Advertisement
E-Paper

পিটিয়ে খুন যুবকর্মীকে, জখম ছয়

তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে দিনকয়েক আগে পুরশুড়ায় গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন এক যুবনেতা। শুক্রবার রাতে আরামবাগের মাধবপুর পঞ্চায়েতের বাসুলিচক গ্রামে, বাড়ির সামনে লাঠি-মুগুর দিয়ে পিটিয়ে খুন করা হল সোফিয়ার মল্লিক (৫৩) নামে এক যুবকর্মীকে।

পীযূষ নন্দী

শেষ আপডেট: ০৪ মার্চ ২০১৮ ০০:৫৪
আর্তি: নিহত সোফিয়ার মল্লিকের দেহ জড়িয়ে কান্না পরিজনের। ছবি: মোহন দাস

আর্তি: নিহত সোফিয়ার মল্লিকের দেহ জড়িয়ে কান্না পরিজনের। ছবি: মোহন দাস

পুরশুড়ার পরে এ বার আরামবাগ।

তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে দিনকয়েক আগে পুরশুড়ায় গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন এক যুবনেতা। শুক্রবার রাতে আরামবাগের মাধবপুর পঞ্চায়েতের বাসুলিচক গ্রামে, বাড়ির সামনে লাঠি-মুগুর দিয়ে পিটিয়ে খুন করা হল সোফিয়ার মল্লিক (৫৩) নামে এক যুবকর্মীকে। দু’পক্ষ সংঘর্ষেও জড়ায়। জখম হন ৬ জন। এলাকায় বোমাবাজিও হয়।

সামনে পঞ্চায়েত নির্বাচন। তার আগে দলের শীর্ষ নেতৃত্ব বারবার নেতাকর্মীদের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব থেকে বিরত থাকার বার্তা দিচ্ছেন। কিন্তু আরামবাগ মহকুমায় সেই বার্তায় কাজ কতটা হচ্ছে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে বারবার। তৃণমূলেরই একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, রাজ্যে পালাবদলের পর পঞ্চায়েত বা পঞ্চায়েত সমিতি থেকে সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পের সুযোগ-সবিধা পাওয়া বা পাইয়ে দেওয়াকে কেন্দ্র করেই গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের সূত্রপাত। তা ছাড়া রয়েছে, এলাকায় আধিপত্য বজায় রাখার প্রশ্নও। গত নভেম্বর মাসে বাসুলিচকে তৃণমূলের দুই সংগঠনের সংঘর্ষে প্রায় ৫০ জন যুবকর্মী ঘরছাড়া হন। সেই দলে শুক্রবার নিহত সোফিয়ারও ছিলেন।

শুক্রবারের গোলমালে জড়িত অভিযোগে জামির মল্লিক এবং ওয়াব মল্লিক নামে দু’জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এসডিপিও (আরামবাগ) কৃশানু রায় বলেন, “তদন্ত শুরু হয়েছে। এলাকায় পুলিশ পিকেট বসানো হয়েছে। র‌্যাফও টহল দিচ্ছে।’’ তবে, ঘটনার সঙ্গে রাজনীতির যোগ নেই বলে দাবি করেছেন আরামবাগের তৃণমূল বিধায়ক কৃষ্ণচন্দ্র সাঁতরা। তিনি বলেন, ‘‘সবাই আমাদের লোক ঠিকই, কিন্তু বিষয়টি একেবারেই গ্রামগত ঝগড়া।” একই দাবি জেলা যুব তৃণমূল সম্পাদক শাহিদ ইমামের এবং দলের জেলা সভাপতি তপন দাশগুপ্তেরও।

ঘটনা প্রবাহ

• শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৫টা: জলসা সংক্রান্ত বৈঠক শুরু গ্রামের বাজার চত্বরে।

• সাড়ে ৬টা: বড় ছেলে আলাউদ্দিন মল্লিক বৈঠকে থাকলেও সোফিয়ার বেরিয়ে যান।

• ৭টা: বৈঠক শেষ।

• ৮টা: প্রতিবেশীর বিয়েতে গেলেন সোফিয়ার।

• সাড়ে ১০টা: খাওয়া সেরে ফিরছিলেন সোফিয়ার। বাড়ির কাছে এসে আক্রান্ত।

• ১১টা: ঘটনাস্থলে বোমাবাজি। পুলিশ গেলে হামলাকারীরা পালায়।

• ১২টা: হাসপাতালে মৃত্যু সোফিয়ারের।

ঠিক কী হয়েছিল শুক্রবার?

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বছর তিনেক আগে গ্রামবাসীরা একটি জলসা কমিটি গড়েন। কমিটির দখল কাদের হাতে থাকবে তা নিয়ে তৃণমূলের দুই সংগঠনের বিবাদ চলছিল। শুক্রবার রাতে গ্রামবাসীরা কমিটির কাছে তিন বছরের জলসার হিসেব চান। কমিটির পক্ষে ম্যানেজার মুশারফ মল্লিক, মোর্শেদ মল্লিকরা গ্রামবাসীদের জানান, হিসেব তাঁদের কাছে নেই। টাকা খরচ করেছেন জামির মল্লিক, সামশের আলি মল্লিক-সহ কয়েক জন। সামশের-জামিররা তৃণমূল কর্মী হিসেবেই পরিচিত। তাঁদের নাম জানতে পেরে আপত্তি জানান সোফিয়ার-সহ কয়েকজন। তিন দিনের মধ্যে হিসেব পেশ এবং নতুন কমিটি গড়ার দাবি তোলেন সোফিয়াররা। গ্রামবাসীদের একাংশের অভিযোগ, কমিটিকে পুতুল করে রেখে জলসার সমস্ত টাকা খরচ করছিলেন জামিররা।

তখন এ নিয়ে কোনও গোলমাল হয়নি। রাত সাড়ে ১০টা নাগাদ সোফিয়ার একটি বিয়েবাড়ি থেকে ফিরে বাড়ির সামনে ফোনে কথা বলছিলেন। তখন জামিররা লাঠি-মুগুর নিয়ে তাঁর উপরে চড়াও হন বলে অভিযোগ। দু’পক্ষের সংঘর্ষ হয়। সোফিয়ারের চিৎকারে তাঁর বাড়ির লোকজন বেরিয়ে আসেন। ভাইকে বাঁচাতে গিয়ে আক্রান্ত হন সোফিয়ারের দিদি সাকেরা খাতুনও। আহতদের আরামবাগ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু সোফিয়ারকে বাঁচানো যায়নি।

সাকেরা বলেন, ‘‘ভাইয়ের চিৎকারে বেরিয়ে এসে দেখি ওকে মুগুর আর লাঠি দিয়ে পেটাচ্ছে। ভাইকে বাঁচাতে গেলে আমার চুলের মুঠি ধরে সরিয়ে দেয় ওরা। লাথিও মারে। গ্রামবাসীরা কেউ যাতে সেখানে যেতে না-পারেন, সে জন্য বোমাও ফাটিয়েছিল।’’ পক্ষান্তরে, ধৃত জামির খুনের অভিযোগ মানতে চাননি। তাঁর দাবি, ‘‘হিসেব নিয়ে গোলমাল হয়েছিল ঠিকই। কিন্তু পরে সোফিয়াররাই প্রথমে হামলা চালিয়েছিল। আমরা প্রতিরোধ করি।’’

Death Beaten To Death TMC TMC Yuva
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy