Advertisement
E-Paper

জগদ্ধাত্রী পুজোয় জোড়া পরিষেবা চন্দননগরে

গত বছর রিষড়ার জগদ্ধাত্রী পুজোতে সেখানকার পুরসভা ৭০টি জৈব শৌচাগার কিনেছিল। ফলে, দর্শনার্থীদের বিপাকে পড়তে হয়নি। এ বার সে পথেই হাঁটছে চন্দননগর।

গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায় ও প্রকাশ পাল

শেষ আপডেট: ২৯ অক্টোবর ২০১৯ ০১:২৫
ফাইল চিত্র

ফাইল চিত্র

এ বার চন্দননগরে জগদ্ধাত্রী পুজো দেখতে বেরিয়ে শৌচাগারের জন্য হন্যে হতে হবে না। অচেনা বাড়ির দরজায় কড়া নাড়তে হবে না মহিলা দর্শনার্থীদের। প্রবীণ মানুষেরা দু’দণ্ড জিরিয়ে নেওয়ার সুযোগও পাবেন।

পুলিশ প্রশাসন ঠিক করেছে, বিভিন্ন পুজো মণ্ডপের আশপাশে বর্জ্য নিষ্কাশনের বিশেষ সুবিধাযুক্ত জৈব শৌচাগার বসানো হবে। আর পুজোর দিনগুলিতে শহরের নানা দিকে পুলিশ অ্যাসিস্ট্যান্ট বুথ বা সহায়তা কেন্দ্র থাকা বরাবরের রেওয়াজ। এ বছর সেই কেন্দ্রে বাড়তি পরিষেবা পাবেন প্রবীণেরা। বিশ্রামের জায়গার পাশাপাশি থাকছে চা আর পানীয় জলের ব্যবস্থা। প্রবীণদের বাড়তি হাঁটার ধকল সামাল দিতে পুলিশের তরফে এই ব্যবস্থা করা হয়েছে।

গত বছর রিষড়ার জগদ্ধাত্রী পুজোতে সেখানকার পুরসভা ৭০টি জৈব শৌচাগার কিনেছিল। ফলে, দর্শনার্থীদের বিপাকে পড়তে হয়নি। এ বার সে পথেই হাঁটছে চন্দননগর। প্রশাসনের হিসেব, এখানে মোট বারোয়ারি পুজোর সংখ্যা ১৭১টি (চন্দননগর ও ভদ্রেশ্বর মিলিয়ে)। তার মধ্যে চন্দননগরে ১২৯টি এবং ভদ্রেশ্বর থানা এলাকায় ৪২টি পুজো হচ্ছে। শুধু মণ্ডপে ঘুরে ঠাকুর দেখাই নয়, বিসর্জনের শোভাযাত্রা দেখতেও অসংখ্য মানুষ আসেন। সব মিলিয়ে প্রায় ১৫ লক্ষ মানুষের সমাগম হয়। সে জন্য চন্দননগরে ১০০টি এবং ভদ্রেশ্বরে ৫০টি জৈব শৌচাগার বসানো হচ্ছে। কলকাতা থেকে এগুলি আনা হচ্ছে। পুজো কমিটির লোকজনের পাশাপাশি সাধারণ মানুষও এই উদ্যোগে খুশি।

শহরবাসীর অনেকের বক্তব্য, এত দিন শৌচাগারের অভাবে পুরুষেরা যেখানে-সেখানে রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে পড়তেন। শহর নোংরা হতো। পরিবেশের পাশাপাশি দৃশ্যদূষণও হত। মহিলাদের অচেনা বাড়িতে সাহায্য চাইতে হতো। শহরের হাতেগোনা কয়েকটি জায়গায় স্থায়ী শৌচাগার রয়েছে। কিছু পুজো কমিটি বা পুরসভার তরফে অস্থায়ী ব্যবস্থাও করা হয়। তবে, তা পর্যাপ্ত নয়। প্রকৃতির ডাক এলেও অনেক মহিলা সঙ্কোচের কারণে মুখ ফুটে সাহায্য চাইতে পারেন না। যাঁদের ডায়াবেটিস রয়েছে, তাঁরাও আতান্তরে পড়েন। এই পরিস্থিতিতে এখানে জৈব শৌচাগারের দাবি জোরালো হচ্ছিল।

সম্প্রতি পুজোর প্রস্তুতি নিয়ে প্রশাসনিক বৈঠকে জৈব শৌচাগারের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। কেন্দ্রীয় জগদ্ধাত্রী পুজো কমিটির তরফে চন্দননগর পুর-কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত ভাবে আবেদন জানানো হয়। পুরসভা সূত্রের খবর, বিষয়টি জেনে স্থানীয় বিধায়ক তথা মন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেন উদ্যোগী হন। পুজো কমিটিগুলির সঙ্গে বৈঠকে চন্দননগরের পুর-কমিশনার স্বপন কুণ্ডু জানান, পর্যাপ্ত পরিমাণ জৈব শৌচাগার বসানো হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের শহরে জৈব শৌচাগারগুলি কোথায় কোথায় বসানো হবে, কেন্দ্রীয় কমিটিকে তার তালিকা দিতে বলা হয়েছে। মানুষকে আর সমস্যায় পড়তে হবে না।’’ ভদ্রেশ্বরের পুরপ্রধান প্রলয় চক্রবর্তীর বক্তব্য, ‘‘আমাদের শহরে বেশ কিছু কমিউনিটি শৌচাগার রয়েছে। জৈব শৌচাগারও আছে। নতুন ব্যবস্থায় মানুষের কোনও সমস্যাই আর থাকবে না।’’ কেন্দ্রীয় পুজো কমিটির সম্পাদক তথা উর্দিবাজার সর্বজনীনের সম্পাদক শুভজিৎ সাউ বলেন, ‘‘অনেক দিনের দাবি পূরণ হচ্ছে।’’ উত্তরাঞ্চল জগদ্ধাত্রী পূজা কমিটির সম্পাদক মোহিত নন্দীর বক্তব্য, ‘‘আমাদের মণ্ডপের পাশেই ক্লাবের শৌচাগার দর্শনার্থীদের জন্য খুলে দেওয়া হয়। আরও কয়েকটি জায়গায় স্থায়ী বা অস্থায়ী ব্যবস্থা থাকে। কিন্তু প্রয়োজনের তুলনায় তা নগণ্য। নতুন ব্যবস্থায় বিশেষ করে মহিলারা ভীষণ উপকৃত হবেন।’’

প্রবীণ দর্শনার্থীদের বাড়তি পাওনা পুলিশ সহায়তা কেন্দ্রে চা-জল। এ শহরে হেঁটেই ঠাকুর দেখার চল। কিন্তু হাঁটতে হাঁটতে প্রবীণ মানুষেরা অনেক সময়ই ক্লান্ত হয়ে পড়েন। এই পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখেই এ বার চন্দননগরে পুলিশের প্রতিটি সহায়তা কেন্দ্রে প্রবীণদের বিশ্রামের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা। সেখানে পানীয় জল আর চায়ের ব্যবস্থাও থাকছে। চন্দননগর পুলিশ কমিশনার হুমায়ুন কবীর বলেন, ‘‘আমরা প্রবীণ মানুষের পাশে থাকতে ইতিমধ্যেই ‘স্পর্শ’ নামে একটি অ্যাপ চালু করেছি। এ বার জগদ্ধাত্রী পুজোর দিনগুলিতেও তাঁদের কিছু পরিষেবা দেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে।’’

পুলিশের উদ্যোগের কথা শুনে চন্দননগরের এক প্রবীণ বাসিন্দা বলেন, ‘‘বয়স হয়ে গেলে একটানা হাঁটা কষ্টকর। পুলিশ বিষয়টি মাথায় রেখে গুরুত্ব দিয়ে ভেবেছে। এতে আমাদের মতো মানুষদের অনেক সুবিধা হবে।’’

Chandannagar Jagadharti Puja
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy