Advertisement
E-Paper

‘কাটমানি’ ফেরাতে বাধ্য হলেন নেতারা

হরিপালের জেঁজুর পঞ্চায়েতের উপপ্রধান গোপাল চক্রবর্তী। ওই পঞ্চায়েতের ১০০ দিনের কাজের সুপারভাইজার দিলীপ পাল। তাঁদের বাড়ি ওই পঞ্চায়েতের রাজবল্লভবাটি গ্রামে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০১:০৭
প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

তৃণমূল নেতাদের কাটমানি তোলার অভিযোগকে কেন্দ্র করে বিজেপি-র প্রতিরোধ আন্দোলনে হুগলির বিভিন্ন প্রান্তে দফায় দফায় গন্ডগোল চলছে গত প্রায় দু’মাস ধরে। অনেকক্ষেত্রেই পরিস্থিতি সামাল দিতে বেগ পেতে হচ্ছে প্রশাসনকে। পুলিশের লাঠিচার্জ, অবরোধ, তার জেরে আতঙ্কে মৃত্যু পর্যন্ত ঠেকানো যায়নি। কোথাও আবার ১০০ দিনের কাজে মজুরির টাকা না পেয়ে গ্রামবাসীদের আন্দোলনের চাপে ঠিকাদারের থেকে টাকা নিয়ে পাওনা মেটাতে হয়েছে পঞ্চায়েত কর্তাদের।

হরিপালের জেঁজুর পঞ্চায়েতের উপপ্রধান গোপাল চক্রবর্তী। ওই পঞ্চায়েতের ১০০ দিনের কাজের সুপারভাইজার দিলীপ পাল। তাঁদের বাড়ি ওই পঞ্চায়েতের রাজবল্লভবাটি গ্রামে। গত জুন মাসে বিজেপি-র পক্ষ থেকে তাঁদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পে কাটমানি নেওয়ার অভিযোগ তোলা হয় বিজেপি-র স্থানীয় নেতৃত্বের তরফে। একটি স্মারকলিপিও দেওয়া হয় পঞ্চাযেতে। তা নিয়ে ওই মাসের ১৩ তারিখ তাঁদের আলোচনায় বসার কথা ছিল। বিজেপি-র তরফে কাটমানি ফেরতের দাবি তুলতেই তপ্ত হয়ে ওঠে এলাকা। উপ-প্রধানের বাড়িতে ভাঙচুর চালানো হয়। তাঁর বাড়ির সামনে রাখা একটি গাড়িও পুড়িয়ে দেওয়া হয়। দিলীপ পালের বাড়িও ওই এলাকাতেই। তাঁর বাড়িতেও চড়াও হয় বিক্ষোভকারীরা। একইভাবে তাঁর বাড়িতেও ভাঙচুর চালায় জনতা।

ঘটনার খবর পেয়ে হরিপাল থানার পুলিশ এবং হুগলি জেলা (গ্রামীণ) পুলিশের পদস্থ কর্তারা ওই গ্রামে যান। পুলিশ লাঠিচার্জ এবং কাঁদানে গ্যাসের সেল ফাটিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। ওই ঘটনায় জড়িতদের সন্ধানে গ্রামের বাড়ি বাড়ি তল্লাশি শুরু করে পুলিশ। সেই সময় গ্রামের একটি বাড়িতে আন্দোলনরত এক যুবকের মা বাসন্তি কোলে পুলিশের আতঙ্কে অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে তিনি মারা যান। ওই মৃত্যুর প্রতিবাদে সেই রাতে রাস্তা অবরোধও করেন গ্রামবাসীরা। বিজেপি-র তরফে সেই সময় অভিযোগ তোলা হয়, পুলিশের গুলিতে ওই বৃদ্ধা মারা গিয়েছেন। তাঁদের বাড়ির লোকজন অবশ্য সেই দাবিতে আমল দেননি।

একইভাবে ধনেখালির গুড়াপ পঞ্চায়েতের হাজিগড়ে সেখানকার পঞ্চায়েত সদস্য শেখ কাদেরের বিরুদ্ধে কাটমানি তোলার অভিযোগ ওঠে ১০০ দিনের কাজে। গ্রামবাসীদের অভিযোগ, ১০০ দিনের কাজে যে রাস্তা হওয়ার কথা ছিল, স্থানীয় এক পঞ্চায়েত সদস্য ঠিকাদারকে দিয়ে সেই রাস্তা ঢালাই করিয়েছেন। খবর পেয়ে গ্রামবাসীরা ওই সদস্যের থেকে ১০০ দিনের মজুরির টাকা দাবি করেন। আন্দোলনের চাপে ঠিকাদারের থেকে ২ লক্ষ ১৭ হাজার টাকা নিয়ে সেই সদস্য গ্রামবাসীদের দাবি মেটান। এই বিষয়ে শেখ কাদের অবশ্য বলেন, ‘‘গ্রামবাসীরা প্রথমে গ্রামে কংক্রিটের রাস্তার দাবি করেন। সেই রাস্তা ঠিকাদারকে দিয়ে করিয়ে দিই। এরপর সুযোগ বুঝে রাস্তা হয়ে যাওয়ার পরই তাঁরা মজুরির টাকা দাবি করেন। আমরা ঠিকাদারের থেকে টাকা নিয়ে গ্রামবাসীদের ফিরিয়ে দিতে বাধ্য হই।’’

চাপ দিয়ে টাকা আদায় ছাড়াও হুগলির বহু জায়গায় সরাসরি লিফলেট বিলি করে পঞ্চায়েত, সমিতি এবং শাসকদলের নেতাদের নাম ছাপিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলছেন গ্রামবাসীরা। চণ্ডীতলার মশাটে স্থানীয় সাধুখাঁদের পুকুর বুজিয়ে ফেলার নেপথ্যে পঞ্চায়েত, বিএলআরও-সহ শাসকদলের স্থানীয় মাথাদের দায়ী করা লিফলেটে প্রচার চালানো হয়েছে।

তৃণমূলের জেলা সভাপতি দিলীপ যাদব বলেন, ‘‘পঞ্চায়েত বা দলীয় পদে থেকে দল কিন্তু কাউকে বেআইনি কাজ করার লাইসেন্স দেয়নি। আমি গ্রামবাসীদের অনুরোধ করব, কোথাও কোনও অনিয়ম দেখলে সরাসরি আমাকে জানান। আমি নিজে সেই অনিময়ের বিরুদ্ধে পুলিশ ও প্রশাসনকে বলে ব্যবস্থা নেব।’’

Bribe BJP TMC
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy