা-মা যে ভাবে মেয়ের হয়ে লড়াই করছেন‌, সেটা প্রশংসনীয়।’’ বাবা-মা যখন টাকার চিন্তায় মগ্ন থাকলেও ছোট্ট পৃথার চোখ এখন বেঙ্গালুরুর দিকে।

Student Swimming
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy