Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

কার্যালয় দখলের ‘লড়াই’ চুঁচুড়ায়

শাসকদলের একাধিক দলীয় কার্যালয় ‘দখল’ করে ফেলেছিলেন বিজেপি কর্মী-সমর্থকেরা।

বিক্ষোভ: থানার সামনে তৃণমূল কর্মী-সমর্থকেরা। ছবি: তাপস ঘোষ

বিক্ষোভ: থানার সামনে তৃণমূল কর্মী-সমর্থকেরা। ছবি: তাপস ঘোষ

নিজস্ব সংবাদদাতা
চুঁচুড়া শেষ আপডেট: ৩১ মে ২০১৯ ০৩:২৪
Share: Save:

শুধু বোমাবাজি, গুলির লড়াই বা মারামারিটাই যা হয়নি! তৃণমূলের তিনটি কার্যালয়ের দখল নিয়ে বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত যুদ্ধ-পরিস্থিতি হল হুগলির জেলা সদর চুঁচুড়ায়।

এ দিন শাসকদলের একাধিক দলীয় কার্যালয় ‘দখল’ করে ফেলেছিলেন বিজেপি কর্মী-সমর্থকেরা। এলাকার তৃণমূল বিধায়কের নেতৃত্বে সেগুলি ‘পুনর্দখল’ হয়েছিল। দোষীদের গ্রেফতারের দাবিতে চুঁচুড়া থানার সামনে ধর্নায় বসেছিলেন তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। তার মধ্যেই তৃণমূলের পুনর্দখল করা একটি কার্যালয়ের ফের দখল নিল বিজেপি!

স্থান‌ীয় সূত্রের খবর, সকালে ব্যান্ডেলের নলডাঙায় তৃণমূলের একটি কার্যালয় বিজেপি দখল করে। খাদিনা মোড়েও শাসকদলের দু’টি কার্যালয়েরও একই পরিণতি হয়। তার মধ্যে বেলা সাড়ে ১২টা নাগাদ এডিসিপি (ট্র্যাফিক) অফিস লাগোয়া তৃণমূলের একটি কার্যালয়ের কোলাপসিবল গেটের তালা ভেঙে বিজেপির গোটা ত্রিশ লোক ঢুকে পড়ে। তৃণমূলের পতাকা খুলে বিজেপির দলীয় পতাকা লাগিয়ে দেওয়া হয়। কার্যালয়ের দেওয়ালে সাদা রং করাও শুরু হয়। খবর পেয়ে মিনিট পনেরোর মধ্যে ঘটনাস্থলে আসেন চুঁচুড়ার তৃণমূল বিধায়ক অসিত মজুমদার। তাঁর সামনেই ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনি দিয়ে দখল-পর্ব চলতে থাকে।

অসিতবাবু ফোন করে দলের স্থানীয় নেতাদের ডাকেন। পুলিশও পৌঁছয়। তখন বিজেপির লোকেরা কার্যালয় থেকে বেরিয়ে উল্টো দিকে পেট্রোল পাম্পের কাছে জড়ো হন। দু’পক্ষের স্লোগান-পাল্টা স্লোগান চলতে থাকে। কিছুক্ষণ পরে বিজেপির ছেলেরা ফিরে যান। অসিতবাবুরা তাঁদের কার্যালয়ের দখল নেন। হাতবদল হয়ে যাওয়া অপর কার্যালয় দু’টিও তৃণমূল পুনর্দখল করে।

এর পরে বেলা আড়াইটে নাগাদ তৃণমূলের কয়েকশো নেতাকর্মী চুঁচুড়া থানার সামনে গিয়ে ধর্নায় বসেন। অসিতবাবু, হুগলি-চুঁচুড়ার পুরপ্রধান‌ গৌরীকান্ত মুখোপাধ্যায়, উপ-পুরপ্রধান অমিত রায়, চেয়ারম্যান ইন-কাউন্সিল গোবিন্দ দাশগুপ্ত, আশপাশের পঞ্চায়েতের সদস্যেরাও তাতে শামিল হন। কার্যালয় দখলে দোষী বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের গ্রেফতারের দাবি ওঠে। এসিপি (১) যশপ্রীত সিংহ থানায় আসন। তবে, বিক্ষোভকারীরা তাঁর সঙ্গে দেখা করেননি। তাঁরা পুলিশ কমিশনারের ঘটনাস্থলে আসার দাবি জানান। পুলিশের একাংশ বিজেপির তাঁবেদারি করছে, এই অভিযোগও শোনা যায়। ঘটনাচক্রে, এ দিন প্রায় একই সময়ে গঙ্গার উল্টো দিকে নৈহাটিতে পুলিশের একাংশের বিরুদ্ধে সরব হন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও।

তৃণমূল সূত্রের খবর, বিকেল সাড়ে ৫টা নাগাদ দলের ঊর্ধ্বতন নেতৃত্বের তরফে অসিতবাবুর মোবাইলে একটি ফোন আসে। তার পরেই ধর্না তোলা হয়। অসিতবাবু বলেন, ‘‘বিজেপি আশ্রিত দুষ্কৃতীরা গায়ের জোর দেখিয়ে আমাদের কার্যালয় দখল করছে। আমরা এটা মেনে নেব না। রাজনৈতিক ভাবে এর মোকাবিলা করা হবে। পুলিশ দোষীদের গ্রেফতার না করলে বৃহত্তর আন্দোলন হবে।’’

পক্ষান্তরে, বিজেপির ওবিসি মোর্চার সাধারণ সম্পাদক সুরেশ সাউয়ের প্রতিক্রিয়া, ‘‘তৃণমূল ইতিহাস ভুলে গিয়েছে। ক্ষমতায় এসে ওরা অন্য দলের কার্যালয় দখল করেছিল। সেখান থেকে সন্ত্রাস এবং তোলাবাজির কাজ পরিচালনা করা হয়। আমাদের হাতে এলে তা হবে না। মানুষের ভালর জন্য কাজ করা হবে।’’

বিকেল পাঁচটা নাগাদ নলডাঙায় তৃণমূলের পুনর্দখ‌ল করা কার্যালয় ফের দখল করে নেয় বিজেপি। তবে, আরামবাগ শহরের দু’টি কার্যালয় তৃণমূল পুনরুদ্ধার করতে পেরেছে। এ দিন জেলায় দলের অন্যতম আহ্বায়ক দিলীপ যাদবের নেতৃত্বে আরামবাগে মোটরবাইক মিছিল করে তৃণমূল। সেই মিছিল থেকেই বিজেপির হাতে চলে যাওয়া কার্যালয় দু’টি উদ্ধার করা হয়। ভেঙে ফেলা হয় তালা। দলীয় কর্মীদের কার্যালয় দু’টির রং-ও দ্রুত বদলে দেওয়ার নির্দেশ দেন নেতারা। আরামবাগ বাসস্ট্যান্ডেও ফের স্বস্থানে টাঙানো হয় শাসকদলের পতাকা। সেই পতাকা বিজেপি সরিয়েছিল বলে অভিযোগ। গোঘাটের খানাটি গ্রামের একটি কার্যালয়ও উদ্ধার করে তৃণমূল।

দিলীপবাবু বলেন, ‘‘আমাদের স্থানীয় কিছু নেতা-নেত্রীর আচরণ প্রশ্নাতীত নয়। তাই বলে গুন্ডামি মেনে নেওয়া যায় না। পুলিশ পুরো বিষয়টি দেখবে। আমাদের দলের নেতাদের সংযত থাকতে বলেছি।’’ বিজেপি-র আরামবাগ সাংগঠনিক জেলার এক নেতা অবশ্য বলেন, ‘‘আরামবাগে যা হয়েছে তাতে আমাদের কেউ যুক্ত নন। তৃণমূলের নানা সমস্যা রয়েছে। ওখানে যা হয়েছে সবই তার বহিঃপ্রকাশ।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

BJP TMC Party Office
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE