Advertisement
E-Paper

সহায় ফেসবুক, রক্ত পেল থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত

হাওড়ার উলুবেড়িয়ার হাটগাছা ডাহুকা গ্ৰামের বছর তেরোর সুমন মণ্ডল থ্যালাসেমিয়া এবং সেরিব্রাল পলসিতে আক্রান্ত।

সুব্রত জানা ও প্রকাশ পাল

শেষ আপডেট: ১১ মে ২০২০ ০২:৫৪
দাতা: সুমন এবং তার ঠাকুমার সঙ্গে শ্রীকান্ত। — নিজস্ব িচত্র

দাতা: সুমন এবং তার ঠাকুমার সঙ্গে শ্রীকান্ত। — নিজস্ব িচত্র

হাসপাতালের ব্লাডব্যাঙ্কে রক্তের আকাল। রক্তদান করলে তবেই মিলবে রক্ত। এই পরিস্থিতিতে থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত নাতিকে নিয়ে চিন্তায় পড়েছিলেন এক মহিলা। শেষে, সোশ্যাল মিডিয়ার যোগাযোগে রক্তের বন্দোবস্ত হল। লকডাউনের মরসুমে রক্তদাতা জোগান দিতে সামাজিক মাধ্যম যে সেতুবন্ধনের কাজ করছে, তা অনেক সময়েই দেখা যাচ্ছে।

হাওড়ার উলুবেড়িয়ার হাটগাছা ডাহুকা গ্ৰামের বছর তেরোর সুমন মণ্ডল থ্যালাসেমিয়া এবং সেরিব্রাল পলসিতে আক্রান্ত। বাবা, মা— দু’জনেই অন্যত্র থাকেন। সুমন থাকে ঠাকুমা গীতা মণ্ডলের কাছে। থ্যালাসেমিয়ার জন্য প্রতি মাসে এক বার উলুবেড়িয়া হাসপাতাল থেকে রক্ত দিতে হয় সুমনকে। লকডাউনে সেই ভাবে রক্তদান শিবির না হওয়ায় রক্তের জোগান কম। ফলে অনেক জায়গাতেই থ্যালাসেমিয়া আক্রান্তদের জন্য রক্ত জোগাড় করতে হিমশিম খাচ্ছেন বাড়ির লোকেরা। দিন কয়েক আগে উলুবেড়িয়াতেই থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত বছর সতেরোর এক কিশোরী রক্তের অভাবে মারা যায়।

গীতাদেবী জানান, এপ্রিল মাসে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সহযোগিতায় এক ইউনিট রক্ত জোগাড় হয়েছিল। কিন্তু চলতি মাসে অনেককে বলেও লাভ হয়নি। এ দিকে, রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কমে যাওয়ায় সুমন ঝিমিয়ে পড়ছিল। ইতিমধ্যেই গীতাদেবী জানতে পারেন, ফেসবুকে এক যুবক লিখেছেন, থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত শিশুর প্রয়োজনে তিনি স্বেচ্ছায় রক্তদান করতে চান। উলুবেড়িয়ার যদুরবেড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা শ্রীকান্ত সিংহরায় নামে ওই যুবকের সঙ্গে যোগাযোগ করেন গীতা। দেখা যায় সুমন আর শ্রীকান্তের রক্তের গ্রুপ একই। এ পজ়িটিভ। শুক্রবার বিশ্ব থ্যালাসেমিয়া দিবসের সকালে উলুবেড়িয়া হাসপাতালে গিয়ে তিনি রক্ত দেন। সেই রক্ত দেওয়া হয় সুমনকে।

গীতাদেবী বলেন, ‘‘রক্তদাতা জোগাড় করতে না পেরে দুশ্চিন্তায় দু’দিন ঘুমোতে পারিনি। ছেলেটাকে (শ্রীকান্ত) যে কী বলে ধন্যবাদ দেব!’’ হাসপাতালের সুপারিন্টেন্ডেন্ট সুদীপরঞ্জন কাঁড়ার বলেন, ‘‘লকডাউনের জন্য রক্তদান শিবির কার্যত হচ্ছে না। তবে, শ্রীকান্তের মত যুবকেরা এগিয়ে এলে রক্তের সঙ্কট থাকবে না।’’

যদুবেড়িয়া রথতলায় চায়ের দোকান বছর ত্রিশের শ্রীকান্তের। তিনি জানান, লকডাউনের সময় রক্তের অভাবে থ্যালাসেমিয়া আক্রান্তদের সমস্যার কথা সংবাদপত্রে পরেই ফেসবুকে পোস্ট করেন। তিনি বলেন, ‘‘আমার রক্ত ছেলেটার কাজে লেগেছে, এটাই অনেক।’’ মানুষের কাজে লাগতে পেরে তিনি স্যোশাল মিডিয়াকে ধন্যবাদ দিচ্ছেন।

অসময়ে রক্তের জোগানের জন্য সোশ্যাল মিডিয়ার প্রশংসা করছেন অনেকেই। রমেশচন্দ্র দেব স্মৃতিরক্ষা সমিতি নামে শ্রীরামপুরের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন থ্যালাসেমিয়া আক্রান্তদের সাহায্যার্থে কাজ করে। সংগঠনের সম্পাদক নন্টু দেব বলেন, ‘‘গত দেড় মাসে শ্রীরামপুর ওয়ালস হাসপাতালে থ্যালাসেমিয়া রোগীদের জন্য বেশ কয়েকটি রক্তদান শিবির হয়েছে। পরিস্থিতি জানিয়ে ফেসবুকে পোস্ট করেছি। মানুষ তাতে সাড়া দিয়েছেন।’’ শুক্রবার, বিশ্ব থ্যালাসেমিয়া দিবসেও ২৪ জন রক্ত দিয়ে গিয়েছেন ওয়ালস হাসপাতালে। অনেকেই জানান, ফেসবুকে পোস্ট দেখে এসেছেন। সেই রক্ত দেওয়া হয়েছে থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত শিশু-সহ অন্যদের।

শ্রীরামপুর শ্রমজীবী হাসপাতালও সামাজিক মাধ্যমে ভরসা রাখছে। পোস্ট দেখে এখানেও অনেকেই রক্ত দিয়ে গিয়েছেন।

Thalassamia
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy