Advertisement
০১ মে ২০২৪

হেলমেটের মান যাচাইয়ে নামল পুলিশ

‘কেন দেব? আমাদের মাথায় তো হেলমেট রয়েছে’— দাবিতে রীতিমতো বচসা জুড়ে দিলেন ওই যুবকও। কিন্তু ট্র্যাফিক অফিসারেরা দেখিয়ে দিলেন, তাঁর ও স্ত্রীর মাঝে বসে থাকা খুদেটার মাথা ফাঁকা! শেষে অবশ্য নিজেদের ভুল বুঝে কেস নিলেন ওই দম্পতি।

যাচাই: বাবা-মায়ের মাথায় হেলমেট থাকলেও, ফাঁকা ছিল খুদের মাথা। দেখেই পথ আটকালেন ট্র্যাফিক পুলিশ। বোঝালেন, মাঝখানে খুদেকে বসালেও তার মাথায় হেলমেট জরুরি। বালিখালে। নিজস্ব চিত্র

যাচাই: বাবা-মায়ের মাথায় হেলমেট থাকলেও, ফাঁকা ছিল খুদের মাথা। দেখেই পথ আটকালেন ট্র্যাফিক পুলিশ। বোঝালেন, মাঝখানে খুদেকে বসালেও তার মাথায় হেলমেট জরুরি। বালিখালে। নিজস্ব চিত্র

শান্তনু ঘোষ
শেষ আপডেট: ১৫ নভেম্বর ২০১৭ ০১:৩৭
Share: Save:

ঘটনা-১: পুলিশ ও মোটরবাইক চালকদের জটলা দেখে বাস ও অটোর মাঝখান দিয়েই গলে পালানোর চেষ্টা করছিলেন এক যুবক। কিন্তু ফাঁক গলে বেরোতে গিয়েই ঘটল বিপত্তি। স্ত্রী ও পুত্রকে নিয়ে স্কুটি উল্টে রাস্তায় পড়ার জোগাড়। ছুটে গিয়ে তাঁদের বাঁচিয়েই লাইসেন্স চাইলেন এক ট্র্যাফিক অফিসার।

‘কেন দেব? আমাদের মাথায় তো হেলমেট রয়েছে’— দাবিতে রীতিমতো বচসা জুড়ে দিলেন ওই যুবকও। কিন্তু ট্র্যাফিক অফিসারেরা দেখিয়ে দিলেন, তাঁর ও স্ত্রীর মাঝে বসে থাকা খুদেটার মাথা ফাঁকা! শেষে অবশ্য নিজেদের ভুল বুঝে কেস নিলেন ওই দম্পতি।

ঘটনা-২: দুপুর ১২টা। বেলুড় মঠ বাসস্টপের কাছে এক মোটরবাইক আরোহীকে থামালেন সার্জেন্ট। যদিও তাঁর মাথায় হেলমেট রয়েছে। কী কারণে আটকানো হল? অফিসার জানালেন, হেলমেটের গুণমান দেখা হবে। যথারীতি দেখা গেল, সেটি হাফ হেলমেট। শুধুই আইন বাঁচানোর জন্য পরা। কেস না দিলেও পুলিশ অফিসারেরা ওই যুবকে জানালেন ‘ভাল মানের হেলমেট পরুন। সেটা শুধু পুলিশের হাত থেকে বাঁচার জন্য না হয়ে, প্রাণে বাঁচার জন্যও হয়।’

সোমবার দিনভর বালি ট্র্যাফিকের আইসি কল্যাণ চক্রবর্তীর নেতৃত্বে জিটি রোডের বালি খাল, বেলুড় মঠ, লিলুয়া স্টেশন রোড, দুই নম্বর জাতীয় সড়কের বালি ঘাট এবং বিকেলে হাওড়ামুখী গিরিশ ঘোষ রোডে বজরংবলী, বেলুড় বাজার ও জাতীয় সড়কের বালি হল্ট, রাজচন্দ্রপুরে বিনা হেলমেটের বিরুদ্ধে অভিযান এবং হেলমেটের মান সম্পর্কে চালকদের সতর্ক করলেন ট্র্যাফিক পুলিশকর্মীরা।

রবিবার বিকেলে বালি ঘাট রেল সেতুর নীচে একটি বেসরকারি রুটের বাসের ধাক্কায় মোটরবাইক নিয়ে ছিটকে পড়েন দুই যুবক। রাস্তার ধারের কংক্রিটের রেলিংয়ে মাথা ঠুকে গেলেও ভাল মানের হেলমেট থাকায় প্রাণে বেঁচে তো গিয়েছেনই, কোনও চোটও পাননি তাঁরা। পুলিশ জানায়, যে ভাবে ওই দুর্ঘটনা ঘটেছিল, তাতে রেলিংয়ে মাথা থেঁতলে যাওয়ার কথা। কিন্তু ভাল মানের হেলমেট পরে তার বেল্ট ঠিকমতো আটকে রাখায় বাঁচা গিয়েছে বড় বিপত্তি থেকে।

কিন্তু দুর্ঘটনার পরেই কি এই নড়েচড়ে বসা? পুলিশের দাবি, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী সেফ ড্রাইভ সেভ লাইভ ঘোষণা করার পর থেকে প্রায়ই নজরদারি চালানো হয়। কিন্তু মানুষ এখন আইন বাঁচাতে হেলমেট পরলেও, নিজে বাঁচতে হেলমেট পরেন না।’’ তাঁদের আরও দাবি, কাউকে
বিনা হেলমেটে ধরা হলে বিভিন্ন নেতা কিংবা জনপ্রতিনিধি ফোন করে ছেড়ে দেওয়ার আনুরোধ করেন। কিন্তু খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেখানে আইন মানার কথা বলছেন, সেখানে এ ধরনের অনুরোধ করার আগেও একটু ভাবা প্রয়োজন। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, দুর্গা এবং কালীপুজোর সময়ে বালি, বেলুড় থানা ও বালি ট্র্যাফিক পুলিশ ব্যাপক ভাবে ধরপাকড় চালিয়েছিল। সেই সময়ে কারও কোনও অনুরোধ শোনা হয়নি।

পুলিশ সূত্রের খবর, অধিকাংশ সময়েই দেখা যায়, রাস্তায় পুলিশ দেখেই হাতে ঝোলানো হেলমেট স্রেফ মাথায় গলিয়ে নেন চালকেরা। কিন্তু কোনও কারণে বাইক থেকে পড়ে গেলে, সেই হেলমেটও যে খুলে যাবে, তা তাঁরা ভাবেন না। তবে হেলমেট পরলেই পুলিশের হাত থেকে বাঁচা যাবে, এমনটা ভেবে নিয়ে জিনিসের মানের দিকে অনেকেই নজর দেন না
বলেও অভিযোগ পুলিশের একাংশের।

চাঁদনি চক থেকে রাজা সুবোধ মল্লিক স্কোয়ার, এই সব জায়গায় পরপর রয়েছে হেলমেটের দোকান। দোকানিরা জানাচ্ছেন, ক্রেতাদের কথা ভেবেই কম দামি হেলমেট বিক্রি করা হয়। ২০০ টাকা থেকেই মেলে হেলমেট। কিন্তু ভাল মানের হেলমেট কিনতে গেলে কম করে ৬০০-৭০০ টাকা লাগে। বিক্রেতারা জানাচ্ছেন, হেলমেটের ভিতরে স্পঞ্জের একটি আস্তরণ থাকে। হেলমেটের ফাইবারে আঘাত লাগলেই সেটি ভিতরের স্পঞ্জে বাউন্স করে যায়। তাতেই আরোহীর মাথা গুরুতর আঘাত থেকে বাঁচে। কম দামি হেলমেটের ভিতরে স্পঞ্জের আস্তরণ খুবই পাতলা হয়। ফাইবারের মানও ভাল না হওয়ায়, আঘাত লাগলেই তা ফেটে গিয়ে মাথায় চোট লাগে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Traffic Police Fine Helmet হেলমেট
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE