Advertisement
০৫ মে ২০২৪

শিক্ষককে চড়, গ্রামবাসীর রোষে দম্পতি

শনিবার পান্ডুয়ার মাগুরা গ্রামের ঘটনা। পুলিশ অভিযুক্ত সহিদুল ইসলাম এবং তাঁর স্ত্রী রূপা বিবিকে আটক করেছে। গোটা ঘটনায় অপমানিত বোধ করছেন প্রদীপকুমার মণ্ডল নামে মাগুরা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ওই শিক্ষক।

শিক্ষক প্রদীপকুমার মণ্ডল

শিক্ষক প্রদীপকুমার মণ্ডল

নিজস্ব সংবাদদাতা
পান্ডুয়া শেষ আপডেট: ২০ অগস্ট ২০১৭ ০২:৪৫
Share: Save:

তিনি গ্রামের জনপ্রিয় শিক্ষক। বিপদে-আপদে মানুষের পাশে দাঁড়ান। অথচ, এক ছাত্রকে শাসন করার জন্য তার বাবা-মা এসে ওই শিক্ষককে মারধর করছেন, দেখে আর স্থির থাকতে পারেননি গ্রামবাসী। অভিভাবক-দম্পতিকে মারধর করে পুলিশের হাতে তুলে দিলেন তাঁরা। দম্পতির বাড়ি ভাঙচুর করা হয়। জ্বালিয়ে দেওয়া হয় তাঁদের মোটরবাইক।

শনিবার পান্ডুয়ার মাগুরা গ্রামের ঘটনা। পুলিশ অভিযুক্ত সহিদুল ইসলাম এবং তাঁর স্ত্রী রূপা বিবিকে আটক করেছে। গোটা ঘটনায় অপমানিত বোধ করছেন প্রদীপকুমার মণ্ডল নামে মাগুরা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ওই শিক্ষক। থানায় অভিযোগ দায়ের করার পরে তিনি বলেন, ‘’১৩ বছর এই স্কুলে শিক্ষকতা করছি। এই প্রথম কেউ আমার বিরুদ্ধে কথা বলল। খারাপ আচরণের জন্য আমি ছাত্রটিকে শুধু বকেছিলাম। গায়ে হাত দিইনি। তার পরে আদরও করেছিলাম। এ জন্য যে এমন ঘটবে, ভাবতে পারছি না।’’ পক্ষান্তরে, সহিদুলের দাবি, ‘‘প্রদীপবাবু ছেলেকে চড় মেরেছিলেন। শুনে মাথা গরম হয়ে যায়। তাই স্ত্রীকে নিয়ে প্রদীপবাবুর সঙ্গে কথা বলতে স্কুলে যাই। মারধর করিনি। কিন্তু গ্রামবাসীরা আমাদের কোনও কথা শুনলেন না।’’

পুলিশ জানায়, ওই শিক্ষক এবং গ্রামবাসীরা দম্পতির বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছেন। তদন্ত শুরু হয়েছে।

কী হয়েছিল এ দিন?

বিক্ষোভ: অভিযুক্তের বাইক পুড়িয়ে দিয়েছেন গ্রামবাসী।

স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ মিড-ডে মিল খাওয়ার সময় চতুর্থ শ্রেণির ওই ছাত্রটি তার সহপাঠীদের বিরক্ত করছিল। অভব্য আচরণও করে। সেই কারণে প্রদীপবাবু তাকে শাসন করেন। বেলা আড়াইটে নাগাদ স্কুল ছুটি হয়। ছাত্রটি বাড়ি ফিরে অভিভাবকদের কাছে প্রদীপবাবুর নামে নালিশ করে। ছেলের নালিশ শুনেই স্কুলে আসেন সহিদুল ও তাঁর স্ত্রী। প্রদীপবাবু তখন ভদ্রেশ্বরে বাড়ি ফেরার তোড়জোড় করছিলেন। দম্পতি তাঁর চুলের মুঠি ধরে তাঁরা চড়-থাপ্পড় মারেন বলে অভিযোগ। প্রদীপবাবুর চিৎকারে স্কুলের অন্য শিক্ষক এবং কিছু গ্রামবাসীও চলে আসেন। ওই দম্পতি তাঁদের দিকেও তেড়ে যান বলে অভিযোগ। এর পরে গ্রামবাসীরা একজোট হয়ে ওই দম্পতিকে মারধর করে আটকে রাখেন। তাঁদের বাড়িতে চড়াও হন। পুলিশ আসে। দম্পতিকে পুলিশের হাতে তুলে দেন গ্রামবাসী। তাঁদের গ্রেফতারের দাবি জানান। পুলিশ অভিযোগ খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিলে গ্রামবাসীরা শান্ত হন।

গ্রামবাসীদের মধ্যে ভক্ত হালদার, আব্দুল রউবরা বলেন, ‘‘প্রদীপবাবু আদর্শ শিক্ষক। মানুষের পাশে থাকেন। গ্রামের গরিব মেয়েদের বিয়েতে পাশে দাঁড়ান। কোনও ছাত্র স্কুলে না গেলে তার বাড়িতে গিয়ে খোঁজ নেন। তাঁর উপরে হামলা মেনে নেওয়া হবে না।’’ পান্ডুয়া পঞ্চায়েত সমিতির মাগুরা গ্রামের সদস্য মহম্মদ নূরশোভা বলেন, ‘‘মাস্টারমশাইকে একবার বদলি করা হচ্ছিল। আমরা যেতে দিইনি। আগামী দিনেও দেব না। তাঁর পাশে আমরা গ্রামের সবাই রয়েছি।’’

ছবি: সুশান্ত সরকার

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE