Advertisement
E-Paper

বিজ্ঞান নিয়ে পড়ার ইচ্ছা, বাধা অর্থ

তিন জনেরই সংসারে নুন আনতে পান্তা ফুরোয়। অভাব নিত্যসঙ্গী। তা সত্ত্বেও সেই অভাবের পাহাড় ডিঙিয়ে এ বার মাধ্যমিক পরীক্ষায় চমকে দিয়েছে তিন জনই। কিন্তু উচ্চশিক্ষার পথে অভাব নতুন করে তাদের চোখ রাঙাচ্ছে। পাণ্ডুয়ার হরিদাসপুরের বাসিন্দা মনোজ বাউল দাসের দু’চোখে স্বপ্ন বিজ্ঞান নিয়ে পড়ার। কিন্তু দিনমজুর বাবার মেধাবী ছাত্রের স্বপ্নপূরণে বাধ সাধছে পরিবারের অনটন। বিজ্ঞান বিভাগে ৯০% নম্বর এবং সব মিলিয়ে মাধ্যমিকে ৫৪৭ নম্বর পেয়েও সে জানে না, বিজ্ঞান নিয়ে পড়তে পারবে কি না।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২৫ মে ২০১৫ ০১:১৬
মনোজ বাউল দাস, কৃষ্ণা দাস ও সুজিত সরকার।—নিজস্ব চিত্র।

মনোজ বাউল দাস, কৃষ্ণা দাস ও সুজিত সরকার।—নিজস্ব চিত্র।

তিন জনেরই সংসারে নুন আনতে পান্তা ফুরোয়। অভাব নিত্যসঙ্গী। তা সত্ত্বেও সেই অভাবের পাহাড় ডিঙিয়ে এ বার মাধ্যমিক পরীক্ষায় চমকে দিয়েছে তিন জনই। কিন্তু উচ্চশিক্ষার পথে অভাব নতুন করে তাদের চোখ রাঙাচ্ছে।

পাণ্ডুয়ার হরিদাসপুরের বাসিন্দা মনোজ বাউল দাসের দু’চোখে স্বপ্ন বিজ্ঞান নিয়ে পড়ার। কিন্তু দিনমজুর বাবার মেধাবী ছাত্রের স্বপ্নপূরণে বাধ সাধছে পরিবারের অনটন। বিজ্ঞান বিভাগে ৯০% নম্বর এবং সব মিলিয়ে মাধ্যমিকে ৫৪৭ নম্বর পেয়েও সে জানে না, বিজ্ঞান নিয়ে পড়তে পারবে কি না।

মাটির দেওয়াল আর টালির চালের ঘরে বাবা-মা আর ভাইয়ের সঙ্গে থাকে মনোজ। বাবা প্রশান্তবাবু দিনমজুর। সংসারের একমাত্র রোজগেরে। পঞ্চম শ্রেণি থেকে হরিদাসপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়েছে মনোজ। সেখান থেকেই মাধ্যমিক দিয়েছে। গৃহশিক্ষক ছিল না। বাবা ও স্কুলের শিক্ষকেরা সাহায্য করেছেন। বই কিনে দিয়েছেন। স্কুলের সর্বোচ্চ নম্বর পেয়ে তাঁদের মুখ উজ্জ্বল করেছে মনোজ। পড়াশোনার ফাঁকে চাষের কাজে বাবাকে সাহায্যও করেছে সে।

মনোজের স্কুলের প্রধান শিক্ষক অনির্বাণ সেনগুপ্ত বলেন, ‘‘বহু বাধা অতিক্রম করে মনোজ স্কুলের মুখ উজ্বল করেছে।’’ এ বার ছেলের ইচ্ছেপূরণ করতে কপালে ভাঁজ প্রশান্তবাবুর। তিনি বিলক্ষণ জানেন, বিজ্ঞান নিয়ে ছেলেকে পড়াতে হলে যে অর্থের প্রয়োজন, তা জোগাড়ের ক্ষমতা তাঁর নেই। মনোজেরও তা অজানা নয়। তার কথায়, ‘‘বিজ্ঞান নিয়ে পড়া ব্যয়সাধ্য। অত টাকা বাবা পাবে কোথায়! তাই হয়তো আর্টস পড়তে হবে।’’

অভাবকে হারিয়ে মাধ্যমিকে সফল উলুবে়ড়িয়ার বীণাপাণি উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের কৃষ্ণা দাস। তার প্রাপ্ত নম্বর ৫৯০। অঙ্কে পেয়েছে ৯৬। ভৌতবিজ্ঞানে ৯৪। জীবনবিজ্ঞানে ৯৭। দশ ফুট বাই পনেরো ফুট ঘরে ঠাকুমা, বাবা-মা আর ভাইয়ের সঙ্গে থাকে শান্ত স্বভাবের মেয়েটি। বাবা কাশীনাথ ট্রেনে হকারি করেন। মা কবিতাদেবী জরির কাজ করেন। মাধ্যমিকের আগের শেষ তিন মাস কৃষ্ণার জন্য গৃহশিক্ষকের ব্যবস্থা করতে পেরেছিলেন কাশীনাথবাবু। কৃষ্ণা চিকিৎসক হতে। কিন্তু মেয়ের স্বপ্ন তাঁরা কী ভাবে সফল করবেন, সেই দুশ্চিন্তাতেই ঘুম উবেছে কাশীনাথবাবু-কবিতাদেবী। মেয়ের বিজ্ঞান পড়ার খরচ কী করে সামলাবেন সেটাই ভাবছেন তাঁরা।

জাঙ্গিপাড়ার নিলারপুর রাজা রামমোহন বিদ্যাপীঠের সুজিত সরকারের পরিবারেরও আর্থিক অবস্থাও তথৈবচ। বাবা সনৎবাবু কাঠমিস্ত্রি। মা সোনালিদেবী জরির কাজ করেন। দু’জনের মিলিত রোজগারে দু’বেলা দু’মুঠো জুটে যায়। অভাবের মধ্যেও পড়াশোনা চালিয়ে মাধ্যমিকে ৫৬৮ নম্বর পেয়েছে সুজিত। সে চায় উচ্চ মাধ্যমিকে বিজ্ঞান নিয়ে পড়ে। কিন্তু ছেলের পড়ার খরচ কী ভাবে আসবে, তা জানা নেই সনৎবাবুর। পরবর্তী পড়াশোনা নিয়ে চিন্তায় ফুরফুরা পঞ্চায়েতের হাজিপুরের কিশোরটিও। সে বলে, ‘‘বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করে শিক্ষক হতে চাই। কিন্তু বাবা-মা পড়ার খরচ চালাতে পারবেন কি না জানি না।’’ তবে, সহজে হার মানতে সে নারাজ। প্রয়োজনে টিউশন করে নিজের পড়ার খরচ জোগাড় করতে সে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।

jangipara madhyamik student uluberia binapani highschool madhyamik student pandua haridaspur madhyamik student needy student science study
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy