Advertisement
১৯ মে ২০২৪

বাড়ি থেকে গ্রেফতার তৃণমূল নেতা

হাওড়ার রেল পুলিশ সুপার নীলাদ্রি চক্রবর্তী মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বলেন, ‘‘স্নেহাশিস দাশগুপ্তের খুনের ঘটনায় নির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে পিন্টু নাগকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকি অভিযুক্তদের খোঁজেও তল্লাশি চলছে।’’

অবশেষে: সোমবার পুলিশের কাছে অভিযোগ জানিয়েছিলেন মৃত স্নেহাশিসের বাবা-মা।

অবশেষে: সোমবার পুলিশের কাছে অভিযোগ জানিয়েছিলেন মৃত স্নেহাশিসের বাবা-মা।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শ্রীরামপুর শেষ আপডেট: ০৪ অক্টোবর ২০১৭ ০০:৩২
Share: Save:

দশমীর ভোরে শ্রীরামপুর মাল গুদামের সামনে ডাউন লাইন থেকে উদ্ধার হয়েছিল তরুণ ফুটবলার স্নেহাশিস দাশগুপ্ত ওরফে রাজার দু’টুকরো দেহ। সেই ঘটনায় জড়িত সন্দেহে মঙ্গলবার শ্রীরামপুরের প্রভাবশালী তৃণমূল নেতা পিন্টু নাগ-সহ তিনজনকে গ্রেফতার করেছে রেল পুলিশ। পিন্টু এলাকায় তৃণমূল কাউন্সিলর মৌসুমী নাগের স্বামী।

হাওড়ার রেল পুলিশ সুপার নীলাদ্রি চক্রবর্তী মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বলেন, ‘‘স্নেহাশিস দাশগুপ্তের খুনের ঘটনায় নির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে পিন্টু নাগকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকি অভিযুক্তদের খোঁজেও তল্লাশি চলছে।’’ পুলিশ জানিয়েছে, পিন্টুবাবুর সঙ্গে যে দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে তাদের নাম প্রতাপ মণ্ডল ওরফে বড়ভাই এবং কালীরঞ্জন দাস। প্রতাপের বিরুদ্ধে পুলিশের খাতায় আগেও অভিযোগ রয়েছে।

স্নেহাশিস দাশগুপ্ত ওরফে রাজা নামে পোর্ট ট্রাস্টের ওই গোলরক্ষক শ্রীরামপুরের ২৮ নম্বর ওয়ার্ডের তারাপুকুর গভর্নমেন্ট কোয়ার্টারের বাসিন্দা ছিলেন। সোমবার রাজার বাবা দোলনবাবু এবং মা রিঙ্কুদেবী শেওড়াফুলি জিআরপি-র কাছে ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মৌসুমী নাগ, তাঁর স্বামী তথা তৃণমূলের পশ্চিম রেলপাড় কমিটির সভাপতি পিন্টু ন‌াগ, মৌসুমীদেবীর আত্মীয় রিঙ্কু সাহা এবং পিন্টুবাবুর দুই শাগরেদ প্রতাপ ওরফে বড় ভাই এবং কালীরঞ্জন দাসের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ দায়ের করেছিলেন।


ধৃত পিন্টু নাগ।

রেল পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, নবমীর রাত দেড়টা নাগাদ রিন্টু সাহা নামে এক ঘনিষ্ঠ বন্ধুর সঙ্গে রাজার বচসা হয়েছিল। স্থানীয় একটি কারখানা লাগোয়া রাস্তায় রিন্টু এবং তাঁর ভাইয়ের সঙ্গে রাজার মারামারি হয়। বন্ধুরা তখনকার মতো ঝামেল‌া মেটান। রাজা বাড়ি যান। রিন্টু হলেন কাউন্সিলর মৌসুমীদেবীর আত্মীয়। অভিযোগ, ঘটনার কথা জানতে পেরে পিন্টু রাত আড়াইটে নাগাদ দলবল নিয়ে রাজার বাড়িতে গিয়ে তাঁকে বেধড়ক মারধর করে চলে যায়। তারপর রাজার কয়েকজন বন্ধু এসে তাঁকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে। রাজাকে রাজ্যধরপুর গভর্নমেন্ট কলোনি এলাকায় এক বন্ধুর বাড়িতে রেখে আসেন তাঁরা। রাত ৩টে নাগাদ শৌচাগারে যাওয়ার নাম করে রাজা সেখান থেকে বেরিয়ে যান। তারপর ভোরে শ্রীরামপুর মাল গুদামের কাছে ডাউন লাইনে তাঁর দেহ মেলে।

এলাকায় ‘ভাল ছেলে’ হিসেবে পরিচিত রাজার অস্বাভাবিক মৃত্যু মেনে নিতে পারেনি এলাকার লোকজন। দোষীদের ধরার দাবিতে সোমবার সন্ধ্যায় এলাকায় মোমবাতি মিছিল হয়। সোমবার সিপিএম, বিজেপি এবং তৃণমূল নেতারা রাজার বাড়িতে যান। দুপুরে ওই বাড়িতে যান বিজেপি নেতা, পোর্ট ট্রাস্টের ট্রাস্টি সদস্য জয় বন্দ্যোপাধ্যায়। এ দিন তৃণমূল নেতা গ্রেফতারের খবর শুনে তিনি বলেন, ‘‘গ্রেফতারের পরে কোনও লঘু ধারায় মামলা দিয়ে দোষীদের আড়াল করার চেষ্টা হলে আমরা ছাড়ব না।’’

মঙ্গলবার পিন্টুবাবুকে তাঁর বাড়ি থেকেই গ্রেফতার করে রেল পুলিশ। তিনি আগে ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ছিলেন। পরে ওই ওয়ার্ডটি মহিলা সংরক্ষিত হওয়ায় তাঁর স্ত্রীকে টিকিট দেয় দল। তৃণমূলের জেলা সভাপতি তপন দাশগুপ্ত বলেন, ‘‘আইন আইনের পথে চলবে। আমার বিশ্বাস, পিন্টুর মত ছেলে ওই ধরনের অন্যায় করতে পারে না।’’

রাজার দেহ উদ্ধারের পর তাঁর বাবা-মাকে নিয়ে জিআরপি-তে যাওয়া, ময়নাতদন্তের সময় হাসপাতালে বা পরে শ্মশানে— সব জায়গাতেই পিন্টুবাবু হাজির ছিলেন। রাজাকে মারধরের অভিযোগ তিনি মানেননি। গ্রেফতার হওয়ার পরে তিনি দাবি করেন, ‘‘আইনের উপর আস্থা রয়েছে। তদন্তে সত্য উঠে আসবে।’’

তদন্তকারীরা জানান, ময়না-তদন্তের রিপোর্ট হাতে এলেই পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে। রেল পুলিশের এক কর্তা জানান, প্রাথমিক ভাবে এটি আত্মহত্যার ঘটনা বলে মনে হচ্ছে। তবে রাজার মোবাইল ফোনটি এখনও পাওয়া যায়নি। রাজ্যধরপুর গভর্নমেন্ট কলোনিতে বন্ধুর বাড়ি থেকে বেরোনোর পরে কী হয়েছিল, তা এখনও অজানা রয়েছে তদন্তকারীদের।

ছবি: প্রকাশ পাল

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Arrest TMC Leader
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE