Advertisement
E-Paper

পরীক্ষার্থীর প্রস্তুতি ভণ্ডুল ডিজে তান্ডবে

দ্বাদশের তরুণরা যখন ব্যস্ত ঘরের জানলা দরজা বন্ধ করতে। তীব্র আওয়াজে পরীক্ষার শেষ পাঠে মন বসানোই দায়। পথে তখন বছর বারো-চোদ্দোর কিশোররা মেতেছে লাঠি খেলায়। কারও হাতে তলোয়ার, কারও হাতে লাঠি, কেউ বা এনেছে বড় ধারালো কাটারি, খাঁড়া। কাঠের হাতল ধরে একেবারে ‘যুদ্ধু-যুদ্ধু’ খেলা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৭ মার্চ ২০১৮ ০০:৩১
শক্তি-প্রদর্শন:  ছোটদের হাতেই অস্ত্র। সোমবার রামনবমীর এমন মিছিলের সাক্ষী রইল চন্দননগর। ছবি: তাপস ঘোষ

শক্তি-প্রদর্শন:  ছোটদের হাতেই অস্ত্র। সোমবার রামনবমীর এমন মিছিলের সাক্ষী রইল চন্দননগর। ছবি: তাপস ঘোষ

পঞ্জিকা বলছে, ভোর ভোর কেটে গিয়েছে নবমী তিথি। সোমবার সারাদিন দশমী। কিন্তু চন্দননগরে ছবি অন্য। দুপুর থেকে প্রায় রাত পর্যন্ত নদীর পাড় কাঁপাল হনুমান চল্লিশা আর রামনাদ— সঙ্গে তীব্র ডিজে বক্সের দ্রিমিদ্রিমি তাল, ব্যাঞ্জোর ঝঙ্কার। আজ, মঙ্গলবার যে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা— সে কথা বেমালুম ভুলে গেল মিছিল।

দ্বাদশের তরুণরা যখন ব্যস্ত ঘরের জানলা দরজা বন্ধ করতে। তীব্র আওয়াজে পরীক্ষার শেষ পাঠে মন বসানোই দায়। পথে তখন বছর বারো-চোদ্দোর কিশোররা মেতেছে লাঠি খেলায়। কারও হাতে তলোয়ার, কারও হাতে লাঠি, কেউ বা এনেছে বড় ধারালো কাটারি, খাঁড়া। কাঠের হাতল ধরে একেবারে ‘যুদ্ধু-যুদ্ধু’ খেলা।

বাদ পড়েনি নকল কালাশনিকভও। সাজানো জঙ্গির মুখ বাঁধা কালো কাপড়ে, তার সামনা সামনি এক কিশোর, মুখে যোদ্ধার হিংস্রতা।

দুপুরের পর থেকে জিটি রোড ধরে একের পর এক মিছিল শহরের বিভিন্ন রাস্তা পরিক্রমা করতে শুরু করে। চন্দননগর গঞ্জের বাজার জিটি রোডের মোড় থেকে মিছিল শুরু হয়। এরপর তালাডাঙা হয়ে পালপাড়া, বাগবাজার হয়ে স্ট্র্যান্ড হয়ে উর্দিবাজারের কাছে শেষ হয়। বাদ পড়েননি মহিলারাও। নানা বয়সের মহিলাকে দেখা গিয়েছে— মাথায় গেরুয়া ফেট্টি, হাতে অস্ত্র।

এত মানুষ এলেন কোথা থেকে? — অবাক স্থানীয় বাসিন্দারা। অনেকেই বলছেন, চন্দননগর এমন মানুষের ভিড় দেখে শুধু জগদ্ধাত্রী পুজোর সময়। সেই দশমীতে অলিগলি ভরে যায় শোভাযাত্রায়। হুল্লো়ড় চলে সারারাত। আর এই বাসন্তী দশমীর দুপুর ভেসে গেল রামনাদে। সঙ্গে রাম মন্দির প্রতিষ্ঠার নাড়া। দুপুর ১টার পর থেকে রাস্তা কার্যত রাম ‘ভক্ত’দের হাতে চলে যায়। মিছিলের জন্য জিটি রোডে গাড়ি চলাচল বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয় পুলিশ। রাস্তায় আটকে পড়েন সাধারণ মানুষ, স্কুল-কলেজের পড়ুয়ারা। অনেকেই কাজ নিয়ে নদী পেরিয়ে এ পাড়ে এসেছিলেন, তাঁরাও আটকে পড়েন।

উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী অপর্ণা গোস্বামীর কথায়, ‘‘জানলা-দরজা বন্ধ করেও লাভ হয়নি। সারাদিন না পড়তে পারলাম, না ঘুমোতে পারলাম। মিছিল চলে যাওয়ার পরও কান ভোঁ ভোঁ করছে।’’ তন্ময় হাজরা আবার বলে, ‘‘কাল যে কী পরীক্ষা দেব কে জানে! একে তো পরীক্ষার চিন্তা, তার উপর এই অত্যাচার। আওয়াজে শরীর খারাপ লাগছিল একটা সময়।’’

এ দিনের মিছিলে ছিল না কোনও রাজনৈতিক দলের ব্যানার। শুধু গেরুয়া পতাকা। তবে দেখা গিয়েছে সঙ্ঘ পরিবারের বেশ কয়েকজন নেতাকে। বিজেপি নেতারাও ছিলেন এ দিক, ও দিক। কেন করলেন এমন মিছিল, উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য যে উঁচু স্বরে মাইক বাজানো নিষেধ— তাও কি জানা ছিল না?

বিজেপি নেতা স্বপন পালের কথায়, ‘‘এই মিছিল আয়োজনের পুরো দায়িত্বটা ছিল সঙ্ঘ পরিবারের উপর। আমরা চেষ্টা করেছি বিষয়টা আয়ত্তে রাখতে। যেখানেই ডিজে বেজেছে আমরা বন্ধ করে দেওয়ার চেষ্টা করেছি।’’ অস্ত্র নিয়ে অবশ্য কোনও প্রশ্নের উত্তর দিতে চাননি তিনি।

তৃণমূলের জেলা সভাপতি তপন দাশগুপ্ত বলেন, ‘‘আমরা সকাল থেকে টিভিতে দেখেছিল দেড়-দু’ফুট খাঁড়ার মাঝখানে দাঁত ওয়ালা অস্ত্র নিয়ে বেরিয়েছে ছোট ছোট ছেলেরা। সব কিছুর একটা সীমা আছে। পুলিশকে ব্যবস্থা নিতে বলেছি।’’

পুলিশ কী করছিল? চন্দননগর কমিশনারেটের এক কর্তা জানান, ‘‘মিছিলের অনুমতি ছিল। তবে যে যে ক্ষেত্রে আইন ভঙ্গ হয়েছে পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ কড়া হবে। ভিডিও রেকর্ডিং করা হয়েছে। ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

Ram Navami Sound Box High Volume Higher Secondary Examination উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা Students
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy