Advertisement
E-Paper

নারদ-নারদ, তামাশা দেখতে ভিড়

শিবপুরের ঘন বসতিপূর্ণ এলাকায় শতাব্দীপ্রাচীন ওই স্কুল চত্বরের মধ্যেই এক দিকে রয়েছে সেকেন্ডারি বিভাগ। আর তার পাশেই প্রাথমিক বিভাগ।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ৩০ নভেম্বর ২০১৭ ০১:৩০
স্কুলের প্রাইমারি বিভাগের গেটে এই নাম লেখা নিয়েই শিক্ষিকাদের মধ্যে বেধে যায় বচসা। নিজস্ব চিত্র

স্কুলের প্রাইমারি বিভাগের গেটে এই নাম লেখা নিয়েই শিক্ষিকাদের মধ্যে বেধে যায় বচসা। নিজস্ব চিত্র

স্কুলের দেড়শো বছর উদ্‌যাপনের সমাপ্তি অনুষ্ঠান ঘিরে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিভাগের গোলমাল। তার জেরে স্কুলের গেটে স্কুলেরই লেখা নাম মোছা নিয়ে উত্তেজনা ছড়াল হাওড়ার শিবপুর হিন্দু গার্লস হাইস্কুলে। স্কুলের অভ্যন্তরীণ গোলমাল নেমে এল ভরা রাস্তায়। এলাকার বাসিন্দাদের চোখের সামনেই চলল শিক্ষিকাদের মধ্যে টানাহেঁচড়া, চেঁচামেচি, ঝগড়া। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছয় যে, পুলিশ এসে পরিস্থিতি সামাল দেয়।

শিবপুরের ঘন বসতিপূর্ণ এলাকায় শতাব্দীপ্রাচীন ওই স্কুল চত্বরের মধ্যেই এক দিকে রয়েছে সেকেন্ডারি বিভাগ। আর তার পাশেই প্রাথমিক বিভাগ। এত দিন দুই বিভাগই পারস্পরিক সমঝোতার ভিত্তিতে চলেছে। জেলা স্কুল দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, চলতি বছরে স্কুল কর্তৃপক্ষ ঘোষণা করেন, আগামী ১৯ ডিসেম্বর থেকে দু’-তিন দিন ধরে দেড়শো বছর পূর্তির সমাপ্তি অনুষ্ঠান হবে। প্রথম দিকে দুই বিভাগই একসঙ্গে সেই অনুষ্ঠানের তোড়জোড় শুরু করলেও সম্প্রতি প্রাইমারি বিভাগের প্রধান শিক্ষিকা মালা মুখোপাধ্যায় অভিযোগ তোলেন, ওই অনুষ্ঠান উপলক্ষে ছাত্রীদের কাছ থেকে চাঁদা হিসেবে তোলা ১ লক্ষ ১১ হাজার টাকা সেকেন্ডারি বিভাগের হাতে তুলে দেওয়ার পরেই তাঁকে নানা ভাবে অপমান করা হচ্ছে। সেই সঙ্গেই তাঁর অভিযোগ, অনুষ্ঠানসূচি থেকে প্রাথমিক বিভাগের অনুষ্ঠান বাদ দিয়ে দেওয়া হয়েছে এবং তিনি স্কুল পরিচালন সমিতির সদস্য হলেও তাঁকে না জানিয়ে নানা সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে।

ওই স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রাইমারি বিভাগের প্রধান শিক্ষিকার এই অভিযোগের পরেই বাকি শিক্ষিকারা সিদ্ধান্ত নেন, তাঁরা আলাদা করে স্কুলের দেড়শো বছরের সমাপ্তি অনুষ্ঠান করবেন। ঠিক হয়, সেকেন্ডারি বিভাগের আগেই ডিসেম্বরের পাঁচ ও ছয় তারিখ ওই অনুষ্ঠান করবেন তাঁরা। জেলা শিক্ষা দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, গোলমালের সূত্রপাত ঠিক এখান থেকেই। এরই মধ্যে বুধবার প্রাইমারি বিভাগের প্রধান শিক্ষিকার নির্দেশে ওই বিভাগের দুই গেটে লিখে দেওয়া হয় ‘শিবপুর হিন্দু গার্লস প্রাথমিক বিদ্যালয়’।

অভিযোগ, এর পরেই সকাল সাড়ে দশটা নাগাদ সেকেন্ডারি বিভাগের শিক্ষিকারা প্রাইমারি বিভাগের গেটে এসে ওই লেখা দেখে হইচই শুরু করে দেন। তাঁদের দাবি, স্কুলের একটাই নাম, শিবপুর হিন্দু গার্সল হাইস্কুল। প্রাইমারি বিভাগের আলাদা কোনও নাম নেই। প্রাইমারি বিভাগের শিক্ষিকাদের অভিযোগ, সেকেন্ডারি বিভাগের প্রধান শিক্ষিকা শ্রাবণী মজুমদার কিছু লোকজন নিয়ে এসে নিজে দাঁড়িয়ে থেকে গেটে লেখা নাম মুছতে শুরু করেন। বাধা দিতে গেলে প্রাইমারি বিভাগের এক শিক্ষিকাকে টানাহেঁচড়া করা হয় বলেও অভিযোগ। এ নিয়ে শিক্ষিকাদের মধ্যে শুরু হয়ে যায় তীব্র বাদানুবাদ, ঝগড়াঝাঁটি। ওই স্কুলটি বাজারের মধ্যে হওয়ায় ‘দিদিমণিদের ঝগড়া’ দেখতে মুহূর্তের মধ্যে ভিড় জমে যায়।

প্রাথমিক বিভাগের প্রধান শিক্ষিকা মালাদেবীর অভিযোগ, ‘‘রাস্তায় দাঁড়িয়ে সেকেন্ডারির প্রধান শিক্ষিকা ও বাকি শিক্ষিকারা যে ভাষায় কথা বলেছেন, তা কাম্য নয়। প্রধান শিক্ষিকা আমাদের টানাহেঁচড়াও করেছেন। তিনি জোর করে গেট থেকে স্কুলের নাম মুছে দিয়েছেন। এখন বলছেন, আমরা ওঁর ভাড়াটে।’’

এ বিষয়ে সেকেন্ডারি বিভাগের প্রধান শিক্ষিকা শ্রাবণীদেবী বলেন, ‘‘আমার সম্পর্কে যে অভিযোগ ওঁরা তুলছেন, তা ঠিক নয়। এই গোটা স্কুল চত্বরটাই আমাদের। প্রাইমারি বিভাগ আমাদের অধীনে। তাই ওঁরা চাইলেই গেটে নাম লিখতে পারেন না। তা ছাড়া, ওঁরা এত দিন পরে কেন নাম লিখছেন, তা খুঁজে দেখতে হবে।’’

স্কুলের ভিতরের ঘটনা রাস্তায় নেমে আসায় শিক্ষিকাদের একাংশ যে ক্ষুব্ধ, তা বোঝা যায় সেকেন্ডারি বিভাগের এক শিক্ষিকার কথায়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষিকা বলেন, ‘‘দিনের পর দিন ধরে এই ঝগড়া চলছে। আমরা শিক্ষিকারাই যদি নিজেদের সংযত করতে না পারি, তা হলে ছাত্রীদের কী শিক্ষা দেব?’’

Turmoil Teachers
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy