বিশ্ব নারী দিবস। অন্যন্য উৎসবের মতো এই দিনটি পালনের জন্যও চারপাশে তোড়জোড় চলছে। কিন্তু তাতে মেতে থাকলে যে ঘরে উনুন জ্বলবে না চুঁচুড়ার আরতি পালের।
হুগলি-চুঁচুড়া পুরসভার ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের তালডাঙা গভর্নমেন্ট কলোনিতে থাকেন আরতিদেবী। এক ছেলে-মেয়েকে নিয়ে অভাব অনটনের মধ্যে এই পাল পরিবারের দিন কাটছিল। তারই মধ্যে পারিবারিক অশান্তির জেরে ছেলেকে নিয়ে অন্যত্র চলে যান আরতিদেবীর স্বামী। ছোট্ট মেয়েকে নিয়ে অথৈ জলে পড়ে যান আরতীদেবী।
এই অবস্থায় তিনি ঠিক করেন চাবি তৈরি করে সংসার চালাবেন। সেই মতো নৈহাটির সেলিম খানের কাছে চাবি তৈরি করার তালিম নিতে থাকেন। প্রতিদিন সকালে মেয়েকে স্থানীয় বাসিন্দাদের জিম্মায় রেখে নৈহাটির উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়েন। প্রায় ১০ বছর ধরে সেখানে নানা রকম চাবি তৈরি করা শেখেন। রোজগারও করতে শুরু করে দেন। মেয়ে বড় হওয়ার তাকে স্কুলে ভর্তি করাতে হয়। সংসারের খরচ ধাপে ধাপে বাড়তে থাকে। এতদিনে সব রকম চাবি তৈরি করা শিখে ফেলেছেন আরতিদেবী। এখন বাড়িতে বসেই চাবি তৈরি করে রোজগার করছেন তিনি। চুঁচুড়া আদালত সংলগ্ন এলাকায় রাস্তার পাশে বসে চাবি তৈরি করেন। রোদ, ঝড়-জল উপেক্ষা করে সপ্তাহে ৬ দিন চাবি তৈরি করেন। অনেক সময় বিভিন্ন জায়গা থেকে চাবি তৈরি করার ডাকও আসে তাঁর কাছে।
আরতিদেবী জানান, প্রায় ৩৫ বছর ধরে এই কাজ করছেন। সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত কাজ করে দিনে ১০০ থেকে ৩০০ টাকা রোজগার হয়। আবার কোনও কোনও দিন কিছুই হয় না। এই কাজ করে তিনি মেয়েকে স্নাতক পর্যন্ত পড়িয়েছেন। বিয়েও দিয়েছেন। মেয়ে মিনু পাল বলেন, ‘‘জন্ম থেকেই মায়ের সংগ্রাম দেখে আসছি। বাবা দাদকে নিয়ে আমাদের ছেড়ে চলে যাওয়ার পরে মা এই কাজ করে পড়াশোনা শিখিয়ে সংসার চালাচ্ছেন।’’
আর নারী দিবসের দিনেও ছুটি নেই আরতিদেবীর। তিনি বললেন, ‘‘নারী দিবস কবে তা জানা নেই। তবে যতদিন বাঁচব এই কাজ করে যাব।’’
নিজের কষ্টের কথা বলতে বলতে তাঁর মুখ থেকে শোনা যাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সেই গান ‘ভেঙে মোর ঘরের চাবি নিয়ে যাবি কে আমারে...।’