Advertisement
E-Paper

অবরোধে ভোগান্তি চরমে

আনলক-পর্বে বাস, অটো, টোটো, ট্রেকার বা লঞ্চ চালু হলেও লোকাল ট্রেনের ভাগ্যে শিকে ছেঁড়েনি। কাজে যোগ দেওয়ার তাগিদে বেশ কিছু দিন ধরেই রেলকর্মীদের বিশেষ ট্রেনে যাতায়াত করছিলেন এক শ্রেণির নিত্যযাত্রী।

তাপস ঘোষ ও কেদারনাথ ঘোষ

শেষ আপডেট: ০৩ নভেম্বর ২০২০ ০৩:১৯
অবরুদ্ধ: বৈদ্যবাটী রেলগেটের সামনে অবরোধকারীরা। —নিজস্ব িচত্র

অবরুদ্ধ: বৈদ্যবাটী রেলগেটের সামনে অবরোধকারীরা। —নিজস্ব িচত্র

একদিকে রেল, অন্য দিকে সড়ক। জোড়া অবরোধে সোমবার, সপ্তাহের প্রথম কাজের দিনে জেরবার হলেন পথে বের হওয়া সাধারণ মানুষ। লোকাল ট্রেন চালানোর দাবিতে বৈদ্যবাটী, রিষড়া, শেওড়াফুলি এবং মানকুণ্ডু স্টেশনে অবরোধ হয়। বৈদ্যবাটী এবং রিষড়ায় জিটি রোডেও অবরোধ হয়। বৈদ্যবাটীতে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বিক্ষোভ চলে।

বৈদ্যবাটীতে অবরোধ শুরু হয় সকাল সাড়ে ৭টা নাগাদ। কিছুক্ষণের মধ্যে সড়কও অবরোধ করা হয়। তার জেরে যেমন ট্রেন আটকে পড়ে, তেমনই সড়কপথে গাড়ির লাইন পড়ে যায়। বর্ধমানের বাসিন্দা রুমা বিশ্বাস লিলুয়ায় বেসরকারি সংস্থায় কাজ করেন। তাঁর বক্তব্য, বর্ধমান-কলকাতা সড়কপথে যাতায়াতের উপায় নেই। গাড়ি ভাড়া করে যাওয়া সম্ভব নয়। তাই ঝুঁকি নিয়ে ট্রেনে যাতায়াত করেন। এ দিন তিনি বর্ধমান থেকে ভোর সাড়ে পাঁচটা নাগাদ হাওড়াগামী লোকাল ট্রেনে ওঠেন। বৈদ্যবাটীতে আটকে পড়েন।

ভোগান্তিতে পড়লেও তিনি অবরোধ সমর্থন করেছেন। অবিলম্বে ট্রেন চালুর দাবি তুলেছেন। তিনি বলেন, ‘‘খাওয়া-দাওয়া নেই, কী ভোগান্তিতে পড়লাম! কাজে যেতে পারলাম না। বাড়ি ফেরার উপায়ও নেই।’’ স্টেশনে ট্রেন দাঁড়িয়ে থাকায় দিনভর রেলগেট পড়েই ছিল। তার উপরে আন্দোলনকারীরা সেখান দিয়ে সাইকেল, মোটরবাইকও গলতে দেননি। অনেকেই গন্তব্যে পৌঁছতেই পারেননি। অ্যাম্বুল্যান্স অন্য পথে ঘুরিয়ে দেয় পুলিশ। চন্দননগর কমিশনারেটের এসিপি (২) বিজয়কৃষ্ণ মণ্ডল, শ্রীরামপুর থানার আইসি, শেওড়াফুলি জিআরপি, আরপিএফের ওসি বিশাল বাহিনী নিয়ে ঘটনাস্থলে এলেও তাঁদের কথায় অবরোধকারীরা কানে তোলেননি। বিক্ষোভকারীরা জানিয়ে দেন, ট্রেন চালুর ঘোষণা না হওয়া পর্যন্ত অবরোধ চলবে। প্রচুর মহিলাও অবরোধে শামিল হন। বেলায় জেলা তৃণমূল সভাপতি দিলীপ যাদব, বৈদ্যবাটীর পুর-প্রশাসক অরিন্দম গুঁইন প্রমুখ ঘটনাস্থলে আসেন।

ভদ্রেশ্বর থেকে অফিসযাত্রীদের নিয়ে কলকাতায় যাওয়ার পথে অবরোধে আটকে ছিল একটি বেসরকারি বাস। বাসেচালক বাবু সরকার জানান, যাত্রীরা নেমে গিয়েছেন। বাস নিয়ে তিনি আটকে পড়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘কখন অবরোধ উঠবে ভেবে পাচ্ছি না। সকাল থেকে না খেয়ে বসে আছি।’’বৈদ্যবাটীর ক্ষেত্রে রেল ও চন্দননগর পুলিশ কমিশনারেটের পুলিশ ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরেও পরিস্থিতি সামাল দিতে পারল না কেন, সেই প্রশ্ন ওঠে। চন্দননগরের পুলিশ কমিশনার হুমায়ুন কবীরের দাবি, ‘‘পুলিশ জনতাকে বোঝানোর সব চেষ্টাই করেছিল। কিন্তু, জনতা অনড় ছিল।’’রিষড়াতেও দীর্ঘক্ষণ জিটি রোড অবরোধ হয়। উত্তরপাড়া থেকে ব্যবসার জিনিসপত্র নিয়ে শ্রীরামপুরে যাচ্ছিলেন জনৈক সঞ্জীব মুখোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘সব কিছু খুলে গেল, কিন্তু ট্রেন চালু হল না। জিটি রোড ধরে যাব, অবরোধে তারও উপায় নেই। পুলিশ নিষ্ক্রিয়। যাব কোথায়?’’ মানুষের ভোগান্তির কথা মেনে নেন রিষড়ার পুর-প্রশাসক বিজয়সাগর মিশ্র। বিক্ষোভকারীদের একাংশের ব্যাখ্যা, নিতান্ত বাধ্য হয়ে অবরোধ করা হয়েছে। ট্রেন না চলায় কার্যত প্রতিদিন তাঁদের ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে।

আনলক-পর্বে বাস, অটো, টোটো, ট্রেকার বা লঞ্চ চালু হলেও লোকাল ট্রেনের ভাগ্যে শিকে ছেঁড়েনি। কাজে যোগ দেওয়ার তাগিদে বেশ কিছু দিন ধরেই রেলকর্মীদের বিশেষ ট্রেনে যাতায়াত করছিলেন এক শ্রেণির নিত্যযাত্রী। ক্রমে সেই সংখ্যা বাড়তে থাকে। রেলপুলিশ বাধা দিলে নানা জায়গায় তাদের সঙ্গে যাত্রীদের গোলমাল হয়। বিভিন্ন স্টেশনে অবরোধ হয়। এ দিনও তার পুনরাবৃত্তি হল।

তথ্য সহায়তা: গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়

Train Blockade Indian Railways Blokade Agitation Local Train
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy