নির্মীয়মাণ সাঁতরাগাছি বাস টার্মিনাস। —নিজস্ব চিত্র।
আগে যানজট শুরু হত রাত ৯টা থেকে। চলত মাঝরাত পর্যন্ত। এখন শুরু হয় সকাল ১১টা থেকে। চলে দিনভর।
বতর্মানে এমনই অবস্থা কলকাতার সঙ্গে মুম্বই ও দিল্লি রোডের মতো দু’টি গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় সড়কের সংযোগকারী রাস্তা কোনা এক্সপ্রেসওয়ের। যানবাহনের উত্তরোত্তর সংখ্যাবৃদ্ধিতে এমনিতেই গতি কমে আসছিল এই ১১৭ নম্বর জাতীয় সড়কের। এ দিকে, ওই এক্সপ্রেসওয়ের পাশে তৈরি হচ্ছে সাঁতরাগাছি বাস টার্মিনাস। তাতেই সিঁদুরে মেঘ দেখতে শুরু করেছেন স্থানীয় মানুষ থেকে হাওড়া সিটি পুলিশের কর্তারাও। তাঁদের আশঙ্কা, টামির্নাস চালুর পরে আরও মন্থর হবে জাতীয় সড়কের গতি। বাড়বে দুঘর্টনাও।
পুলিশ জানায়, বতর্মানে কোনা এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে দৈনিক গড়ে যান চলে এক লক্ষের বেশি। যার মধ্যে আছে বড় ট্রেলার, ট্রাক, লরি, বাস, অজস্র ছোট গাড়ি ও দু’চাকার যান। পুলিশের মতে, নিত্য দিন যানবাহনের সংখ্যা বৃদ্ধির ফলে দু’টি সমস্যা তৈরি হয়েছে। এক দিকে বেড়েছে দুর্ঘটনা, অন্য দিকে কমেছে যানবাহনের গতি।
পুলিশের বক্তব্য, কোনা এক্সপ্রেসওয়ের যানজটের মূল কারণ অপরিসর সাঁতরাগাছি সেতু এবং গড়ফার কাছে পঞ্চবটি সেতু। এই দু’টিই রাস্তাই তুলনায় কম চওড়া। ফলে এমনিই কমে যায় যানবাহনের গতি। এ ছাড়া, সাঁতরাগাছি সেতুর মাঝের অংশ অস্বাভাবিক রকম উঁচু হওয়ায় ট্রেলার বা ট্রাক সেতুতে উঠতে অনেকটা সময় নেয়। খারাপও হয় আকছার। ফলে যানজট হয়ে যায়।
এক্সপ্রেসওয়ের যখন এই হাল, তখন রাস্তার পাশে মৌখালি এলাকায় পরিবহণ দফতরের উদ্যোগে তৈরি হচ্ছে দূরপাল্লার বাস টার্মিনাসটি। যেখান থেকে প্রতি দিন গড়ে ১৬০টি বাস যাবে ভিন্ রাজ্যে। পুলিশের বক্তব্য, প্রতি দিন বাসপিছু গড়ে তিনটি করে ছোট গাড়ি ও অন্য যান ওই বাসস্ট্যান্ডে মালপত্র ও যাত্রীদের নিয়ে আসবে। ফলে বিকেল থেকে এক্সপ্রেসওয়েতে বাড়বে আরও ৫০০ গাড়ির চাপ। বাড়বে পথচারীর সংখ্যা। সঙ্গে বাড়বে দুর্ঘটনাও।
এর উপর আবার ওই বাসস্ট্যান্ডের কাছে এক্সপ্রেসওয়ের উপর বাস ঘোরানোর জন্য তৈরি হয়েছে নতুন সিগ্ন্যাল ব্যবস্থা। পুলিশের মতে, সেখানে একটি বাস ঘোরাতে এক দিকের সমস্ত যান বন্ধ করে দিতে হবে এবং তাতে সময় লাগবে কমপক্ষে ২ থেকে ৩ মিনিট। কলকাতামুখী রাস্তায় বাস-বে হওয়ায় ওই রাস্তায় যনজট না হলেও মুম্বই রোডমুখী রাস্তায় এক কিলোমিটার লম্বা লাইন পড়ে যাবে।
বেতড় এলাকার বাসিন্দা বুদ্ধদেব সেনগুপ্ত বলেন, ‘‘বাস টামির্নাসটি চালু হলে কোনা এক্সপ্রেস যানজটে অবরুদ্ধ হয়ে যাবে। তাই অবিলম্বে প্রয়োজন একটি ফ্লাইওভার।’’
আগামী দিনে যে এক্সপ্রেসওয়ে অতিরিক্ত যনবাহনের চাপ সহ্য করতে পারবে না, রাজ্য পরিবহণ দফতরের কাছে আগেই সেই আশঙ্কা প্রকাশ করেছিল কেএমডিএ। ওই সংস্থার পক্ষ থেকে রাজ্য সরকারের কাছে বিদ্যাসাগর সেতু থেকে নিবড়া পর্যন্ত সাত কিলোমিটার লম্বা ফ্লাইওভারের প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। এর মধ্যে ডোমজুড়ের বিধায়ক তথা রাজ্যের সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় এই ফ্লাইওভারের পক্ষে পুলিশের এক অনুষ্ঠানে সওয়াল করেন। তিনি বলেন, ‘‘কোনা এক্সপ্রেসওয়েতে ফ্লাইওভারের ব্যাপারে বলেছিলাম, কোনও সংস্থাকে দিয়ে তা তৈরি করিয়ে তাদের টোল তোলার দায়িত্ব দিতে। তাতে খরচ লাগবে না। এ বিষয়ে আমি জাতীয় সড়ক কতৃর্পক্ষকে চিঠি দিচ্ছি, যাতে তাঁরা সেটি করে দেন।’’
সেচমন্ত্রীর বক্তব্যকে স্বাগত জানান হাওড়া সিটি পুলিশের ডিসি ট্রাফিক সুমিত কুমার। তিনি বলেন, ‘‘মন্ত্রীর সঙ্গে আমরা একমত। ফ্লাইওভার ছাড়া আগামী দিনে কোনা এক্সপ্রেসেওয়ের কোনও গতি থাকবে না। যানজটই হবে ওই রাস্তার ভবিতব্য।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy